স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগ থেকে বিদেশে প্রশিক্ষণের জন্য ২০ জনকে মনোনীত করে ৫ মার্চ একটি সরকারি আদেশ (জিও) জারি করা হয়। প্রশাসন-১ শাখার উপ-সচিব মোহাম্মদ আবদুল কাদের ওই আদেশে স্বাক্ষর করেন। মালয়েশিয়ায় সাত দিনব্যাপী ‘কোয়ালিটি ম্যানেজমেন্ট অব হেলথ সার্ভিস ডেলিভারি অ্যান্ড হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট’ শীর্ষক এই প্রশিক্ষণের জন্য স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগের অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পৃথীশ দাস, ব্যক্তিগত কর্মকর্তা জসিম উদ্দিন ফকির, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাবরক্ষক জাকির হোসেন, উচ্চমান সহকারী আতিকুর রহমান, টাঙ্গাইল সিভিল সার্জন অফিসের হিসাবরক্ষক আনোয়ার হোসেন, বগুড়া ২৫০ শয্যার মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের স্টেনো টাইপিস্ট শহিদুল ইসলাম, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর শামীম হোসেন, জাহাঙ্গীর আলম, প্রধান সহকারী সৈয়দ জালাল, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা শাহজাহান মৃধা নামে ১০ কর্মচারীকে মনোনীত করা হয়েছে। স্বাস্থ্য খাতে দক্ষ জনশক্তি তৈরি করতে চিকিৎসকদের এই প্রশিক্ষণ গ্রহণের কথা। কিন্তু মনোনীত ২০ জনের মধ্যে চিকিৎসক আছেন মাত্র ৭ জন। অপর তিনজন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা।
একই দিনে বিদেশে প্রশিক্ষণের জন্য আরও ১০টি সরকারি আদেশ জারি করা হয়। কাগজপত্র ঘেঁটে দেখা যায়, বিদেশে প্রশিক্ষণের জন্য ২১৮ জন চিকিৎসক, কর্মকর্তা-কর্মচারীর নামে সরকারি আদেশ জারি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে চিকিৎসক আছেন ৯১ জন এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব, যুগ্ম সচিব, উপসচিব, সিনিয়র সহকারী সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তা আছেন ৩২ জন। অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর, স্টেনো টাইপিস্ট কাম কম্পিউটার অপারেটর, প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও পরিসংখ্যানবিদের সংখ্যা সর্বোচ্চ ৯৫ জন। সরকারি অর্থ ব্যয় করে এসব কর্মচারীকে বিদেশে প্রশিক্ষণের আবশ্যকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এসব কর্মকর্তা-কর্মচারী বিদেশে প্রশিক্ষণ নিয়ে কী করবেন? কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে কেনইবা তাদের প্রশিক্ষণের নামে বিদেশে পাঠানো হচ্ছে?
সংশ্নিষ্টরা বলেছেন, বিদেশে গিয়ে প্রশিক্ষণ নেওয়ার বিষয়টি চিকিৎসকদের জন্য নির্ধারিত। কিন্তু মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট অনৈতিক লেনদেনের মাধ্যমে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সেই সুযোগ করে দিচ্ছে। আবার যেসব চিকিৎসককে প্রশিক্ষণে পাঠানো হয়, তাদের বিষয়ভিত্তিক অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য তা সমীচীন নয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কয়েকজন কর্মকর্তা অভিযোগ করেন, কোয়ালিটি ম্যানেজমেন্ট অব হেলথ সার্ভিস ডেলিভারি অ্যান্ড হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট শীর্ষক প্রশিক্ষণের জন্য গাইনি ও শিশু বিষয়ের চিকিৎসকরা যেতে পারতেন। কিন্তু সিভিল সার্জন, আরএমও, মেডিকেল অফিসারদের পাঠানোর জন্য মনোনীত করা হয়েছে। এজন্য মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের সিন্ডিকেটকেই তারা দায়ী করেন।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের স্বাস্থ্য শিক্ষা ও জনশক্তি উন্নয়ন শাখার লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, লাইন ডিরেক্টর হিসেবে আমার যোগদানের আগেই ওই আদেশ জারি করা হয়েছে। তাই এ বিষয়ে তিনি কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
মালয়েশিয়ায় ‘আপডেট এক্সামিনেশন অ্যাসেসমেন্ট সিস্টেম’ শীর্ষক একটি প্রশিক্ষণের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর আবু সোহেলের নামে জিও হয়েছে। তিনি বলেন, প্রতিবছরই তাদের মতো কর্মচারীরা প্রশিক্ষণের জন্য বিদেশে যান। তবে এবার আদেশ জারি হলেও নির্ধারিত সময়ে অর্থ উত্তোলন করতে না পারায় তারা এখনও যেতে পারেননি। অর্থ ছাড় হলেই দিনক্ষণ নির্ধারণ করা হবে। প্রশিক্ষণের শিরোনাম উল্লেখ করে সেটির বাংলা জানতে চাইলে সোহেল উত্তর দিতে পারেন নি। তিনি অসুস্থ হয়ে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি আছেন জানিয়ে ফোন রেখে দেন।
এ ধরনের সরকারি আদেশের সমালোচনা করে বিএমএর মহাসচিব ডা. ইহতেশামুল হক চৌধুরী বলেন, চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণে অবৈধভাবে অন্যদের পাঠানো অত্যন্ত গর্হিত কাজ। কম্পিউটার অপারেটর, উচ্চমান সহকারী প্রশিক্ষণ নিয়ে এসে কী করবেন? তারা কী চিকিৎসা অথবা শিক্ষায় ভূমিকা পালন করবেন? যদি সেটি না হয়, তাহলে কেন তাদের পাঠানো হয়। এর সঙ্গে জড়িতদের খুঁজে বের করে শাস্তির দাবি করেন তিনি।
বিএমএর সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ডা. রশিদ-ই মাহবুব বলেন, এ ধরনের কর্মচারীরা প্রশিক্ষণ নিয়ে কী করবেন, তা আমার জানা নেই। তবে চিকিৎসকদের বিষয়ভিত্তিক দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণ গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু সেটি তো হচ্ছে না। এক বিষয়ের প্রশিক্ষণ নিতে অন্য বিভাগের চিকিৎসক চলে যাচ্ছেন। এটি হতে পারে না।
বিদেশ যাচ্ছেন যারা : ৫ মার্চ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগ থেকে মোট ১১টি সরকারি আদেশ জারি করা হয়। মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ডে এসব প্রশিক্ষণের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিটি প্রশিক্ষণের জন্য সময়সীমা সাত দিন করে নির্ধারণ করা হয়েছে। মালয়েশিয়ায় ‘ট্রেনিং অন টিচিং টেকনোলজি’ শীর্ষক প্রশিক্ষণের জন্য ১৮ থেকে ২৪ মার্চ অথবা কাছাকাছি সম্ভাব্য সময়ের কথা বলা হয়েছে। ২০ সদস্যের ওই দলের স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগের প্রশাসনিক কর্মকর্তা রোমান হাজি, ব্যক্তিগত কর্মকর্তা মোহাম্মদ আমিনুল হক, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর হাবিবুর রহমান ও স্টেনো টাইপিস্ট কাম কম্পিউটার অপারেটর নাফিজুল আলম, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের স্বাস্থ্য শিক্ষা ও জনশক্তি উন্নয়ন শাখার অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর আলমগীর হোসেন এবং সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির (ইপিআই) সাভার অঞ্চলের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট মাসুদ কামরান পারভেজ রয়েছেন।
একই দিন মালয়েশিয়ায় ‘আপডেট এক্সামিনেশন অ্যাসেসমেন্ট সিস্টেম’ শীর্ষক প্রশিক্ষণের জন্য ২০ জনের নামে জিও জারি করা হয়। এতে রয়েছে আবু সোহেল ছাড়া ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর এমরানুল হক আল আমিন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এমআইএস শাখার পরিসংখ্যানবিদ জিল্লুর রহমান, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগের প্রশাসনিক কর্মকর্তা সাহানা খাতুন ও সালেহা খাতুন, স্টেনো টাইপিস্ট কাম কম্পিউটার অপারেটর এনায়েত উল্লাহ এবং অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর এ কে এম শরিফুল ইনসানের নাম। আদেশে ২০ থেকে ২৬ মার্চ পর্যন্ত সাত দিন অথবা সম্ভাব্য কাছাকাছি সময়ের কথা বলা হয়েছে।
একই শিরোনামে মালয়েশিয়ায় আরেকটি প্রশিক্ষণের জন্য ২০ জনের নামে জিও করা হয়। এতে ভ্রমণের তারিখ হিসেবে ১ থেকে ৭ এপ্রিল পর্যন্ত অথবা সম্ভাব্য কাছাকাছি সময়ের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এই দলে স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আতাউর রহমান, আবদুর রউফ, আনোয়ার হোসেন, মো. মাসুদুল হক, সিনিয়র কম্পিউটার অপারেটর আবদুল আলিম এবং রাজশাহী বিভাগীয় স্বাস্থ্য অফিসের স্টেনোগ্রাফার আবু সায়েমের নাম রয়েছে।
