বোলিং ধারহীন। ফিল্ডিং হতশ্রী। তাতে ব্যাটসম্যানদের লক্ষ্যটা এমন চূড়ায় উঠল যেখানে কখনোই পা রাখেনি বাংলাদেশ। তবু চেষ্টার কমতি রাখলেন না সাকিব আল হাসান, কিন্তু এমন দুর্গম পথ কী আর একা পাড়ি দেওয়া যায়! পারল না বাকিরা, তাই পারল না বাংলাদেশ। রেকর্ড রান তুলে ইংল্যান্ড জিতল বড় ব্যবধানে।
বিশ্বকাপে নিজেদের তৃতীয় ম্যাচে ইংল্যান্ডের কাছে ১০৬ রানে হেরেছে বাংলাদেশ। প্রথম ম্যাচে জয়ের পর বাংলাদেশের এটি টানা দ্বিতীয় হার। ইংল্যান্ড জিতল তিন ম্যাচে দুটি।
কার্ডিফে শনিবার জেসন রয়ের ১৫৩ রানের ইনিংস ইংল্যান্ডকে এনে দেয় ৩৮৬ রানের পুঁজি। ২০১১ বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে করা ৩৩৮ ছাড়িয়ে এটিই বিশ্বকাপে ইংলিশদের সর্বোচ্চ স্কোর।
রান তাড়ায় বাংলাদেশ সেভাবে চাপে ফেলতেই পারেনি ইংল্যান্ডকে। ১১৯ বলে সাকিবের ১২১ রানের ইনিংসের পরও গুটিয়ে গেছে ২৮০ রানে।
দুই ম্যাচ হারার পর এবার টস জিতেছিলেন মাশরাফি মুর্তজা। তবে আগে বোলিংয়ের কাঙ্ক্ষিত সুযোগটি কাজে লাগাতে পারেনি দল।
ইংল্যান্ডের শুরুটা ছিল সাবধানী। রয় স্পিনে একটু নড়বড়ে মনে করে আগের দুই ম্যাচের ম্যাচের প্রতিপক্ষ শুরু করেছিল স্পিন দিয়ে। বাংলাদেশও হেঁটেছে সেই পথে। প্রথম ওভার করেছেন সাকিব আল হাসান।
রয়কে খানিকটা অস্বস্তিতেও ফেলেছেন সাকিব। আরেক পাশে মাশরাফিও শুরু করেছিলেন ভালো। দুজনের বোলিংয়ে কয়েকবার বল লেগেছে ব্যাটসম্যানদের ব্যাটের কানায়, বার দুয়েক হাওয়ায় ভেসে বল ফিল্ডারের কাছে যায়নি অল্পের জন্য।
১৯ ওভারে ১২৮ রান তুলে ফেলা জুটি ভাঙেন দ্বিতীয় স্পেলে ফেরা মাশরাফি। তার বাড়তি বাউন্সে আউট হন ৫১ বলে ৫০ রান করা বেয়ারস্টো, শর্ট কাভারে দারুণ ক্যাচ নেন মেহেদী হাসান মিরাজ।
ততক্ষণে রয়ের ব্যাট অপ্রতিরোধ্য হতে শুরু করেছে। জো রুটকে নিয়ে জুটিতে দলকে এগিয়ে নেন অনায়াসেই। ৭৭ রানের দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে রুটের অবদান ছিল ২১।
৯২ বলে রয় স্পর্শ করেন তিন অঙ্ক, ৭৯ ওয়ানডেতে তার নবম সেঞ্চুরি। মাইলফলকের পর বিধ্বংসী হয়ে ওঠেন আরও। সাকিবকে টানা তিন বলে মারেন দুই চার এক ছক্কা; মিরাজকে টানা তিন ছক্কায় দেড়শ পেরিয়ে যান ১২০ বলে।
৪৪ বলে ৬৪ করে বাটলার সাইফ উদ্দিনের বলে সীমানায় ধরা পড়েছেন সৌম্য সরকারের হাতে। মিরাজের বলে সৌম্যই নিয়েছেন ৩৩ বলে ৩৫ করা মর্গ্যানের ক্যাচ।
