বিদেশি অর্থায়নে বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন হলেও বৈদেশিক ঋণের ফাঁদে যেন বাংলাদেশ না পড়ে, সে দিকেও সজাগ দৃষ্টি থাকার কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
“আমার সময়ে বাংলাদেশ কখনোই ঋণের ফাঁদে পড়বে না,” বলেছেন তিনি।
মঙ্গলবার চীনের ডালিয়ান আন্তর্জাতিক কনফারেন্স সেন্টারে ‘ডব্লিইএফ অ্যানুয়াল মিটিং অব দ্যা নিউ চ্যাম্পিয়ন্স-২০১৯’ বা সামার ডাভোস সম্মেলনে ‘কোঅপারেশন ইন দ্য প্যাসিফিক রিম’ শীর্ষক একটি প্যানেল আলোচনায় শেখ হাসিনা একথা বলেন বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক।
শ্রীলঙ্কার বৈদেশিক ঋণের ফাঁদে পড়ার পর বাংলাদেশ নিয়েও প্রশ্ন আসছে বিভিন্ন মহল থেকে; যদিও বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণ গড় মাত্রার অনেক নিচে রয়েছে।
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, “উনাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, আপনি যে বড় বড় মেগা প্রকল্প করছেন, আপনি কি মনে করেন না যে এই ঋণ বাংলাদেশের জন্য একটা ফাঁদ হিসেবে পরিগণিত হতে পারে।
“প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণ জিডিপির ১৪ দশমিক ৩ শতাংশের মতো। এর আগের বছর ১২ শতাংশ ছিল। শ্রীলঙ্কার বৈদেশিক ঋণ জিডিপির ৬৬ শতাংশ এবং ভারতের ঋণ ৩৪ শতাংশ।”
শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা যেসব প্রকল্প নিয়েছি, সেটা যদি জনগণের স্বার্থে নিয়ে থাকি, ঋণের বিনিয়োগ থেকে রিটার্ন যদি ঠিকমতো আসে এবং নেগোশিয়েশন যদি ঠিকমতো হয়, তাহলে ঋণ নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো কিছু নাই। এই তিনটি বিষয় আমি নিশ্চিত করি।”
শেখ হাসিনার টানা ১০ বছরের শাসনে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির প্রশংসা আসছে আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকেও। মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার পর ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত দেশে উন্নীত করার লক্ষ্য ঠিক করেছেন তিনি।
টানা কয়েক বছর জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশের উপরে ধরে রেখে প্রশংসিত বাংলাদেশ; এই হার আরও বাড়বে বলে আশা প্রকাশ করেন শেখ হাসিনা।
আলোচনায় ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমার বিরোধ নিস্পত্তি এবং ভারতের সঙ্গে গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তির কথাও উল্লেখ করেন তিনি।
শহীদুল হক বলেন, “প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ভূ-রাজনীতি গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু আমার জন্য প্রয়োজন আমার জনগণের উন্নতি। দারিদ্র্য দূরীকরণ এবং জনগণের উন্নয়নই আমার একমাত্র লক্ষ্য।”
আলোচনায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে জাপানের একজন উদ্যোক্তা বলেন, তারা এখন বাংলাদেশ ও ভারতে বিনিয়োগ বাড়াবেন।
চীন ও ভারতের সঙ্গে একই পর্যায়ের বন্ধুত্ব কিভাবে রাখেন- এমন প্রশ্নের মুখোমুখিও হন আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে শক্ত অবস্থান করে নিত যাওয়া শেখ হাসিনা।
জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, “বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতির মূলনীতি সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারও সাথে বৈরিতা নয়। সবার সাথে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখার জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। সো ফার আমরা সফল হচ্ছি।”
প্রধানমন্ত্রী ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের মধ্যে সহযোগিতা ও উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে প্যানেল আলোচনায় পাঁচটি প্রস্তাব রাখেন।
এর মধ্যে রয়েছে- সব দেশের শান্তি, সম্প্রীতি ও স্থিতিশীলতার পরিবেশ তৈরি করা; টেকসই উন্নয়নের পুরো দিকগুলোতে আলোকপাত করা; পারস্পরিক আস্থা ও শ্রদ্ধার উপর ভিত্তি করে দেশগুলোকে সম্পৃক্ত করা; অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন এবং সবার জন্য সম্পদ সৃষ্টির উপর গুরুত্ব দেওয়া; প্রতিযোগীদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতার সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি করা।
ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরামের গ্রীষ্মকালীন সভার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নেন শেখ হাসিনা। এরপর বিকালে ওয়ার্ল্ড ইকনোমিক ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী চেয়ারম্যান ক্লস সয়াবের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি।
সামার ডাভোসে অংশ নেওয়ার পর বুধবার প্রধানমন্ত্রী যাবেন বেইজিংয়ে। সেখানে চীনের প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী ও চীনের ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেসের চেয়ারম্যানের সঙ্গে তার বৈঠক হবে।
প্রধানমন্ত্রীর এই সফরে চীনের সঙ্গে বেশ কয়েকটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হওয়ার কথা রয়েছে। এছাড়া রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানের উপায় নিয়েও চীনের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা হবে বলে সরকারের তরফ থেকে আশা করা হচ্ছে।