আরেকটি আদেশে ‘কোয়ালিটি ম্যানেজমেন্ট অব হেলথ সার্ভিস ডেলিভারি অ্যান্ড হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট’ শীর্ষক প্রশিক্ষণের জন্য জিও হওয়া ২০ জনের মধ্যে ১৭ জনই অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর, হিসাবরক্ষক, স্টেনো টাইপিস্ট, স্টেনোগ্রাফার পদের কর্মচারী। তাদের প্রশিক্ষণের সময়সীমা হিসেবে ১৮ থেকে ২৪ মার্চ পর্যন্ত অথবা সম্ভাব্য সময়ের কথা বলা হয়েছে। এতে স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা মো. মহসিন আলী, প্রশাসনিক কর্মকর্তা আবদুল মান্নাফ, ব্যক্তিগত কর্মকর্তা মোস্তফা হাসান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রশাসনিক কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির, সিনিয়র মেকানিক এস এম আজাদ, চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের স্টেনোগ্রাফার এনায়েত কবির, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের স্টেনোগ্রাফার এ কে এম আজিজুল হক, সৈয়দ নুরুস সালাম, মাসুম উদ্দিন আহমেদ, স্টেনো টাইপিস্ট উজ্জ্বলা রানী সরকার, হিসাবরক্ষক শরিফুল ইসলাম, ঢাকা বিমানবন্দর স্বাস্থ্য অফিসের স্যানিটারি ইন্সপেক্টর শরিফুল ইসলাম, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আপার ডিভিশন সহকারী আবু হাসান চৌধুরী, হাফিজুরুল ইসলাম, সহকারী পরিসংখ্যানবিদ আলী আকবর, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর শফিকুল ইসলাম এবং আয়েশা খাতুন রয়েছেন।
একই ধরনের প্রশিক্ষণের জন্য মালয়েশিয়ায় ১৮ থেকে ২৪ মার্চ পর্যন্ত অথবা সম্ভাব্য সময়ে প্রশিক্ষণের জন্য আরও ২০ জনের নামে জিও হয়েছে। এখানেও অপ্রয়োজনীয়ভাবে ১৭ জনকে পাঠানো হচ্ছে। তারা হলেন- স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগের অফিস সহকারী সুবাল চন্দ্র সাহা, জামাল উদ্দিন, প্রশাসনিক কর্মকর্তা শাহজালাল মানিক, ব্যক্তিগত কর্মকর্তা মো. মহসিন রেজা, ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের হিসাবরক্ষক সুলতান নাসির উদ্দিন, রাজশাহীর মেডিকেল সাব-ডিপোর্ট মীর শফিকুল ইসলাম, জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোহাম্মদ রকিবুল ইসলাম, হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের হিসাবরক্ষক মো. জাফর উল্লাহ, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের প্রধান সহকারী কায়রুল বাসার, ধামরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর মো. মুনাফ, জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউ ও হাসপাতালের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট মো. খোরশেদ আলম, ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের স্টেনো টাইপিস্ট কাজী নজরুল ইসলাম, মুদগা জেনারেল হাসপাতালে সংযুক্ত ফার্মাসিস্ট মনিরুল ইসলাম, মোহনগঞ্জ উপজেলার হেলথ ইন্সপেক্টর পার্থ সারথী মজুমদার, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর কামাল পারভেজ, মো. আবু হানিফ এবং বগুড়া ২৫০ শয্যার মো. আলী হাসপাতালের অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর ইকবাল হোসেন।
ইন্দোনেশিয়ায় ‘ট্রেনিং অন লিডারশিপ অ্যান্ড গভর্ন্যান্স টু ডেভেলপ হিউম্যান রিসোর্স অব হেলথ’ শীর্ষক প্রশিক্ষণের জন্য ১৮ জনের নামে জিও হয়। এই প্রশিক্ষণের সময়কাল ধরা হয় ২৩ থেকে ২৯ মার্চ। এতে স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগের সচিবের পিএস মোমিন উদ্দিন, প্রশাসনিক কর্মকর্তা তাজুল ইসলাম পালোয়ান, কাজী শারফুজ্জামান, অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি মো. আবুল হাসেম, অডিট অ্যান্ড অ্যাকাউন্ট অফিসার মুকতাদির রেজা মুহিত এবং পারসোনাল অফিসার জাকির হোসেন রয়েছেন।
ইন্দোনেশিয়ায় ‘ট্রেনিং অন লিডারশিপ অ্যান্ড গভর্ন্যান্স টু ডেভেলপ হিউম্যান রিসোর্স’ শীর্ষক প্রশিক্ষণের জন্য ১৮ জনের নামে জিও করা হয়েছে। ২৫ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত অথবা সম্ভাব্য সময়ের মধ্যে এই প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হবে বলে আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে। সেখানে স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগের প্রশাসনিক কর্মকর্তা এবিএম নুরুল আলম, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর মো. আবদুল বারী, কেরানীগঞ্জের একটি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে সংযুক্ত ফার্মাসিস্ট আনিসুর রহমান, নেত্রকোনা সদর উপজেলার মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ফজলুল বারী, মাতুয়াইল আইসিএমএইচর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম, নেত্রকোনার বাহাট্টা উপজেলার এএইচআই আনোয়ার হোসেন খানের নাম রয়েছে।
