মৌরি আক্তার। রাজধানীর একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। অফিস শেষ করে বাসায় এসে পরিবারকে সময় দেওয়ার পর শপিংমলে গিয়ে কেনাকাটা করার সময় পান না। তাই তার ভরসা অনলাইনের বিভিন্ন ই-কমার্স সাইট ও ফেসবুকে কেনাকাটা করার বিভিন্ন পেজ।
মৌরি বলেন, ২-৩ বছর ধরে ঈদের শপিং অনলাইনেই করছি। রাস্তায় জ্যাম ও শপিংমলের ভিড়ের যন্ত্রণা পোহাতে হয় না এবং সময়ও বাঁচে।
শুধু মৌরি নয় বর্তমানের প্রজন্মের অনেকের ভরসাস্থল এখন অনলাইন শপিং। ঘরে বসে এক ক্লিকেই হরেক রকমের পণ্য বাছাই করে প্রিয় পণ্যটি কেনা যায় বলে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে এ মাধ্যমটি।
আহসানুল কবির এবার ঈদের জন্য পছন্দের পাঞ্জাবি কিনেছেন ফেসবুকের একটি কেনাবেচার পেজ থেকে। তিনি জানালেন, শপিংমলে নানা যন্ত্রণা পেরিয়ে যে দামে পাঞ্জাবি কিনতে হয় তার চেয়ে এখানে দাম কম। তাই এবার অনলাইনেই কিনেছি পাঞ্জাবি।
অনলাইনে পোশাকের দাম কমের বিষয়টি আহসানুল ব্যাখা করে বলেন, শপিংমলের বিক্রেতারা পাঞ্জাবির দামের সাথে দোকানের ভাড়াও যোগ করে রাখেন। তাই তাদের ওখানে দাম বেশি। দোকানে থাকা একই পাঞ্জাবি অনলাইনে একটু কম দামে কেনা যায়। মানের দিকে দিয়ে কোনো পার্থক্য নেই।
অনলাইনে কেনাকাটায় তরুণ-তরুণীদের চাহিদা দেখে ঈদ উপলক্ষে ছাড়ও দিয়েছে বিভিন্ন ই-কমার্স সাইট। দারাজ, প্রিয় শপ, অথবা, আজকের ডিল ও বাগডুম বিশেষ ছাড়ে বিক্রি করছে তাদের পণ্য। এসব অনলাইন মার্কেটপ্লেসে শাড়ি ও পাঞ্জাবিসহ ছেলেমেয়েদের বিভিন্ন পোশাক, গৃহসজ্জা, গৃহস্থালি সামগ্রী, গয়না, কসমেটিকস ও কম্পিউটার অ্যাকসেসরিজসহ নানা ধরনের পণ্য মিলছে।
ঈদুল ফিতর উপলক্ষে দারাজে চলছে মাসব্যাপী ঈদ শপিং ফেস্ট। ফেস্টের বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে রয়েছে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত মূল্যছাড়সহ দৈনিক ফ্ল্যাশ সেল, ফ্যাশন ডে ও ফ্রি ডেলিভারি ফ্রাইডে। এছাড়া আই লাভ ভাউচার, শেক শেক ভাউচার, সুপার ব্যাংক ডে, ডিলস অফ দ্যা ডে সহ আরও অনেক আকর্ষণীয় ঈদ মোবাইল অফার রয়েছে বিশেষ এই ক্যাম্পেইনটিতে।
দারাজের এই ক্যাম্পেইনে নিত্য প্রয়োজনীয় হোম অ্যাপ্লায়েন্স এসি, ফ্রিজ, এয়ার কুলার ও মাইক্রোওয়েভ পাওয়া যাচ্ছে আকর্ষণীয় মূল্যে। ইলেক্ট্রনিক্স পণ্য সামগ্রীর মধ্যে রয়েছে মোবাইল ফোন, টিভি ও ডিএসএলআর ক্যামেরা ইত্যাদি।
দারাজ বাংলাদেশ লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর সৈয়দ মোস্তাহিদল হক বলেন, এ বছর আমরা টানা তৃতীয়বারের মত ঈদ শপিং ফেস্ট উদযাপন করছি। ঈদ ক্যাম্পেইনের প্রথম সাত দিনেই গতবারের তুলনায় প্রায় পঞ্চাশগুন বেশি বিক্রি হয়েছে এবং দশম দিনেই বিক্রির পরিমাণ দুইশ গুণে পৌঁছায়। ক্যাম্পেইন চলাকালীন সাধারণ দিনের তুলনায় প্রায় দশগুন বেশি পণ্য বিক্রি হয়েছে।
ই-কমার্স প্লাটফর্ম প্রিয়শপে চলছে মাসব্যাপী ঈদ শপিং ফেস্টিভাল। বিভিন্ন পণ্যে ছাড়, ক্যাশব্যাক, অফার, কম্বো, ভ্যালু প্যাক থাকার পাশাপাশি ৫০০ টাকার অধিক পণ্য কিনলে সারা দেশে ফ্রি ডেলিভারি সুবিধা মিলছে।
