ঢাকা মহানগর পুলিশের ওয়ারী বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ ইব্রাহীম খানকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। গত রোববার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দিন স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে তাকে বরখাস্ত করা হয়।
লালবাগ বিভাগে ডিসি হিসেবে কর্মরত থাকার সময় ইব্রাহীম খানের বিরুদ্ধে তিনতলা বাড়িসহ জমি দখল-সংক্রান্ত অভিযোগ ওঠে। জমিটির দখল নিতে কোটি টাকার সুবিধা নিয়ে একটি পক্ষকে সহযোগিতা করেন তিনি। সাময়িক বরখাস্তের পর পুলিশ সদর দপ্তরে সংযুক্ত করা হয়েছে তাকে। তবে তিনি প্রচলিত বিধি অনুযায়ী খোরপোশ ভাতা পাবেন।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে- ইব্রাহীম খানকে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা ২০১৮-এর বিধি ১২ (১) অনুযায়ী চাকরি থেকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হলো।
২৪তম বিসিএসের পুলিশ কর্মকর্তা ইব্রাহীম খান ২০১৬ সালের ৩১ জুলাই পুলিশের লালবাগ বিভাগে ডিসি হিসেবে যোগ দেন। প্রায় তিন বছর দায়িত্ব পালনের পর গত ৯ জুলাই সেখান থেকে ওয়ারী বিভাগে তিনি একই পদে বদলি হন। লালবাগে থাকার সময় গত বছরের সেপ্টেম্বরে তার বিরুদ্ধে বংশালের নবাবপুরের বাসিন্দা আজহারুল হক খান জমি দখল-সংক্রান্ত অভিযোগ তোলেন।
অভিযোগে বলা হয়, নবাবপুরের ২২১ নম্বর হোল্ডিংয়ের সম্পত্তি ঢাকা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের অর্পিত সম্পত্তির দপ্তর থেকে আজহারুল হক খানের মা মাসুদা খানম লিজ নেন। স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত শহীদ বুদ্ধিজীবী, কুমিল্লা জেলার সাবেক জেলা প্রশাসক শামসুল হক খানের পরিবারের সদস্য হিসেবে তিনি এ সম্পত্তি লিজ নেন। এরপর থেকে লিজ মানি পরিশোধ করে দীর্ঘদিন ধরে তিনি সম্পত্তিটি ভোগদখল করে আসছেন। মাসুদা খানমের মৃত্যুর পর তার পুত্র আজহারুল হক খান ও ফজলুল হক খানের নামে ওই সম্পত্তি লিজ নিয়ে ২০১৭ সাল পর্যন্ত লিজ মানি পরিশোধ করা হয়। ২০১৮ সালে লিজ নবায়নের জন্য তারা ঢাকা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে আবেদন করেন।
এদিকে গত বছর ২৮ সেপ্টেম্বর লিজ নেওয়া জমির তিনতলা বাড়িতে অবৈধভাবে জাবেদ উদ্দিন শেখের নেতৃত্বে ৩০-৩৫ জন সন্ত্রাসী প্রবেশ করে। সেখানে আজহারুলের প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার মুক্তিযোদ্ধা কেএম শহীদুল্লাহ এবং পরিবারের সদস্যদের হাত-পা বেঁধে পর দিন ২৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আটকে রেখে প্রায় পাঁচ কোটি টাকার মালপত্র লুট করে তারা। পরে তাদের সেখান থেকে জোর করে বের করে দেওয়া হয়। বাড়িটি ভেঙে নতুন করে ভবন নির্মাণের কাজও শুরু করে অবৈধ দখলকারীরা। এ ঘটনায় বংশাল থানায় মামলা করেন ভুক্তভোগীরা। কিন্তু পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
বিষয়টি ডিএমপি সদর দপ্তর পর্যন্ত গড়ায়। অভিযোগ তদন্ত করতে ডিএমপি থেকে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠিত হয়। ইব্রাহীমের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের সত্যতা পায় কমিটি। চলতি বছরের শুরুর দিকে কমিটি তথ্যপ্রমাণসহ তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়।
গত ২৩ মে পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত ডিআইজি (পার্সোনেল ম্যানেজমেন্ট-১) মো. আমিনুল ইসলাম ব্যাখ্যা চেয়ে ইব্রাহীম খানকে চিঠি দেন। এতে বলা হয়, সন্ত্রাসীরা অভিযোগকারী আজহারুলের প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার ও তার পরিবারের সদস্যদের ভয়ভীতি দেখিয়ে হাত-পা বেঁধে পাঁচ কোটি টাকার মালপত্র লুট করে। এ ঘটনায় বংশাল থানার তদারকি কর্মকর্তা হিসেবে প্রচলিত আইনের উপযুক্ত ধারায় মামলা রুজুর বিষয়ে বংশাল থানার ওসিকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিতে ডিসি ইব্রাহীম খান ব্যর্থ হয়েছেন।
চিঠিতে আরও বলা হয়, ইব্রাহীম খান নিজেই ২০১৮ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর মামলার তদারকি প্রতিবেদন (সুপারভিশন নোট) দেন। মামলা রুজু হওয়ার আগেই তদন্ত তদারকি দেখানোর ঘটনায় প্রমাণিত হয়, তিনি তার দায় এড়ানোর জন্যই তড়িঘড়ি করে প্রতিবেদন দিয়েছেন। ঘটনাস্থল পরিদর্শন না করেও তিনি পরিদর্শনের অসত্য তথ্য দিয়েছেন। তিনতলা বাড়ি ভেঙে অবৈধভাবে জমি দখল করে নতুন ভবন নির্মাণকাজ অব্যাহত রাখার কথা জানার পরও তিনি আইনানুগ ব্যবস্থা ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেননি। তিনি সরকারি দায়িত্ব ও কর্তব্যে অবহেলার পরিচয় দিয়েছেন। যা সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা ২০১৮-এর বিধি নং ২ (খ)-এর সংজ্ঞা অনুসারে অসদাচরণ হিসেবে গণ্য করা হয়। এ বিষয়ে ইব্রাহীম খান কোনো কথা বলতে রাজি হননি।