আইনমন্ত্রী আনিসুল হক নির্যাতনবিরোধী জাতিসংঘ কমিটির অধিবেশনে বলেছেন, হেফাজতে মৃত্যুর বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সরকার ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অনুসরণ করছে। নারী ও শিশু নির্যাতনের বিরুদ্ধে সরকারি পর্যায়ে সর্বোচ্চ আইনি সুরক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হচ্ছে। এ ছাড়া বাংলাদেশে সুশীল সমাজের দায়িত্বশীল ভূমিকাকে উৎসাহিত করা হচ্ছে এবং ব্লগারসহ সবার স্বাধীন মত প্রকাশের অধিকার সুরক্ষিত আছে।
মঙ্গলবার সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় শুরু হওয়া অধিবেশনে বাংলাদেশের ২৪ সদস্য বিশিষ্ট প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন আইনমন্ত্রী। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক, জেনেভায় জাতিসংঘ সদর দপ্তরে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধিসহ সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং গোয়েন্দা সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এই প্রতিনিধি দলে আছেন।
অধিবেশনে বাংলাদেশে নির্যাতনবিরোধী সরকারি পদক্ষেপের চিত্র তুলে ধরে একটি প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। অন্যদিকে মানবাধিকার ফোরাম, বাংলাদেশের ব্যানারে ২১টি মানবাধিকার সংগঠনের পক্ষ থেকে কয়েক বছরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা এবং পুলিশি হেফাজতে নিষ্ঠুর নির্যাতনের বিদ্যমান পদ্ধতি বর্ণনা করে আরেকটি প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে।
আইন মন্ত্রণালয়ের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক তার বক্তব্যে বলেন, সরকারি পক্ষ থেকে যে প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে সেটি জাতিসংঘের নির্যাতনবিরোধী সনদ এবং সংশ্নিষ্ট আইনের ভেতরে থেকেই করা হয়েছে। কারণ, বাংলাদেশ সরকার বর্তমানে নির্যাতনের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে আছে। যেমন হেফাজতে মৃত্যুর বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অবলম্বন করা হচ্ছে। নির্যাতিত ব্যক্তির জন্য যথাযথ আইনি সহায়তা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হচ্ছে। নারী ও শিশুদের নির্যাতনের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর অবস্থান নিয়েছে এবং এ নির্যাতন রোধে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে এখন চমৎকার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিরাজ করছে। প্রত্যেক ধর্মালম্বী মানুষ স্বাধীনভাবে তাদের ধর্মচর্চা করতে পারছেন।
অন্যদিকে কূটনৈতিক সূত্র জানায়, মানবাধিকার ফোরাম, বাংলাদেশের প্রতিবেদনে গত কয়েক বছরে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নির্যাতনের শিকার ৬৭ জনের বক্তব্যসহ ঘটনার সুনির্দিষ্ট বিবরণ দেওয়া হয়েছে। গত কয়েক বছরে বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহতের দিন-তারিখসহ বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার ব্যক্তিদের পরিবারের বক্তব্যও সংযুক্ত করা হয়েছে।
এ ছাড়া বর্তমানে হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদের সময় যে ধরনের অমানবিক নির্যাতন পদ্ধতি অনুসরণ করা হয় তারও সুনির্দিষ্ট বিবরণসহ বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। এতে আলোকচিত্রী শহিদুল আলমকে গ্রেফতার এবং শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কী ধরনের ভূমিকা ছিল তাও তুলে ধরা হয়েছে।