বিদেশি কিছু এনজিও মিয়ানমারের পক্ষ হয়ে রোহিঙ্গাদের নিয়ে ষড়যন্ত্র করছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ডা. মিলন হলে বুধবার অনুষ্ঠিত এক আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৪তম শাহাদাৎবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) এই আলোচনা সভার আয়োজন করে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এখন রোহিঙ্গাদের নিয়ে নানা খেলা খেলছে। পরোক্ষভাবে বিদেশি কিছু এনজিও ষড়যন্ত্র করছে। মিয়ানমারকে সহযোগিতা করছে। আর দেশের ভেতরে আন্দোলন ও নির্বাচনসহ সবকিছুতেই ব্যর্থ হয়ে বিএনপি সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে রোহিঙ্গা ইস্যুকে সর্বশেষ রাজনীতির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে।’
রোহিঙ্গাদের নিয়ে ষড়যন্ত্রকারী বিদেশি এনজিওগুলোর মধ্যে পাকিস্তানপন্থিও আছে– মন্তব্য করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এরা পদে পদে আমাদের বিপদে ফেলতে চায়। বঙ্গবন্ধুর পলাতক খুনিদের ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ চলছে আমেরিকা ও কানাডা থেকে। কিন্তু পাকিস্তানে যে দুই খুনি আছে, তাদের ফেরৎ দিচ্ছে না। তাদের কাজসহ আশ্রয়ও দিয়েছে পাকিস্তান। জানি না এই পরিস্থিতি কবে পরিবর্তন হবে।’
বিএনপির উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘স্বাভাবিক রাজনীতি করতে যারা ব্যর্থ, নেতিবাচক রাজনীতি করতে করতে তারা জনসমর্থন আদায়েও ব্যর্থ হয়েছে। ক্রমেই তাদের জনবিচ্ছিন্নতা বাড়ছে। তারা আন্দোলনে ব্যর্থ, নির্বাচনেও ব্যর্থ। কোটা আন্দোলন এবং স্কুলের ছেলে-মেয়েদের নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের ওপর ভর করা, সেখানেও ব্যর্থ। সে কারণে বারবার ব্যর্থ হয়ে বিএনপি এখন ষড়যন্ত্রের পথ বেছে নিয়েছে। এই ষড়যন্ত্রের পথ বেছে নেওয়া ছাড়া বিএনপির আর কোনো উপায়ও নেই। একেকটা ইস্যু খুঁজে বেড়াচ্ছে বিএনপি। অবশেষে রোহিঙ্গা ইস্যুর ওপর ভর করে নতুন ইস্যু খুঁজে নতুন খেলায় মেতে উঠেছে।’
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সাম্প্রতিক বক্তৃতা-বিবৃতির কঠোর সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আগস্ট মাস এলেই মির্জা ফখরুল সাহেবরা বেপরোয়া চালকের মত রাজনীতিতে বেপরোয়া হয়ে যান। পথহারা পথিকের মত দিশেহারা হয়ে যান। আপন বিশ্বাসঘাতকতায়, আপন অপরাধের শৃঙ্খলে যুক্ত হয়ে বাধা পেয়ে যান। সেজন্য বিএনপি নেতাদের মুখ দিয়ে দায় এড়ানোর যেসব বক্তব্য আসে, ইতিহাসের আদালতে সেগুলো প্রমাণ হয়ে গেছে। প্রচলিত আদালত ও জনতার আদালতে প্রমাণ হয়ে গেছে ১৫ আগস্ট ও ২১ আগস্টের হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড বিএনপি এবং তাদের দলের প্রতিষ্ঠাতা।’
মঞ্চে উপস্থিত স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেককে উদ্দেশ করে সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘ডেঙ্গু পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে এসেছে– এটা মনে করার কোনো কারণ নেই। স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে বলবো– ডেঙ্গু মোকাবেলায় সারা বছরের প্রস্তুতি রাখতে হবে। মৌসুমি আয়োজন দিয়ে ডেঙ্গুর বিস্তার রোধ করা যাবে না।’
তিনি বলেন, ডেঙ্গুসহ এ ধরনের রোগ বাংলাদেশে শুরু হয়েছে, চলবে। তাই দিনক্ষণ বেঁধে দেওয়া কোনো প্রয়োজন নেই। আগস্টে পরিস্থিতি ভালো হয়েছে, সেপ্টেম্বরে শেষ হয়ে যাবে… আবার কোথাও কোথাও দেখছি সেপ্টেম্বরে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে। কাজেই দিনক্ষণ না দিয়ে, সারা বছরকেই দিনক্ষণ হিসেবে বিবেচনায় নিতে হবে। এসব রোগের বিস্তার রোধে, এসব ব্যাধির বিরুদ্ধে সারা বছর প্রস্তুতি রাখতে হবে। প্রতিরোধের জন্য সচেতনতা ও সাবধানতা প্রয়োজন। আর কেবল ওষুধ ছিটিয়ে এ রোগের বিস্তার ঠেকানো যাবে না। সবচেয়ে বড় ওষুধ হচ্ছে সচেতনতা। সেটাই হচ্ছে মূল চিকিৎসা। আশা করি, এই লড়াইয়ে আমরা সফল হবো, চিকিৎসকরাও সফল হবেন।’
বিএসএমএমইউ’র উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়ার সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য দেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) সভাপতি অধ্যাপক ডা. এম ইকবাল আর্সলান, বিএমএ’র মহাসচিব ডা. ইহতেশামুল হক চৌধুরী, স্বাচিপের মহাসচিব অধ্যাপক ডা. এম এ আজিজ, বিএসএমএমইউ’র উপ-উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. শহীদুল্লাহ সিকদার, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. সাহানা আখতার রহমান, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. মুহাম্মদ রফিকুল আলম, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান, রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল হান্নান, প্রক্টর অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোজাফফর আহমেদ প্রমুখ।