একইভাবে ইন্দোনেশিয়ায় ২৯ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত প্রশিক্ষণের জন্য ২০ জনের নামে জিও হয়। এতে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অডিট অ্যান্ড অ্যাকাউন্ট অফিসার আলমগীর হোসেন হাওলাদার, সহকারী প্রোগ্রামার লেজিনা মোনা সুমি, নুরুল ইসলাম ও হাসিনা ইসলাম, অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান এবং শ্যামলী ২৫০ শয্যা টিবি হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোস্তফা সেলিম খান রয়েছেন।
থাইল্যান্ডে ‘ট্রেনিং অন অ্যাডভ্যান্সড এক্সপোজার ভিজিট অন রোলস অ্যান্ড রেসপনঅ্যাবিলিটিস অব মেডিকেল প্রোফেশনালস’ শীর্ষক প্রশিক্ষণে ২১ জনের নামে জিও হয়েছে। ২০ থেকে ২৬ মার্চ অথবা সম্ভাব্য সময়ের মধ্যে তারা প্রশিক্ষণে যাবেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। সেখানে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহকারী প্রধান পরিসংখ্যানবিদ জসিম উদ্দিন, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর আবদুল খালেক, কম্পিউটার অপারেটর কাম স্টেনো টাইপিস্ট রীনা রানী সরকার এবং মাকসুদুর রহমানের নাম রয়েছে।
একই দেশে একই ধরনের আরও একটি প্রশিক্ষণে ২১ জনের নামে জিও হয়েছে। আদেশে ১৫ থেকে ২১ এপ্রিল অথবা সম্ভাব্য সময়ের মধ্যে তারা প্রশিক্ষণে যাবেন বলে উল্লেখ করা হয়। এতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মেজবাহ উদ্দিন, সহকারী পরিসংখ্যানবিদ পারভীন আক্তার, স্টেনো টাইপিস্ট মালা রানী সাহা, প্রকিউরমেন্ট অ্যান্ড সাপ্লাই অফিসার মিজানুর রহমান, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ইউডিএ গোলাম ফারুক, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের স্টেনোগ্রাফার আবুল খায়ের, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগের পারসোনাল অফিসার অহিদ খান, প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোকলেসুর রহমান, অফিস সহকারী এনামুল হক এবং মাতুয়াইল আইসিএমএইচের ক্যাশ অফিসার মোহাম্মদ মাসুম খার নাম রয়েছে।
প্রশিক্ষণের জন্য মনোনীত হলেন যেভাবে : স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের সভাপতিত্বে স্বাস্থ্য শিক্ষা ও জনশক্তি উন্নয়ন শাখার পরিচালক ও লাইন ডিরেক্টরের সভায় বিদেশে প্রশিক্ষণ গ্রহণকারীদের তালিকা প্রণয়ন করা হয়। সেই তালিকা অনুমোদনের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। সেখানে সচিবের নেতৃত্বে কমিটি যাচাই-বাছাইয়ের পর জিও জারি করা হয়।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, প্রতি বছর বিদেশে প্রশিক্ষণের নামে কোটি কোটি লোপাটের ঘটনা ঘটছে; কিন্তু ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বিষয়টি এড়িয়ে যান। তবে এবার সবচেয়ে ভয়াবহ ঘটনা ঘটেছে। চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণে কর্মচারীদের সংখ্যাই বেশি। অনৈতিক লেনদেনের মাধ্যমে একটি সিন্ডিকেট এসব কর্মচারীকে বিদেশে প্রশিক্ষণের সুযোগ করে দিচ্ছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ওই সিন্ডিকেটের বিষয়ে অবগত হলেও কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। বরং তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়া হচ্ছে।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগের সচিব জি এম সালেহ উদ্দিন বলেন, এর আগে কী হয়েছিল? এর আগেও তো এরকম ছিল। অন্য এক প্রশ্নে সচিব বলেন, মিটিংয়ে আছি। কথা বলতে পারছি না। কিছুক্ষণ পর ফোন করার জন্য বলেন। কিন্তু ফোন করা হলেও তিনি আর ধরেননি।