কটিয়াদী-তে প্রধানমন্ত্রীর নদী খননের প্রকল্পে বাধা

bd-pratidin-12-2019-08-26-08

দেশের নৌপথ পুনরুদ্ধারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অগ্রাধিকার প্রকল্প ব্রহ্মপুত্র নদের ভৈরব-কটিয়াদী নৌপথ খননকাজে বাধা দিচ্ছে স্থানীয় স্বার্থান্বেষী কয়েকটি মহল। খননের মাটি নিয়ে কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী ও নরসিংদীর মনোহরদী উপজেলার একটি গোষ্ঠীর মধ্যে চলছে টানাটানি। দুই জেলার প্রশাসনের সমন্বয়হীনতায় নদের খনন কাজ মুখ থুবড়ে পড়েছে বলে জানা গেছে। তবে ব্রহ্মপুত্রের নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে খননকাজ এগিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন বিআইডব্লিউটিএ, স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধিসহ সাধারণ মানুষ।

নদ খননের সুফল পেতে আশাবাদী কটিয়াদীর স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি হলো- খননের ফলে পরিবেশগত ভারসাম্য ফিরে আসবে। তখন নৌ-যোগাযোগব্যবস্থা সচল হবে। মানুষ নৌপথে কম খরচে পণ্য পরিবহন ও যাতায়াত করতে পারবে। কার্গো চলাচল করবে। আবার এই নদের মাটি স্থানীয় স্কুল, কলেজ ও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সরকারের বহুমুখী উন্নয়ন কাজে ব্যবহার করা হবে। নদের পানি সেচপ্রকল্পে ব্যবহার করা অনেক সহজ হবে। শুকনো মৌসুমে এই নদে কোনো পানি থাকে না। স্থানীয় মানুষ তাদের প্রয়োজনীয় কাজে নদের পানিও ব্যবহার করতে পারবেন। কৃষিকাজে মানুষ নিত্যদিন পানি ব্যবহার করতে পারবেন। নদের পানি জমিতে ফলাবে সোনার ফসল। নদ তো প্রাণ ফিরে পাবেই, আসবে প্রাকৃতিক ভারসাম্যও।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ- বিআইডব্লিউটিএর অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক মো. সাইদুর রহমান গতকাল বলেন- এটা প্রধানমন্ত্রীর একটি অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত প্রকল্প হওয়ায় এখানকার জনগণ ও প্রশাসন সবাই সোচ্চার। দুই জেলার প্রশাসনের সমন্বয়হীনতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন- এখানে প্রথমদিকে বুঝতে একটু সমস্যা হয়েছে। কারণ- যুগ যুগ ধরে এখানে কোনো ড্রেজিং হয়নি। ফলে ৫০ বছর আগে নদের সীমানা যেখানে ছিল, এখন সেখানে নেই। নদ সরে যাওয়ার ফলে এই সমস্যা তৈরি হয়েছে। আবার স্থানীয় মানুষের মধ্যে এক ধরনের দখলদারিত্ব বজায় রাখার প্রবণতা ছিল। সেটা স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা মিলে সুরাহা করেছেন।

বিআইডব্লিউটিএ কর্মকর্তার সঙ্গে একমত পোষণ করে কটিয়াদী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মুশতাকুর রহমান গতকাল বলেন- আমাদের মধ্যে যে ভুল- বোঝাবুঝি হয়েছিল, সেটা সমাধান হয়েছে। প্রশাসনের সহায়তায় প্রধানমন্ত্রীর এই প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়নের দিকে এগিয়ে যাবে। মাটি নিয়ে স্থানীয় মানুষের মনে যে সংকট তৈরি হয়েছে, তার সমাধান আমরা করতে পেরেছি। এখন ড্রেজিং কাজ আগামীকাল (আজ) থেকেই বাস্তবায়নের কার্যক্রম শুরু করব। সমন্বয়হীনতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন- দুই জেলা প্রশাসন আগেই যদি আলাপ-আলোচনা করত, তাহলে আগেই আমরা ঐকমত্যে পৌঁছে যেতাম। দুই জেলার প্রশাসনের বিষয়টি অনেক আগেই উপলব্ধি করা উচিত ছিল। দুই জেলার মাঝে যোগাযোগ তৈরিতে অনাকাক্সিক্ষত এ ঘটনা ঘটেছে।

