সাইবার ট্রাইব্যুনাল পরোয়ানা জারির ২০ দিন পর ফেনীর সোনাগাজী থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনকে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের উপ কমিশনার মারুফ হোসেন সর্দার রোববার বলেন, “আজ বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে হাই কোর্ট এলাকার আশপাশ থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে শাহবাগ থানায় নেওয়া হয়েছে।”
পরে নিজের কার্যালয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “সোনাগাজী থানা পুলিশকে খবর দেওয়া হয়েছে, তাদের কাছে তাকে হস্তান্তর করা হবে।”
ফেনীতে হত্যাকাণ্ডের শিকার মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির জবানবন্দির ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়ানোয় অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের এক মামলার আসামি সোনাগাজী থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন।
গত মার্চ মাসে নুসরাত তার মাদ্রাসার অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ করার পর মোয়াজ্জেম তাকে থানায় ডেকে নিয়ে জবানবন্দি নিয়েছিলেন।
তার কয়েক দিনের মাথায় নুসরাতের গায়ে অগ্নিসংযোগ করা হলে তা নিয়ে সারাদেশে আলোচনা শুরুর হয়। তখনই ওই জবানবন্দির ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
অগ্নিদগ্ধ নুসরাতের মৃত্যুর পর গত ১৫ এপ্রিল ওই ভিডিও ছড়ানোর জন্য ওসি মোয়াজ্জেমকে আসামি করে ঢাকায় বাংলাদেশ সাইবার ট্রাইব্যুনালে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন আইনজীবী সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন।
ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মাদ আস সামছ জগলুল হোসেন ওই অভিযোগ তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই)।
এর ধারাবাহিকতায় পিবিআই যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়, সেখানে ওসি মোয়াজ্জেমের নিজের মোবাইল ফোনে জবানবন্দি রেকর্ড করার এবং তা ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগের প্রমাণ পাওয়ার কথা বলা হয়।
পিবিআইয়ের দেওয়া তদন্ত প্রতিবেদন আমলে নিয়ে বাংলাদেশ সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মাদ আস সামছ জগলুল হোসেন গত ২৭ মে মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আদেশ দেন।
হাসপাতালে নুসরাতের মৃত্যুর পর ওসি মোয়াজ্জেমকে প্রথমে সোনাগাজী থানা থেকে প্রত্যাহার করে রংপুর রেঞ্জে পাঠান হয়। পরে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয় পুলিশ বাহিনী থেকে।
কিন্তু আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা দিলে তা তামিল করা নিয়ে ফেনী ও রংপুর পুলিশের মধ্যে বেশ কয়েক দিন ঠেলাঠেলি চলে। এই পরিস্থিতিতে সংবাদমাধ্যমে পরিদর্শক মোয়াজ্জেমের লাপাত্তা হয়ে যাওয়ার খবর আসে।
ফলে পুলিশ বাহিনী তাদের কর্মকর্তা মোয়াজ্জেমকে গ্রেপ্তারে আদৌ আন্তরিক কি না- সেই প্রশ্ন তোলে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ।
এই প্রেক্ষাপটে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গত ১০ জুন সাংবাদিকদের বলেন, মোয়াজ্জেম হোসেনকে খুঁজে বের করতে ‘চেষ্টার কোনো ক্রটি হচ্ছে না’।
“খুব শিগগিরই হয়ত শুনবেন ধরা পড়েছে এবং তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।”
আর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল ১২ জুন এক অনুষ্ঠানে বলেন, মোয়াজ্জেম হোসেন দেশেই আছেন, তার বাইরে যাওয়ার সব পথ ‘বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে’।
ঈদের আগে মোয়াজ্জেম হোসেনের একটি আগাম জামিনের আবেদন হাই কোর্টে জমা পড়লেও সেই শুনানি তখন হয়নি। ফলে আদালতেও তাকে দেখা যায়নি।
সুপ্রিম কোর্টের অবকাশ শেষে রোববার আদালত খুললে হাই কোর্টের নিয়মিত বেঞ্চে নতুন করে আবেদন করেন এই পুলিশ পরিদর্শক। সেখান থেকে ফেরার সময়ই পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে।
মোয়াজ্জেমের আইনজীবী সালমা সুলতানা জানান, বিচারপতি মো. মঈনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাই কোর্ট বেঞ্চে আগাম জামিনের ওই আবেদন করা হয়েছিল।
“উনার (মোয়াজ্জেম) নির্দেশনাক্রমে আগাম জামিনের আবেদন করে তা বেঞ্চে উপস্থাপন করেছিলাম। আদালত বলেছিল আগামীকাল কার্যতালিকায় থাকবে। এখন তো আপনারা জানেন যে উনি গ্রেপ্তার হয়েছেন। তাই আবেদনটি কার্যতালিকায় থাকলেও শুনানির সুযোগ নেই।”
আগাম জামিন নিতে পরিদর্শক মোয়াজ্জেম হাই কোর্টে এসেছিলেন কি না- এই প্রশ্নে সালমা বলেন, “হয়তো এসেছিলেন। না হলে হাই কোর্টের আশপাশ থেকে উনাকে গ্রেপ্তার করা হল কীভাবে।”
হাই কোর্টের ওই বেঞ্চের সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল গাজী মো. মামুনুর রশিদ বলেন, “ওসি মোয়াজ্জেমের আগাম জামিনের আবেদনের বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয় থেকে আগেই সকল আইন কর্মকর্তাকে বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে বলা হয়েছিল।”