প্রায় বছর ধরে অভিযান চালিয়েও মাদক নির্মূল করতে না পারার পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল এই সমস্যার জন্য বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থানকে দায়ী করেছেন।
তিনি সোমবার সংসদে এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ভৌগোলিক কারণেই বাংলাদেশকে মাদক নিয়ে সমস্যা পোহাতে হচ্ছে।
“বাংলাদেশ মাদক উৎপাদনকারী দেশ না হয়েও ভৌগোলিক কারণে মাদক সমস্যায় পড়েছে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত ও মিয়ানমার থেকে আমাদের দেশে অবৈধ মাদক প্রবেশ করে।”
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, বর্তমান সময়ের আলোচিত মাদক ইয়াবা আসছে মিয়ানমার থেকে। ভারত থেকে পাচার হয়ে আসছে গাঁজা, ফেনসিডিল, হেরোইন ও ইনজেকশনের মাধ্যমে নেওয়া মাদক।
বাংলাদেশের তিন দিকে থাকা ভারত থেকে ফেনসিডিলের মতো মাদক দীর্ঘদিন ধরেই আসছে। ইয়াবা আসে মিয়ানমার থেকে। কেবল এই দুটি দেশের সঙ্গেই বাংলাদেশ সীমান্ত রয়েছে।
ফেনসিডিল পাচার বন্ধে ভারতের সহযোগিতা পাওয়ার কথা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আগে জানিয়েছিলেন। তবে ইয়াবা বন্ধে মিয়ানমার সহযোগিতা করছে না বলেও তিনি জানিয়ে আসছেন।
মাদক নির্মূলে গত বছরের এপ্রিল থেকে অভিযানে নামে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় যুক্ত সবগুলো বাহিনী। এতে এক বছরে কথিত বন্দুকযুদ্ধে কয়েকশ মানুষ প্রাণ হারালেও মাদক পাচার বন্ধ হয়নি। প্রায় প্রতিদিনই ধরা পড়ছে নানা মাদকের চালান।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সংসদে জানান, ২০১৮ সালে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা এক লাখ ৬১ হাজার ৩২৩ জন মাদক কারবারির বিরুদ্ধে এক লাখ ১৯ হাজার ৮৭৮টি মামলা করেছে। আর চলতি বছরের প্রথম ৫ মাসে ছয় হাজার ৬৭১ জনের বিরুদ্ধে ছয় হাজার ১৫৬টি মামলা হয়েছে।
আরেক প্রশ্নের জবাবে আসাদুজ্জামান কামাল বলেন, “জঙ্গি হামলা প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপশি জামিনে মুক্তিপ্রাপ্ত, সাজাপ্রাপ্ত ও আটক জঙ্গিদের নিবিড় নজরদারিতে রাখতে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।”
বহুতল ভবনে আগুন নেভানোর কাজে ফায়ার সার্ভিসের জন্য জাপানের কারিগরি সহায়তায় বিশেষ হেলিকপ্টার সংগ্রহের জন্য প্রকল্প নেওয়া হয়েছে বলে জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। এছাড়া রুশ কোম্পানি থেকে ফায়ার ফাইটিং হেলিকপ্টার কেনার বিষয়টিও যাচাই করা হচ্ছে বলে তিনি জানান।
আরেক প্রশ্নের উত্তরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, পুলিশের মঞ্জুরিকৃত মোট জনবল ২ লাখ ১২ হাজার ৭ জন। এর মধ্যে পুলিশ দুই লাখ ১ হাজার ৩৯৩ জন ও নন-পুলিশ ১০ হাজার ৬১৪ জন।
প্রয়োজনের তুলনায় পুলিশের জনবল কম বলে বর্তমান সরকার তার প্রথম মেয়াদে ৩২ হাজার ৩১টি পদ সৃষ্টি করেছিল বলে জানান তিনি।
দ্বিতীয় মেয়াদে অনুমোদিত ৫০ হাজার পদের মধ্যে ৪৮ হাজার ৩০০টি সৃজন সম্পন্ন হয়েছে। অবশিষ্ট পদ সৃজনের প্রস্তাব বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে বিবেচনাধীন।
‘যে কোনো প্রত্যাবাসন জটিল ও দীর্ঘমেয়াদী’
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে এ মোমেন বলছেন, যে কোনো প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াই ‘জটিল ও দীর্ঘমেয়াদী’।
“নিরাপত্তাহীনতার কারণেই রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে ফেরত যাওয়ার বিষয়ে অনাগ্রহ প্রকাশ করেছে। এ কারণে যাবতীয় প্রস্তুতি থাকা সত্ত্বেও ২০১৮ সালের ১৫ নভেম্বর প্রত্যাবর্তন প্রক্রিয়া শুরু সম্ভব হয়নি।”
রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে সরকারের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকার কথা জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “বাংলাদেশ রোহিঙ্গা সঙ্কট নিরসনে দ্বিপাক্ষিক কূটনীতি পরিচালনার পাশাপাশি মিয়ানমারের উপর চাপ সৃষ্টির জন্য সব ধরনের আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক ফোরামে জোর কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছে। রাখাইন রাজ্যে যথাযথ সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টির জন্য বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক মহল মিয়ানমারের ওপর চাপ অব্যাহত রেখেছে।
“আশা করা যায় মিয়ানমান শিগগিরই রাখাইন রাজ্যে সহায়ক পরিবেশ তৈরি করবে এবং দ্রুত রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে প্রত্যাবাসন শুরু করা সম্ভব হবে।”
আরেক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, বর্তমানে ৯০ লাখ বাংলাদেশি বিভিন্ন দেশে কর্মরত আছেন।
মন্ত্রী জানান, মানব পাচারের শিকার হয়ে বিভিন্ন দেশের জলসীমায় উদ্ধার দুই হাজার ৫৫জনসহ লিবিয়া, থাইল্যান্ড, ইয়েমেন, জার্মানি, মিয়ানমার থেকে প্রায় ৪০ হাজার বাংলাদেশিকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়। এছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো থেকে অবৈধ অভিবাসীদের ফেরত আনতে স্বাক্ষরিত সমাঝোতা স্মারকের মাধ্যমে ৩৪৩ জন বাংলাদেশি নাগরিককে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে।