অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, মূলধন ঘাটতি পূরণে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোকে আর টাকা দেবে না সরকার। এখন থেকে ব্যাংকগুলোকে নিজের আয় দিয়ে চলতে হবে। তাদের মুনাফা থেকে সরকারকে রাজস্ব দিয়ে মূলধন জোগান দিতে হবে।
রোববার সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের সঙ্গে বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী বলেন, ব্যাংকগুলোকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, এখন থেকে কোনো ধরনের পুনর্মূলধনিকরণ করা হবে না। এটিই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। ব্যাংকগুলোর শীর্ষ পদে নতুন নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। নিয়োগপ্রাপ্তরা কীভাবে ব্যাংক চালাবেন তার পরিকল্পনা এক সপ্তাহের মধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয়ে জমা দেবেন। ওই পরিকল্পনা নিয়ে আগামী ৮ সেপ্টেম্বর বৈঠক করা হবে। ব্যাংকের পক্ষ থেকে কোনো সহযোগিতা চাওয়া হলে তা পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোকে ১০ বছর ধরে মূলধন ঘাটতি পূরণে জনগণের করের টাকা থেকে কয়েক হাজার কোটি টাকা দিয়েছে সরকার। সর্বশেষ গত অর্থবছরে দেওয়া হয়েছে দেড় হাজার কোটি টাকা। করের টাকা থেকে এভাবে মূলধন সরবরাহ করা নিয়ে বিশেষজ্ঞ মহলে সমালোচনা রয়েছে।
মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা আশা করি, ব্যাংকগুলোর ঊর্ধ্বতন ব্যবস্থাপনা পারদর্শী। তাদের অভিজ্ঞতা নিয়ে দেশে-বিদেশে যা ঘটছে এবং আগামীতে যা ঘটতে পারে তা বিবেচনায় নিয়ে আমাদের ব্যাংকগুলোকে চালাবেন। তাহলে দেশের জন্য ভালো কিছু প্রত্যাশা করতে পারি।’
তিনি বলেন, সব ব্যাংককে মুনাফা করতে হবে। সম্পদের সঠিক ব্যবহার করতে হবে। ঋণ দেওয়ার সময় জামানত ঠিকভাবে দেখে নিতে হবে, যাতে জামানত নগদায়ন করা যায়।
অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, এই চার ব্যাংক পুরো খাতের আমানতের প্রায় ২৫ শতাংশ এবং ঋণের ১৬ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করে। ব্যাংক খাতে অতিরিক্ত তারল্য রয়েছে ৯২ হাজার কোটি টাকা। চাইলেই বিনিয়োগ করা যাবে। এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, এ মুহূর্তে খেলাপি ঋণ কমার কোনো সুযোগ নেই। কারণ যে পুনঃতফসিল ও এপিট প্ল্যান নেওয়া হয়েছিল, সেটা কার্যকর করা যায়নি। এই পরিকল্পনা কার্যকরের কার্যক্রম চলছে। কার্যকর হলে খেলাপি ঋণ কমে যাবে। এপিট প্ল্যান নতুন করে হবে। মামলা উঠে গেলে নতুন সার্কুলার ইস্যু করা হবে। ঋণ পুনঃতফসিলে নতুন করে আবার তিন মাস সময় দেওয়া হবে। এটি কার্যকর হলে খেলাপি ঋণের পাশাপাশি সুদহার কমবে। ঋণের সুদহার হবে সিঙ্গেল ডিজিট। ভালো ব্যবসায়ী, মন্দ ব্যবসায়ী সবাইকে সুযোগ দেওয়া হবে।
তিনি বলেন, ‘খেলাপি ঋণ বাড়বে না যেদিন বলেছিলাম, সেদিনই বলেছিলাম এপিট প্ল্যান করব। কিন্তু প্ল্যানটা কার্যকর করা যায়নি। এখন কেউ টাকাই দিচ্ছে না। যারা টাকা দিত তারাও দিচ্ছে না। যারা ভালো তারাও দিচ্ছে না। সবাই এই প্ল্যানের অপেক্ষায় আছে। এই প্ল্যান কার্যকর হলে খেলাপি ঋণ শুধু কমবে না, অনেক কমে যাবে। দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের চিত্র পাল্টে যাবে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, রফতানি কমে যাওয়ার যে আশঙ্কা করা হচ্ছে, তা ঠিক নয়। রফতানি কমার কোনো কারণ নেই। এর আগেও বিশ্বে বিভিন্ন সমস্যা হয়েছে। মন্দা হয়েছে কিন্তু বাংলাদেশ আক্রান্ত হয়নি। এর কারণ হচ্ছে, বাংলাদেশ যেসব পণ্য রফতানি করে, সেগুলো কম মূল্যের। ফলে এসবের চাহিদা থাকবে।