প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ইসলামী পর্যটন সবচেয়ে সম্ভাবনাময় খাত। তাই একে বিশ্ববাণিজ্যের ব্র্যান্ড হিসেবে গড়ে তুলতে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। এজন্য সার্বিক প্রয়াস ও রোডম্যাপ তৈরি অতি জরুরি। ২০২১ সাল নাগাদ ইসলামী পর্যটনের বাজার ২৪৩ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছবে।
‘ঢাকা দি ওআইসি সিটি অব ট্যুরিজম ২০১৯’ উদযাপন উপলক্ষে বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর একটি হোটেলে দু’দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। গত বছর ইসলামী সম্মেলন সংস্থার (ওআইসি) দেশগুলোর পর্যটনমন্ত্রীদের দশম সম্মেলনে ২০১৯ সালের জন্য ঢাকাকে ‘ওআইসি সিটি অব ট্যুরিজম (ওআইসি পর্যটন শহর ঢাকা)’ ঘোষণা করা হয়। খবর বাসস, ইউএনবি ও বিডিনিউজের।
শেখ হাসিনা বলেন, ওআইসিভুক্ত দেশগুলো ব্যবসা-বাণিজ্য, ট্যুরিজম সব ক্ষেত্রেই কাজ করতে পারে। বাংলাদেশ সরকার সেদিকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিচ্ছে। ওআইসির ২০১৮ সালের একটি প্রতিবেদনের তথ্য তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বে মুসলমান পর্যটকের সংখ্যা ১৫৬ মিলিয়ন, যা ২০২০ সালে বেড়ে দাঁড়াবে ১৮০ মিলিয়ন। একই বছর সারা বিশ্বের জনসংখ্যার ২৬ শতাংশ হবে মুসলমান।
থমসন-রয়টার্সের আরেকটি প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৫ সালে ইসলামী পর্যটনের বাজার ছিল ১৫১ বিলিয়ন ডলারের। এর মধ্যে ওআইসিভুক্ত দেশগুলোর বাজার ছিল প্রায় ১০৯ বিলিয়ন ডলারের। ইসলামী পর্যটনের বাজার বার্ষিক ৮ দশমিক ৩ শতাংশ হারে বেড়ে ২০২১ সাল নাগাদ ২৪৩ বিলিয়ন আমেরিকান ডলারে দাঁড়াবে। ওআইসি দেশগুলোতে পর্যটনের উন্নয়নে বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণ এবং ভিসা সহজীকরণ, বিনিয়োগ বৃদ্ধি, ব্র্যান্ডিং ও মানোন্নয়নে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি মনে করি মুসলিম উম্মাহর একসঙ্গে কাজ করা একান্ত প্রয়োজন, যাতে আমরা সারা বিশ্বে সকলের সঙ্গে সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে একসঙ্গে চলতে পারি। নিজেদের যেকোনো সমস্যা নিজেরাই সমাধান করতে পারি। যাতে করে অন্য কেউ মুসলমানদের ভাগ্য নিয়ে খেলতে না পারে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের স্বপ্ন পূরণে পর্যটন খাত উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করতে পারে। এক্ষেত্রে ইসলামী পর্যটন আমাদের সবচেয়ে সম্ভাবনাময় খাত, যেখানে আমাদের সবার একত্রে কাজ করার সুযোগ রয়েছে। ওআইসিভুক্ত দেশগুলোতে পর্যটন শিল্পের বিকাশে আমার প্রচেষ্টা, সমর্থন ও সহযোগিতা সব সময় থাকবে।’
প্রধানমন্ত্রী ওআইসিভুক্ত দেশগুলোর মুসলিম পর্যটক এবং পাশ্চাত্য দেশগুলোর জন্য বিশ্বের সববৃহৎ বালুময় সমুদ্রতট কপবাজারে পৃথক পর্যটন স্পট তৈরির প্রস্তাব করেন। তিনি বঙ্গোপসাগরের পার্শ্ববর্তী দেশগুলোকে নিয়ে বাংলাদেশের একটি নৌ টুরিজম রুট তৈরির পরিকল্পনার কথাও উল্লেখ করেন।
বাংলাদেশ এবং রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন বৈচিত্র্যপূর্ণ পর্যটন স্পটের কথাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্বঐতিহ্য ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন, প্রাচীন ও আধুনিক প্রত্নতত্ত্ব ও ইসলামী স্থাপনা বাংলাদেশের অন্যতম পর্যটন আকর্ষণ।
শেখ হাসিনা বলেন, বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে প্রায় চারশ’ বছরের প্রাচীন শহর ঢাকা গৌরবময় ইতিহাস ও ঐতিহ্যের জন্য সুপ্রসিদ্ধ। এখানে রয়েছে আহসান মঞ্জিল, লালবাগ কেল্লা, কার্জন হল, ঢাকার অদূরের পানাম নগরসহ উল্লেখযোগ্য প্রত্নতত্ত্ব নিদর্শন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঢাকা মসজিদের শহর হিসেবে সুপ্রসিদ্ধ। জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের নকশা পবিত্র কাবা শরিফের আদলে তৈরি করা হয়েছে। শুধু মুসলমানদের জন্যই নয়, অন্য ধর্মাবলম্বীদের জন্য ঢাকায় রয়েছে বিখ্যাত আর্মেনিয়ান গির্জা, ঢাকেশ্বরী মন্দির, প্যাগোডা এবং রোজ গার্ডেনসহ সুন্দর সুন্দর স্থাপনা।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, বিমান প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী, ওআইসির সহকারী মহাসচিব মুসা কুলাকলিকাইয়া, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়বিষয়ক সংসদীয় কমিটির সভাপতি র আ ম উবায়দুল মুক্তাদির চৌধুরী, এ মন্ত্রণালয়ের সচিব মহিবুল হক প্রমুখ।