প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প একেবারে শেষ মুহূর্তে বিমান হামলার সিদ্ধান্ত থেকে সরে এলেও যুক্তরাষ্ট্র ইরানের অস্ত্র ব্যবস্থাপনায় সাইবার হামলা চালিয়েছে বলে মার্কিন গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে।
বৃহস্পতিবারের ওই সাইবার হামলা তেহরানের কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপককে অকার্যকর করে দিয়েছে বলে ওয়াশিংটন পোস্টের বরাতে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
‘আন্তর্জাতিক আকাশসীমায়’ থাকা অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের একটি ড্রোনকে গুলি করে ভূপাতিত ও পারস্য উপসাগরে বিভিন্ন দেশের তেলের ট্যাঙ্কারে ‘ইরানের হামলার’ প্রতিক্রিয়ায় সাইবার হামলাটি চালানো হয়েছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে নিউ ইয়র্ক টাইমস।
বৃহস্পতিবার গুলি করে ভূপাতিত করা মার্কিন গোয়েন্দা ড্রোনটি ইরানের আকাশসীমা লংঘন করেছিল বলে অভিযোগ তেহরানের। তারা পারস্য উপসাগরে বিভিন্ন দেশের তেলের ট্যাঙ্কারে হামলা চালানোর মার্কিন অভিযোগও অস্বীকার করে আসছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সাইবার হামলায় ইরানের অস্ত্র ব্যবস্থাপনার সত্যিই কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে কি না, তা যাচাই করা যায়নি বলে জানিয়েছে রয়টার্স।
ওমান উপসাগরে দুটি তেলের ট্যাঙ্কারে হামলার ঘটনার পাল্টায় গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই ইরানে সাইবার হামলা চালানোর পরিকল্পনা চলছিল বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের বেশকিছু গণমাধ্যম।
ইরানের ইসলামিক রেভোলুশনারি গার্ড কোরের (আইআরজিসি) ব্যবহৃত অস্ত্রশস্ত্রই এ সাইবার হামলার লক্ষ্য ছিল।
পারস্য উপসাগরে তেলের ট্যাঙ্কারে হামলার জন্য যুক্তরাষ্ট্র এই আইআরজিসিকেই দায়ী করে আসছে। ইরানের এ বিপ্লবী রক্ষীবাহিনীই বৃহস্পতিবার মার্কিন ড্রোন গুলি করে ভূপাতিত করেছিল।
ওয়াশিংটন পোস্ট এবং বার্তা সংস্থা এপি মার্কিন সাইবার হামলায় ইরানের অস্ত্র ব্যবস্থাপনা অকার্যকর হয়ে গেছে বলে জানিয়েছে। অন্যদিকে নিউ ইয়র্ক টাইমস বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের হামলার উদ্দেশ্য ছিল ইরানের অস্ত্র ব্যবস্থাপনাকে কিছু সময়ের জন্য বন্ধ করে রাখা।
ইরান যুক্তরাষ্ট্রে সাইবার হামলা চালাতে তৎপরতা বাড়িয়েছে বলে শনিবার মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ সতর্ক করেছে।
ইরান মার্কিন নৌজাহাজ ব্যবস্থাপনা হ্যাক করারও চেষ্টা চালাচ্ছে বলে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানিয়েছে ওয়াশিংটন পোস্ট।
বৃহস্পতিবারের সাইবার হামলা নিয়ে ট্রাম্প এখন পর্যন্ত কোনো মন্তব্য করেননি বলে জানিয়েছে বিবিসি।
গুলি করে ড্রোন ভূপাতিত করার প্রতিক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞাও দিয়েছে। নতুন এ নিষেধাজ্ঞাকে ‘বড়সড়’ বলে অভিহিত করেছেন ট্রাম্প।
ইরানকে পারমাণবিক শক্তিধর দেশে পরিণত হওয়া থেকে রুখতে এ নিষেধাজ্ঞা দরকার ছিল বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। তেহরান তার গতিপথ না বদলালে অর্থনৈতিক চাপ অব্যাহত রাখা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
২০১৫ সালে ছয় বিশ্বশক্তির সঙ্গে ইরানের স্বাক্ষরিত পরমাণু চুক্তি থেকে গত বছর ওয়াশিংটন নিজেদের সরিয়ে নিলে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে উত্তেজনার পারদ চড়তে শুরু করে।
পরে ইরানের ওপর পুরনো সব নিষেধাজ্ঞাও পুনর্বহাল করে যুক্তরাষ্ট্র।
গত সপ্তাহে তেহরান জানিয়েছে তারা চুক্তিতে পরমাণু কর্মসূচির যে সীমারেখা বেঁধে দেওয়া হয়েছিল তা অতিক্রম করতে যাচ্ছে।
ট্র্রাম্প বলেছেন, তিনি ইরানের সঙ্গে যুদ্ধ চান না; তবে যুদ্ধ যদি বেধেই যায়, তাহলে ইরানকে ‘ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞের’ মুখোমুখি হতে হবে।