প্রিয়শপ ডটকমের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আশিকুল আলম খান বলেন, ঈদ মানে আনন্দ। এই আনন্দকে গ্রাহকরা যেন আরো উপভোগ করতে পারে সেই লক্ষ্যে প্রিয়শপ ঈদ শপিং ফেস্টিভালের আয়োজন করেছে। পৃথিবীর যেকোনো প্রান্ত থেকে পছন্দের পণ্যটি ঘরে বসেই অর্ডার করতে পারবেন গ্রাহকরা।
এছাড়া বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের বিশ্বকাপের অফিসিয়াল জার্সি মিলছে প্রিয়শপ ডটকমে। ঈদ উপলক্ষে প্রিয়শপে থ্রি-পিস, গজ কাপড়, শাড়ি, বাহারি পাঞ্জাবি, শার্ট, প্যান্ট, টি-শার্ট, পোলো টি-শার্ট, বাচ্চাদের ড্রেস, ইম্পোর্টেড জুয়েলারি, রোদ চশমা, ঘড়ি, চামড়ার বেল্ট, ওয়ালেট, ঘর সাজানোর সামগ্রী, ইলেকট্রনিকস, ও প্রসাধনীসহ বাহারি সব পণ্য পাওয়া যাচ্ছে। প্রায় প্রতিটি পণ্যে রয়েছে ঈদের বিশেষ মূল্যছাড়।
শাড়ি, থ্রি-পিস সহ মেয়েদের বিভিন্ন প্রয়োজনীয় জিনিস ফেসবুক পেজের মাধ্যমে বিক্রি করে রঙধনু ফ্যাশন। প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার নাসরীন সুলতানা বলেন, প্রথমে পরিচিতজনরা আমাদের পেজ থেকে কিনতো। এখন অনেক অপরিচিত ক্রেতাও আসেন। ঈদ উপলক্ষে ভালো সাড়া পাচ্ছি। কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীরা আমাদের এখান থেকে বেশি পোশাক কেনেন।
অথবা ডট কমে সব ধরনের পণ্যে চলছে সর্বোচ্চ ৭০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড়। এছাড়া ১০০ জন সেরা ক্রেতার জন্য রয়েছে পাঁচ হাজার টাকার বিশেষ উপহার। অথবা’র ডেপুটি ব্রান্ড ম্যানেজার নির্ঝর কুমার কুন্ড বলেন, অন্যান্য সময়ের তুলনায় ঈদ উপলক্ষে বিক্রি ভালো হচ্ছে। গত ঈদের চেয়েও এবার বিক্রি ভালো বলে জানান তিনি। রমজান উপলক্ষে ১ টাকায় এক কেজি চাল ও এক টাকায় এক লিটার দুধের অফার দিয়েছিল প্রতিষ্ঠানটি।
অনলাইনে একটা পণ্য অর্ডার করলে আরেকটা আসা, পণ্য দেরিতে আসা; ক্রেতাদের এসব অভিযোগের বিষয়ে ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াহেদ তমালের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, সব ই-কমার্স সাইট তাদের সাধ্যমতো ভালো সেবা দেওয়ার চেষ্টা করে। হয়তো ২-১টি ক্ষেত্রে ভুল বোঝাবুঝি হতে পারে। কেউ যদি হয়রানির শিকার হয় তাহলে আমাদের ই-ক্যাবের ওয়েবসাইটে অভিযোগ জানানোর নির্দিষ্ট ফরম আছে। আমাদের কাছে অভিযোগ করলে আমরা দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে থাকি।
ই-ক্যাব সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন, অনলাইনের ক্রেতা ও বিক্রেতার সুবিধার্থে ইতোমধ্যে ডিজিটাল ই-কমার্স নীতিমালা গ্যাজেট আকারে পাস হয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় একট মনিটরিং সেল গঠন করেছে। ক্রেতা-বিক্রেতার যেকোন অভিযোগ সমাধানে তারা কাজ করে থাকে।
ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের তথ্যমতে দেশে বর্তমানে নিবন্ধিত ই-কমার্স সাইটের সংখ্যা সাড়ে ৯ হাজার। এছাড়া ফেসবুকে বিভিন্ন পেজের মাধ্যমে পণ্য বিক্রি করে ৫০ হাজারের বেশি এফ-কমার্স। সেইলর, ইয়োলো, আড়ং ও লা-রীভসহ দেশের নামিদামি অনেক ব্র্যান্ডও অনলাইনে পণ্য বিক্রি করছে।