বিআইডব্লিউটিএ জানিয়েছে- ২০১৭ সালে শুরু হওয়া ভৈরব-কটিয়াদী নৌপথ খনন প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হবে আগামী ২০২১ সালে। অভ্যন্তরীণ ৫৩টি নৌপথের ৪০ হাজার কিলোমিটার নৌপথ খননের জন্য প্রথম পর্যায়ে ২৪টি নদী খনন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে মোংলা-ঘষিয়াখালী নৌপথসহ প্রকল্পের ৫৮ দশমিক ২৩ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ভৈরব-কটিয়াদী রুটে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র ও আড়িয়াল খাঁ নদের ড্রেজিং কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালে। সারা দেশের অভ্যন্তরীণ ৫৩টি নৌপথের ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের জন্য ২০১২ সালে ১৪ নভেম্বর একনেক প্রকল্পটি অনুমোদন করে। প্রথম দফায় ২৪টি এবং দ্বিতীয় দফায় ২৯টি গুরুত্বপূর্ণ নদীপথ খনন করার কথা রয়েছে। নদ খননের এই মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে নৌপথ সচল হবে। এই প্রকল্পের অংশ হিসেবে নরসিংদী জেলার বেলাব উপজেলায় আড়িয়াল খাঁ/পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদে ৪০ কিলোমিটার নৌপথ খননকাজ চলছে। কিন্তু গত জানুয়ারি মাস থেকে স্থানীয়দের বাধার কারণে নৌপথ খননকাজ বন্ধ রাখা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে প্রকল্প পরিচালক মো. সাইদুর রহমান গতকাল বলেন, প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকারে থাকা ৫৩টি নদী খনন প্রকল্পের একটি হলো ভৈরব-কটিয়াদী নৌপথ। আমরা কটিয়াদী অংশ ড্রেজিং করতে এসেছি। এখানে সীমানা নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে। এই কারণে গত ২২ আগস্ট একটি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এরপরই আজ (গতকাল) সীমানা নির্ধারণের একটি বৈঠক করেছে কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসন। তারা আমাদের যে সীমানা নির্ধারণ করে দিয়েছেন, সে অনুযায়ী আগামীকাল (আজ) ড্রেজিং কাজ শুরু হবে। আইনশৃঙ্খলা নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কথা দিয়েছেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা।

জানা গেছে- বিগত একশ বছরে ভৈরব-কটিয়াদী নৌপথে কোনো ড্রেজিং হয়নি। ড্রেজিং না হওয়ার ফলে ২৫ থেকে ৩০ বছর আগে নদীর যে সীমানা ছিল, তা একদিক থেকে আরেকদিকে সরে এসেছে। ফলে এখন নদীর সিএস ও আরএস ম্যাপের কোনোটার সঙ্গেই মিল নেই। এ কারণে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে যে- আসলে নদ কোন দিকের। এ বিষয়টি গতকাল কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসন ও কটিয়াদী উপজেলা প্রশাসন, উপজেলা পরিষদ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে চূড়ান্ত হয়েছে।

সর্বশেষ গত ২২ আগস্ট কটিয়াদী উপজেলার লোহাঝুড়ি ইউনিয়ন এলাকায় ড্রেজিং কার্যক্রম পরিদর্শনকালে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ এলাকার কতিপয় স্বার্থান্বেষী মহল কাজে বাধা প্রদান করে। বিআইডব্লিউটিএর প্রকৌশলীদের ওপর অতর্কিত হামলা চালানো হয়। রক্তাক্ত হয়ে পড়েন একজন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি। এর আগে ড্রেজিং কাজে নিয়োজিত ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান মেশিনারিজ নিয়ে নদী খননকাজের প্রস্তুতি নিলেও গত দুই মাসেও সে কাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি বিভিন্ন রকমের বাধার কারণে। এসব বিষয় সুরাহা করতে গতকাল কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসনের নেতৃত্বে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়। পরে কটিয়াদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে বিআইডব্লিউটিএ, জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি, পুলিশ প্রশাসন, উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানসহ স্থানীয় বিভিন্ন সংস্থার উপস্থিতিতে একটি জরুরি বৈঠক হয়।

ওই বৈঠকে কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এডিসি-রাজস্ব) দুলাল চন্দ্র সূত্রধর বলেন- প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মেনেই নদের খননকাজ চলবে। স্রোত মোতাবেক নদ চলবে। আমরা সরকারি এজেন্ডা বাস্তবায়ন করব। কটিয়াদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা- ইউএনও ইশরাত জাহান কেয়া বলেন- সবাই মিলে ভালোভাবে ভৈরব-কটিয়াদী নৌপথ ড্রেজিং প্রকল্পের কাজ এগিয়ে নেব।

Pin It