নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে দেশে প্রতি ঘণ্টায় দুটি শিশুর মৃত্যু ঘটে। পাঁচ বছরের নিচে শিশু মৃত্যুর এটা একটা অন্যতম বড় কারণ। তবে বাংলাদেশ নিউমোনিয়া ও শিশু মৃত্যুর অন্যান্য মরণঘাতী ব্যাধির বিরুদ্ধে সফলভাবে যুদ্ধ করে চলেছে। গত ২০ বছরে শিশু মৃত্যুর হার ৬৩ শতাংশ কমিয়ে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে বাংলাদেশ।
সেভ দ্য চিলড্রেন তৃতীয়বারের মতো প্রকাশ করেছে বার্ষিক গ্লোবাল চাইল্ডহুড রিপোর্ট-২০১৯। বুধবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ডব্লিউএইচও গ্লোবাল হেলথ অবজারভেটরির এ তথ্য উপস্থাপন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে সেভ দ্য চিলড্রেনের ডেপুটি কান্ট্রি ডিরেক্টর ড. ইশতিয়াক মান্নান, হেলথ নিউট্রিশন অ্যান্ড এইচআইভি ডিরেক্টর ড. শামিম জাহান, নিউমোনিয়া সেন্টেনারি কমিটমেন্ট অ্যাডভাইজর সাব্বির আহমেদসহ সেভ দ্য চিলড্রেনের অন্যান্য কর্মকর্তা ছিলেন।
ড. ইশতিয়াক মান্নান বলেন, ২০ বছর আগের তুলনায় বর্তমানে বাংলাদেশে জন্ম নেওয়া শিশুদের স্বাস্থ্যবান, সুখী, শিক্ষিত এবং সুরক্ষিত বেড়ে ওঠার সুযোগ অনেক বেশি। কিন্তু নিউমোনিয়া মোকাবেলা করা একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে থেকেই যাচ্ছে, বিশেষ করে দূরবর্তী গ্রামগুলোতে এবং ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে থাকা শিশুদের মধ্যে। তবে অস্বাস্থ্য ও অপুষ্টি থেকে শুরু করে শিক্ষার অভাব, শিশু মৃত্যু ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে শিশুর জীবন বিকাশে বাংলাদেশের বিশাল অগ্রগতিকে অবশ্যই মূল্যায়ন করতে হবে।
তিনি বলেন, দেশের সব শিশুর সুস্থ জীবন নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ নিউমোনিয়াসহ অন্যান্য মারাত্মক শৈশব রোগের বিরুদ্ধে সফলভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
সেভ দ্য চিলড্রেনের বার্ষিক গ্লোবাল চাইল্ডহুড রিপোর্ট-২০১৯-এ বলা হয়েছে, ২০০০ সাল থেকে পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি দেশ শিশু মৃত্যু হ্রাসে যথেষ্ট উন্নতি করেছে। এসব দেশের মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ অন্যতম।
রিপোর্টের বিশ্নেষণে দেখা যায়, দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত ও নেপাল গত দুই দশকে শিশু মৃত্যুর সংখ্যা অনেক হ্রাস করতে পেরেছে। চারটি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি অগ্রগতি অর্জন করেছে, যেখানে ভুটানের শিশু মৃত্যুর হার কমেছে ৬০ শতাংশ, নেপালে ৫৯ শতাংশ ও ভারতের ৫৭ শতাংশ।
২০১৮ সালে প্রকাশিত বাংলাদেশ সরকার সমর্থিত সেভ দ্য চিলড্রেন ও ইউনিসেফের ‘ন্যাশনাল সিচুয়েশন অ্যানালাইসিস রিপোর্ট অব নিউমোনিয়া’ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের মধ্যে নিউমোনিয়া এখনও মৃত্যুর প্রধান কারণ। অন্যান্য কারণের মধ্যে বেশিরভাগই এখন নিয়ন্ত্রণে। শুধু নিউমোনিয়া আক্রান্ত শিশু মৃত্যুর হার আশানুরূপ হ্রাস পায়নি। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৬ সালে পাঁচ বছরের নিচে মোট ১৬ শতাংশ শিশুর এবং ১২-৫৯ মাস বয়সী শিশুর মধ্যে মোট ৩০ শতাংশ শিশুর মৃত্যুর জন্য নিউমোনিয়া দায়ী।
‘এন্ড অব চাইল্ডহুড রিপোর্ট’-এর আটটি ‘চাইল্ডহুড এন্ডার’ পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, এদের মধ্যে একমাত্র সংঘাত-সংঘর্ষের কারণে শিশুদের স্থানচ্যুতি বা জীবন বিপন্ন হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। ২০০০ সালের তুলনায় ৩০ দশমিক ৫ ভাগ বেশি মানুষকে জোরপূর্বক স্থানচ্যুত করা হয়েছে, যার বৃদ্ধির হার ৮০ শতাংশ।