জাতীয় নাট্যশালার সুবিশাল মঞ্চে একঝাঁক ছেলেমেয়ে। এরা সবাই মাদ্রাসার শিক্ষার্থী। তারা দাঁড়িয়ে পরিবেশন করে জাতীয় সংগীত। তাদের সঙ্গে দাঁড়িয়ে এ সময় কণ্ঠ মেলায় মিলনায়তনের অসংখ্য মানুষও। একে একে শোনাল দেশের গান, হামদ ও নাত। নাটিকা পরিবেশন করল। শোনাল কবিতা। তাদের পরিবেশনায় মুগ্ধ হলো জাতীয় নাট্যশালা সমাগত কয়েক শ দর্শক।
সারা দেশের আনাচকানাচে থাকা মাদ্রাসার শিক্ষার্থীর সংখ্যাও অনেক। বাস্তবতা হচ্ছে এসব শিক্ষার্থী বাঙালির সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও সাংস্কৃতিক জাগরণ থেকে দূরে, অনেকটা অন্ধকারে। তাদের মধ্যে সংস্কৃতিবোধ ছড়িয়ে দিতে, দেশপ্রেম ও সংস্কৃতিবান্ধব মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার কথা প্রায়ই উচ্চারিত হয়।
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি প্রথমবারের মতো তাদের আয়োজনে যুক্ত করেছে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের। গোপালগঞ্জ জেলার ছালেহিয়া কামিল মাদ্রাসা, মহিলা ফাজিল মাদ্রাসা, করপাড়া ইউনিয়ন দাখিল মাদ্রাসা, উলপুর মহিলা দাখিল মাদ্রাসা এবং নিলখী দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের নিয়ে গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এক অসাধারণ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।
উদ্যোগ বেশ কিছুদিন আগেই নেওয়া হয়েছিল। দেশের ১৬ কোটি মানুষের মাঝে শিল্প–সংস্কৃতির আলো ছড়িয়ে দেওয়ার মাধ্যমে শিল্প-সংস্কৃতি ঋদ্ধ সৃজনশীল মানবিক বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নানা উদ্যোগ নিয়েছেন। সংস্কৃতিচর্চা বাড়াতে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের সংযুক্ত করার আহ্বান জানিয়েছেন। এরই অংশ হিসেবে জঙ্গিবাদ ও অপসংস্কৃতির হাত থেকে দেশের তরুণ প্রজন্মকে বাঁচানোর জন্য শিল্পকলা একাডেমি নিয়মিত সংস্কৃতির বিভিন্ন বিষয়ে কর্মশালা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করে থাকে। মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের সংস্কৃতির মূল ধারার সঙ্গে প্রবাহিত করার লক্ষ্যে শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে গতকাল সন্ধ্যা ৭টায় একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে গোপালগঞ্জ জেলার বিভিন্ন মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের পরিবেশনায় অনুষ্ঠিত হয় সাংস্কৃতিক উৎসব। ‘শিক্ষা ও শিল্পের আলো ছড়াব আমরা তারুণ্যের জয়গানে’ শীর্ষক এ আয়োজনে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা অংশ নেয় নাটক, আবৃত্তি, গানসহ নানা সাংস্কৃতিক পরিবেশনায়। অনুষ্ঠান পরিচালনা করে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরাই। দর্শক সারিতেও ছিল অসংখ্য মাদ্রাসার শিক্ষার্থী।
অনুষ্ঠান শুরু হয় পবিত্র কোরআন থেকে তিলাওয়াতের মধ্য দিয়ে। কোরআন তিলাওয়াত করে গোপালগঞ্জ ছালেহিয়া কামিল মাদ্রাসার শিক্ষার্থী সাকিবুল ইসলাম। তারপর শুরু হয় অনুষ্ঠানের মূল পর্ব।
এর আগে সংক্ষিপ্ত আলোচনায় বক্তৃতা করেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করার মাধ্যমে অসাম্প্রদায়িক ও জঙ্গিবাদমুক্ত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করা হবে মন্তব্য করে তিনি জানান, সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পক্ষ হতে সারা দেশে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বাদ্যযন্ত্র বিতরণ করা হচ্ছে। চাহিদা সাপেক্ষে পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন মাদ্রাসায়ও বাদ্যযন্ত্রসহ সাংস্কৃতিক উপকরণ বিতরণ করা হবে। প্রতিমন্ত্রী বলেন, মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সাংস্কৃতিক চর্চা বিস্তৃত করার মাধ্যমে সারা দেশে সাংস্কৃতিক বিপ্লব সৃষ্টি করা হবে। এর মাধ্যমে সারা দেশে স্বাধীনতাবিরোধী কর্মকাণ্ড ও অপতৎপরতা হ্রাস পাবে। প্রতিমন্ত্রী এ সময় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী গোপালগঞ্জ জেলার ৫টি মাদ্রাসার প্রত্যেকটিকে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ হতে সাংস্কৃতিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ৫০ হাজার টাকা করে অনুদান প্রদানের ঘোষণা দেন।
বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন বাংলাদেশ পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল (ডিআইজি) হাবিবুর রহমান। একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা দেন গোপালগঞ্জ জেলা শিল্পকলা একাডেমির কালচারাল অফিসার আল মামুন বিন সালেহ। অনুভূতি ব্যক্ত করে গোপালগঞ্জ জেলার নিলখী দাখিল মাদ্রাসার ১০ম শ্রেণির শিক্ষার্থী তাহেরা খানম এবং শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করেন গোপালগঞ্জ ছালেহিয়া কামিল স্নাতকোত্তর মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মো. আবু সাঈদ ও জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক খোন্দকার এহিয়া খালেদ সাদি।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করে গোপালগঞ্জ করপাড়া ইউনিয়ন আলিম মাদ্রাসার একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী জামিল আহমদ ও গোপালগঞ্জ মহিলা কামিল মডেল মাদ্রাসার দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী সোনিয়া ইসলাম।