এই দুজনের বিদায়ে একটু ভাটার টান এসেছিল রানের গতিতে। শেষ দিনে আবার তাণ্ডব চালান ক্রিস ওকস ও লিয়াম প্লাঙ্কেট। মাত্র ১৭ বলে ৪৫ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়েন দুজন। ৯ বলে ২৭ রানে অপরাজিত থাকেন প্লাঙ্কেট, ৮ বলে ১৮ ওকস।
সম্ভাব্য লক্ষ্যটা সাড়ে তিনশর আশেপাশে থেকে আরও বেড়ে যায় শেষের ওই ঝড়েই। ম্যাচ জমিয়ে তুলতে প্রয়োজন ছিল সৌম্যর সরকারের ব্যাটে উড়ন্ত শুরু। কিন্তু জফরা আর্চারের ৯০ মাইল গতির গোলায় সৌম্য শেষ ২ রানেই।
তামিম ইকবাল ও সাকিব চেষ্টা করেছেন দলকে থিতু করে এগোতে। কিন্তু ২৯ বলে ১৯ করে তামিম ফিরেছেন আগ্রাসী শট খেলতে গিয়েই। পরের জুটিতে একই চেষ্টা করে গেছেন সাকিব ও মুশফিকুর রহিম।
বাংলাদেশের সফলতম জুটি এই ম্যাচেও যোগ করেন ১০৬ রান। ওয়ানডেতে দুজনের যেটি ষষ্ঠ শতরানের জুটি, বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি সেঞ্চুরি জুটির রেকর্ড।
সেঞ্চুরি পর ক্রিস ওকসকে চার বলের মধ্যে তিনটি বাউন্ডারি মেরেছেন সাকিব। দুর্দান্ত ইয়র্কারে তার লড়াই থামিয়েছেন বেন স্টোকস।
আগের ম্যাচের মতো এ দিনও বিস্ময়কর রকম নিষ্প্রভ ছিলেন মাহমুদউল্লাহ। ১৬ বলে ২৬ রানের ইনিংসে মোসাদ্দেক হোসেন চেষ্টা করেছেন কিছুটা। লোয়ার অর্ডার থেকে আসেনি তেমন কোনো অবদান। তাই ৫০ ওভারের আগেই শেষ বাংলাদেশ।
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বড় হার হয়তো খুব অপ্রত্যাশিত নয়। তবে সাকিবের সঙ্গে এই ম্যাচেও তেমন কোনো পারফর্মার পেল না বাংলাদেশ, সামনে তাকিয়ে মূল দুর্ভাবনা হয়তো সেখানেই।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ইংল্যান্ড: ৫০ ওভারে ৩৮৬/৬ (রয় ১৫৩, বেয়ারস্টো ৫১, রুট ২১, বাটলার ৬৪, মর্গ্যান ৩৫, স্টোকস ৬, ওকস ১৮*, প্লানকেট ২৭*; সাকিব ১০-০-৭১-০, মাশরাফি ১০-০-৬৮-১, সাইফ ৯-০-৭৮-২, মুস্তাফিজ ৯-০-৭৫-১, মিরাজ ১০-০-৬৭-২, মোসাদ্দেক ২-০-২৪-০)।
বাংলাদেশ: ৪৮.৫ ওভারে ২৮০ (তামিম ১৯, সৌম্য ২, সাকিব ১২১, মুশফিক ৪৪, মিঠুন ০, মাহমুদউল্লাহ ২৮, মোসাদ্দেক ২৬, সাইফ ৫, মিরাজ ১২, মাশরাফি ৪*, মুস্তাফিজ ০*; ওকস ৮-০-৬৭-০, আর্চার ৮.৫-২-২৯-৩, প্লানকেট ৮-০-৩৬-১, উড ৮-০-৬২-২, রশিদ ১০-০-৬৪-১, স্টোকস ৬-১-২৩-৩)।
ফল: ইংল্যান্ড ১০৬ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: জেসন রয়