চামড়া কেনাবেচায় দু’পক্ষের সম্মতি

69071866_704286483330095_7561261856996720640_n-5d59970ab2a4a

কোরবানির পশুর চামড়ার দ্বিতীয় পর্যায়ে বাণিজ্য নিয়ে জটিলতার সমাধান হতে যাচ্ছে। ট্যানারি মালিক ও আড়তদার দু’পক্ষই আনুষ্ঠানিকভাবে কেনাবেচা করতে সম্মত হয়েছে। ট্যানারিগুলোর কাছ থেকে বকেয়া আদায় না হওয়া পর্যন্ত কাঁচা চামড়া বিক্রি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে সরে এসেছেন আড়তদাররা।

শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের উপস্থিতিতে দীর্ঘ বৈঠকে এমন সমঝোতা হয়েছে। সরকার, ট্যানারি মালিক, আড়তদার ও চামড়া খাতের সংশ্নিষ্টদের মধ্যে রোববার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে এ বৈঠক হয়।

বৈঠক শেষে বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. দেলোয়ার হোসেন সাংবাদিকদের জানান, সর্বসম্মতিক্রমে নেওয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তারা ট্যানারিতে চামড়া বিক্রি করবেন। ট্যানারি মালিকদের কাছে বকেয়ার বিষয়ে শিল্পমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এফবিসিসিআইকে দায়িত্ব দিয়েছেন। আগামী বৃহস্পতিবার এফবিসিসিআইর উদ্যোগে উভয়পক্ষকে নিয়ে এ বিষয়ে আলোচনা হবে। সেখান বকেয়া সমস্যার ফয়সালা করা হবে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পরামর্শে ট্যানারি মালিকরা গত শনিবার থেকে সীমিত পরিমাণে কাঁচা চামড়া কেনা শুরু করে। যদিও ওই দিন সকালে আড়তদাররা ট্যানারি মালিকদের কাছে পাওনা টাকার সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত কাঁচা চামড়া বিক্রি বন্ধ রাখার ঘোষণা দেন। এরপর বিকেলে নগদ টাকায় চামড়া বিক্রি করেন তারা।

বৈঠক শেষে শিল্পমন্ত্রী বলেন, চামড়া খাত অনেক দূর এগিয়েছে। তবে স্বার্থান্বেষী মহল এর গতি সীমিত করতে চায়। এর জন্য একটি চক্র কাজ করছে। এতে কিছুটা সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানে যে বিশেষ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে তার সমাধান হচ্ছে। এ খাতের বিভিন্ন সমস্যার একটি স্থায়ী সমাধানের জন্য সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা রয়েছে।

নূরুল মজিদ বলেন, এবার এক কোটি পশুর চামড়ার মধ্যে ১০ হাজার পিস নষ্ট হয়েছে। যা নগণ্য ব্যাপার। গরমের কারণে এসব চামড়া নষ্ট হয়েছে। বিভিন্ন জেলা থেকে আগত প্রতিনিধিরা এই তথ্য জানিয়েছেন বলে মন্তব্য করেন মন্ত্রী। দেনা-পাওনার বিষয়ে তিনি বলেন, আগে পাওনার জন্য কখনও অভিযোগ আসেনি। পারস্পরিক আস্থার ভিত্তিতে লেনদেন হয়েছে। মৌসুমি ব্যবসায়ীরা না বুঝে পুঁজি হারালে তাদের মাথা নষ্ট হয়। এ ধরনের ব্যবসায়ীরাই ভুল তথ্য দিচ্ছেন।

মন্ত্রী বলেন, চামড়ার বিষয়ে নীতিমালা হচ্ছে। আর চলমান সমস্যাগুলোর সমাধান বৈঠকে হয়েছে। বকেয়া নিয়ে আগামী ২২ আগস্ট তারা বসে সিদ্ধান্ত নেবেন। এটা গতানুগতিক। এখানে তেমন কোনো সমস্যা নেই। চামড়া তেমন নষ্ট হয়নি। চামড়া কেনাবেচা ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, কিছু রাজনৈতিক উদ্দেশ্য এখানে কাজ করেছে। জেলা থেকে যারা এসেছেন তারা এমনটাই জানিয়েছেন। এগুলোতে সরকার গুরুত্ব দেয় না। এ বিষয়ে সরকার সচেতন আছে। কেউ চামড়া পুড়িয়ে ছবি দিলে সরকারের কী করার আছে।

কাঁচা চামড়া রফতানির বিষয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, অবস্থা বুঝে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এই কাঁচামাল একটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে রফতানি করতে হয়। প্রয়োজন মনে হলে রফতানি করা হবে। রফতানি করার বিষয়ে অবস্থা বুঝে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

সালমান এফ রহমান বলেন, ব্যবসায়ী নেতাদের মধ্যে খোলামেলা আলাপের মাধ্যমে বকেয়া সমস্যার সমাধান হবে। বৈঠকে অনেক সমস্যা সমাধান হয়েছে। তিনি বলেন, কোরবানিতে এক কোটি চামড়ার মধ্যে এবার ১০ হাজার চামড়া নষ্ট হয়েছে। মাটিতে পুঁতে রাখা ও ফেলে দেওয়াসহ এর পরিমাণ মোট চামড়ার দশমিক শূন্য ১ শতাংশ। প্রতি বছর কিন্তু পাঁচ হাজার চামড়া এমনিই নষ্ট হয়। এবার মূলত বেশি গরমের জন্যই চামড়া বেশি নষ্ট হয়েছে। তিনি বলেন, জেলা থেকে আগত প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, চট্টগ্রাম ও সিলেটে বেশি চামড়া নষ্ট হয়েছে। নাটোর ও কুষ্টিয়ায়সহ অনেক জেলায় নষ্ট হয়নি।

বৈঠকে ভবিষ্যতে কোরবানির পশুর চামড়া নিয়ে যে কোনো ধরনের ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় শিল্প, বাণিজ্য ও অর্থ মন্ত্রণালয়, এফবিসিসিআই, চামড়া শিল্পসংশ্নিষ্ট সংগঠন, জেলা পর্যায়ে ব্যবসায়ী প্রতিনিধি ও অভিজ্ঞ উদ্যোক্তাদের নিয়ে একটি কমিশন গঠনের পরামর্শ আসে। বৈঠকে ট্যানারি মালিকরা আগামী তিন মাসের মধ্যে সংরক্ষণ করা কোরবানির পশুর চামড়া কেনার প্রতিশ্রুতি দেন।

এ ছাড়া বৈঠকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মফিজুল ইসলাম, শিল্প সচিব আবদুল হালিম, চামড়া খাতের সংগঠন এলএফএমইএবির সভাপতি সাইফুল ইসলাম, সাবেক সভাপতি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর, বিএফএলএলএফইএ সভাপতি মাহিউদ্দিন আহমেদ মাহিন, বিটিএ সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত উল্লাহসহ চামড়া খাতসংশ্নিষ্ট চার সংগঠনের নেতারা ও জেলা পর্যায়ের ব্যবসায়ী নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

Pin It