ঋণ খেলাপিদের বিশেষ সুযোগ দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারের ওপর হাই কোর্টের স্থিতাবস্থার আদেশ শর্তসাপেক্ষে দুই মাসের জন্য স্থগিত করে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
ফলে ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্টে ৯ শতাংশ সুদে ১০ বছরে খেলাপি ঋণ পরিশোধের যে সুযোগ বাংলাদেশ ব্যাংক ওই সার্কুলারে দিয়েছিল, তা আপাতত কার্যকর থাকছে।
আপিল বিভাগ বলেছে, কোনো ব্যবসায়ী এই সুবিধা নিলে দুই মাসের মধ্যে তিনি আর অন্য কোনো ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে পারবেন না।
হাই কোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে অর্থ বিভাগের আবেদনের শুনানি করে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন নেতৃত্বাধীন চার বিচারকের আপিল বেঞ্চ সোমবার এই আদেশ দেয়।
মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের আবেদনে বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাই কোর্ট বেঞ্চ গত ২১ মে হাই কোর্ট ওই সার্কুলারের ওপর স্থিতাবস্থা জারি করে।
সেই সঙ্গে যে রুল সেদিন হাই কোর্ট জারি করেছিল, তা নিষ্পত্তির জন্য বিচারপতি জেবিএম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের হাই কোর্ট বেঞ্চকে দায়িত্ব দিয়েছে আপিল বিভাগ।
অর্থ বিভাগের পক্ষে এদিন সর্বোচ্চ আদালতে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। রিটকারীর পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।
আদেশের পর অ্যাটর্নি জেনারেল সাংবাদিকদের বলেন, “এটা পলিসি মেটার, শিল্প খাত এর সাথে জড়িত। জাতীয় স্বার্থে সরকার এই সুবিধা দেওয়া সিদ্ধান্ত নিয়েছে।”
অন্যদিকে রিটকারীপক্ষের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, “ঋণ খেলাপিদের কাছে যে টাকা আছে তো আছেই। এখন তারা (ঋণ খেলাপিরা) এই সুযোগটা (বাংলাদেশ ব্যাংকের দেওয়া বিশেষ সুবিধা) নিয়ে ব্যাংকে যে টাকাগুলো আছে সে টাকাগুলোও নেওয়ার পথ তৈরি করেছিল। সে পথ যাতে বন্ধ করা যায়, সেই চেষ্টা ছিল আমাদের।
“আমার মনে হয় আজকের আদেশের কারণে সেটায় অনেকটাই সফল হয়েছি। ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিলে সরকারের কাছে টাকা আসবে, কিন্তু ব্যাংকের টাকা তারা (নতুন ঋণ) নিতে পারবে না। এর মধ্য দিয়ে আমরা আশা করছি, জনগণের রক্ষিত টাকা রক্ষা করা সম্ভব হবে।”
মনজিল বলেন, আদালত আদেশ দেওয়ার সময় অ্যাটর্নি জেনারেল আপত্তি তুলে বলেছিলেন, এমন আদেশ হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারের কার্যকারিতা থাকবে না।
“তখন এজন বিচারক বলেছেন, দুই মাসে আর কী হবে। আর আপনি কি নিশ্চয়তা দিতে পারবেন যে এই সুযোগটা দেওয়ার পরে বেসিক ব্যাংক, ফার্মার্স ব্যাংকের মত আরেকটা ব্যাংক ধসে পড়বে না? সেটা তো পারবেন না।”
ব্যাংক পরিচালনায় ‘সৎ লোকের’ নিয়োগ নিশ্চিত করার তাগিদ দিয়ে বেঞ্চের একজন বিচারক অর্থ বিভাগের আইনজীবীর কাছে জানতে চান, সামান্য ঋণের জন্য গ্রামের কৃষকদের বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে। বড় বড় ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে সরকার কি ব্যবস্থা নিচ্ছে?
“বিশেষ শ্রেণিকে সুবিধা দেওয়া হচ্ছে কিনা সেটা খতিয়ে দেখতে হবে। সরকারতো দেশ চালাচ্ছে, কিন্তু দেশটাতো জনগণের।”
এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বিচারক বলেন, “ছোট ছোট ঋণ গ্রহীতার বিরুদ্ধে সবসময় সঠিকভাবে মামলা চলে। কিন্তু ঋণ খেলাপিদের বিরুদ্ধে কী আইনি ব্যবস্থা হয়? আর যেন কোনো বেসিক ব্যাংক, ফার্মার্স ব্যাংক তৈরি না হয়, আমরা এ বিষয়ে উদ্বিগ্ন!”