বহুল আলোচিত নতুন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করার পরিপত্র আজ মঙ্গলবার জারি করতে পারে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এরই মধ্যে এ বিষয়ে অনুমোদন দিয়েছেন বলে জানা গেছে। পরিপত্র জারির প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া শেষ করে এনেছে মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের নির্ভরযোগ্য সূত্র নিশ্চিত করেছে এ তথ্য।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত রোববারই এমপিওভুক্তির নথিতে তার সম্মতি জ্ঞাপন করেছেন। সোমবার মন্ত্রণালয়ে এসে পৌঁছেছে এ নথি। এবার সারাদেশের এক হাজার ৭৬৩টি স্কুল ও কলেজ এ তালিকায় স্থান পেয়েছে বলে জানা গেছে। তবে মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। সংশ্নিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, এবার শর্তসাপেক্ষে এমপিওভুক্ত করা হচ্ছে বেসরকারি নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে। প্রাথমিকভাবে কিছু শর্ত সাপেক্ষে আগামী তিন বছরের জন্য অস্থায়ীভাবে করা হচ্ছে তা। শর্ত পূরণে ব্যর্থ হলে ওইসব প্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্তি স্থগিত হয়ে যাবে। শর্তাবলির অন্যতম হলো, এমপিওভুক্ত হওয়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিটিকে পাবলিক পরীক্ষায় মোট শিক্ষার্থীর কমপক্ষে ৭০ শতাংশ পাস করতে হবে। এর ব্যত্যয় ঘটলে ওই বছরই সংশ্নিষ্ট প্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্তি স্থগিত হয়ে যাবে। তবে ভবিষ্যতে ভালো ফল করতে পারলে ফের তা চালু হবে। এ ছাড়া পরিপত্রে আরও কিছু শর্ত জুড়ে দেওয়া হতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের কমপক্ষে একটি ক্লাসরুমকে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম হিসেবে তৈরি করতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞানাগার ভালো মানের হতে হবে।
মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, অতীতের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, এমপিও একবার হতে পারলে সংশ্নিষ্ট প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের মধ্যে পাঠদানের ব্যাপারে এক ধরনের গাছাড়া ভাব চলে আসে। সে কারণে এবার শর্তসাপেক্ষে এমপিওভুক্তি দেওয়া হচ্ছে। এখন থেকে প্রতি বছর এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে মনিটর করা হবে।
মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, এবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর ধরন অনুসারে আলাদা আলাদা পরিপত্র জারি করা হবে। এর কারণ জানতে চাইলে এক কর্মকর্তা বলেন, অতীতে দেখা গেছে, একটি মাত্র পরিপত্রে সব প্রতিষ্ঠানের নাম দিয়ে পরিপত্র জারি করলে কোনো একটি নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠান এমপিও না পেয়ে মামলা করলে পুরো তালিকার সব প্রতিষ্ঠানের এমপিও স্থগিত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়। তাই এবার নিম্নমাধ্যমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আলাদা আলাদা পরিপত্র জারি করা হচ্ছে।
এ বছর এমপিওভুক্তি কার্যক্রম নিয়ে মন্ত্রণালয়ের কর্তারা কেউ এখনই মুখ খুলতে চাইছেন না। সবাই মুখে কুলুপ এঁটেছেন। এমপিওভুক্তির দায়িত্বে থাকা মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (বেসরকারি মাধ্যমিক) জাবেদ আহমেদের কাছে গতকাল এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি মুখ খুলতে রাজি হননি। সিনিয়র সচিব মো. সোহরাব হোসাইনের মোবাইল ফোনে ফোন করা হলে তিনিও কল রিসিভ করেননি।
জানা গেছে, চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরে এমপিওভুক্তির জন্য বরাদ্দ রয়েছে ৮৬৫ কোটি টাকা। এক হাজার ৭৬৩টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হলে তাতে ব্যয় হবে ৭৯৬ কোটি ৪৬ লাখ ৪৩ হাজার টাকা। বাকি ৬৮ কোটি ৫৭ লাখ টাকা মন্ত্রণালয়ের হাতে উদ্বৃত্ত থাকবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।
জানা গেছে, যে এক হাজার ৭৬৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হতে যাচ্ছে, তার মধ্যে এমপিওভুক্তির সব শর্ত পূরণ করে বাছাইয়ে টিকেছে এক হাজার ৬৪৯টি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। বুয়েটের তৈরি করে দেওয়া বিশেষ সফটওয়্যারের মাধ্যমে এবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বাছাই করা হয়েছে। এমপিওভুক্তির নীতিমালা-২০১৮-এর ১৪ ধারা অনুযায়ী এসব প্রতিষ্ঠান প্রয়োজনীয় সব শর্ত পূরণ করেছে। এসব প্রতিষ্ঠান বাছাই করার পর দেখা গেছে, সারাদেশের ৮৯টি উপজেলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও এমপিওভুক্তির যোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি। সমতার স্বার্থে ওইসব উপজেলায় এমপিওভুক্তির নীতিমালার ২২ নম্বর ধারা প্রয়োগ করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ। এ ধারায় বলা হয়েছে, ‘বিশেষ ক্ষেত্রে শর্ত শিথিল করে শিক্ষায় অনগ্রসর, ভৌগোলিকভাবে অসুবিধাজনক, পাহাড়ি, হাওর-বাঁওড়, চরাঞ্চল, নারী শিক্ষা, সামাজিকভাবে অনগ্রসর গোষ্ঠী, প্রতিবন্ধী, বিশেষায়িত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বিশেষ বিবেচনায় শর্ত শিথিল করা যেতে পারে।’ জানা গেছে, সারাদেশে এমপিওভুক্তির জন্য চূড়ান্ত করা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৫৫১টি নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়, এক হাজার দুটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ৬৭টি স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ৯৪টি উচ্চমাধ্যমিক কলেজ এবং ৫৩টি ডিগ্রি (অনার্স-মাস্টার্স) পর্যায়ের কলেজ রয়েছে। এমপিওভুক্তির জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে মোট আবেদন জমা পড়েছিল ছয় হাজার ১৪১টি। যাচাই-বাছাই শেষে সব শর্ত পূরণ করে অথবা বিশেষ বিবেচনায় যোগ্য হয়েছে এক হাজার ৭৬৭টি। আর এমপিওভুক্তির জন্য অযোগ্য বিবেচিত হয় চার হাজার ৪৯২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
সূত্র জানায়, ৫৫১টি নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয় এমপিওভুক্ত করতে এক বছরে ব্যয় হবে ১৯১ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। একইভাবে এক হাজার দুটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের জন্য ৪৫২ কোটি ৫০ লাখ টাকা, ৬৭টি স্কুল অ্যান্ড কলেজের জন্য ৪২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা, ৯৪টি উচ্চমাধ্যমিক কলেজের জন্য ৮৬ কোটি ১৯ লাখ টাকা এবং ৫৩টি ডিগ্রি (অনার্স-মাস্টার্স) পর্যায়ের কলেজের এমপিওভুক্তিতে ২৩ কোটি ৩৪ লাখ টাকা ব্যয় হবে। মোট ব্যয় হবে ৭৯৬ কোটি ৮৬ লাখ ৪৩ হাজার টাকা।