গাড়িতে সিএনজি নয়

Untitled-11-5d6586cb3f9b7

গাড়ি চালানোর জন্য আর সংকুচিত প্রাকৃতিক গ্যাস (কমপ্রেসড ন্যাচারাল গ্যাস বা সিএনজি) দেবে না সরকার। পরিবহন খাতে জ্বালানি হিসেবে লিকুইফাইড পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) ব্যবহার উৎসাহিত করা হবে। গৃহস্থালি ও বাণিজ্যিক খাতেও প্রাকৃতিক গ্যাসের পরিবর্তে এলপিজির ব্যবহার বাড়ানো হবে। এ ছাড়া অদক্ষ ক্যাপটিভ বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করা, পণ্য উৎপাদনে বিকল্প জ্বালানির ব্যবহার বাড়ানো এবং বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠানের জন্য গ্যাসের আলাদা দাম নির্ধারণ করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।

এমন সব উদ্যোগ নিয়ে প্রাকৃতিক গ্যাস বরাদ্দ নীতিমালা-২০১৯-এর খসড়া তৈরি করা হয়েছে। খসড়া নীতিমালাটি চূড়ান্ত করার জন্য ৯ সেপ্টেম্বর এক আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা ডেকেছে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, দেশের উন্নয়ন লক্ষ্য, অভ্যন্তরীণ প্রাকৃতিক সম্পদ, গ্যাসের আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি, পরিবর্তিত চাহিদা ও প্রযুক্তি মাথায় রেখে নীতিমালাটি প্রণয়ন করা হয়েছে। এতে শিল্পায়ন ও সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহারকে সবচেয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

নীতিমালায় বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাপী ইলেকট্রনিক, হাইব্রিড ও ব্যাটারিচালিত গাড়ির চাহিদা বাড়ছে। বাড়ছে অটোগ্যাসের চাহিদাও। অটোগ্যাসের মাধ্যমে গাড়ির সিলিন্ডার একবার পূর্ণ করলে তা দিয়ে সিএনজির তুলনায় চার বা পাঁচগুণ বেশি দূরত্ব অতিক্রম করা যায়। এ ছাড়া এলপিজি তুলনামূলক নিরাপদ, নির্ভরযোগ্য ও কম ঝুঁকিপূর্ণ জ্বালানি। জ্বালানি বহুমুখীকরণের লক্ষ্যে পরিবহন খাতে পর্যায়ক্রমে সিএনজির পরিবর্তে অটোগ্যাসকে উৎসাহিত করা যৌক্তিক। এ ছাড়া আবাসিক ও বাণিজ্যিক খাতে প্রাকৃতিক গ্যাসের পরিবর্তে এলপিজি সরবরাহে রেগুলেটরি সাপোর্ট দেওয়া হবে।

নীতিমালায় গ্যাস পাওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে শিল্প খাতকে। পরেই রয়েছে সার, বিদ্যুৎ, ক্যাপটিভ পাওয়ার ও চা বাগান। বাণিজ্যিক, সিএনজি ও গৃহস্থালি খাত রয়েছে সবশেষে। নতুন নীতিমালায় গ্যাসের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করতে বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে উন্নত যন্ত্রপাতি ব্যবহার, সব পর্যায়ে মিটারিং সিস্টেম চালুর উদ্যোগ অন্যতম।

নীতিমালায় বলা হয়েছে, এনার্জি ইফিশিয়েন্ট যন্ত্রপাতির ব্যবহার উৎসাহিত করতে আমদানি এবং গ্রাহক পর্যায়ে প্রণোদনা দেওয়ার উদ্যোগ নেবে মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া বড় গ্যাস ব্যবহারকারী প্রতিষ্ঠানে অডিট সিস্টেম চালু করা হবে। শ্রেডা অনুমোদিত এনার্জি অডিট ফার্ম এসব অডিট করবে। কোন খাতে কী পরিমাণ গ্যাস সরবরাহ করা হবে, সেজন্য বরাদ্দের ক্যালেন্ডার করার কথা বলা হয়েছে নীতিমালায়। বড় গ্যাস ব্যবহারকারী প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে বিশেষ প্রয়োজনে সমঝোতার ভিত্তিতে আলাদা মূল্য নির্ধারণেরও পরিকল্পনা রয়েছে। বেশি গ্যাস ব্যবহারকারীদের একটি তথ্যভাণ্ডার করবে সরকার।

খসড়া নীতিমালায় বলা হয়েছে, যেসব খাত জাতীয় অর্থনীতিতে বেশি অবদান রাখবে সেসব ক্ষেত্রে গ্যাস সরবরাহ করায় অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য পাবে শিল্প খাত। সবচেয়ে কম গুরুত্ব পাবে গৃহস্থালি খাত। আর বিদ্যুৎ খাতে বর্তমানে যে হারে গ্যাস সরবরাহ করা হয়, তাও কমানো হবে। মোট গ্যাস সরবরাহের সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ দেওয়া হবে বিদ্যুৎ ও ক্যাপটিভ পাওয়ার খাতে। দেশে বর্তমানে প্রতিদিন ৩২০ কোটি ঘনফুট প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহ করা হয়। এর মধ্যে দেশীয় উৎপাদন ২৭০ কোটি ঘনফুট। অতিরিক্ত চাহিদা মেটাতে এলএনজি আমদানি করা হচ্ছে। আমদানি করা এলএনজির দাম স্থানীয়ভাবে সরবরাহ করা গ্যাসের চেয়ে অনেক বেশি। কিন্তু সরকার ভিশন ২০২১ ও ভিশন-২০৪১-এর লক্ষ্য অর্জনে গ্যাসের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করতে চায়। এলএনজি আমদানি যেহেতু প্রচুর ব্যয়বহুল, সেহেতু গ্যাসনির্ভর যেসব খাত বা প্রতিষ্ঠান বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করে ও বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে, তাদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। পাশাপাশি অর্থনৈতিক অঞ্চল ও পরিকল্পিত শিল্প এলাকায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গ্যাস সরবরাহ করা হবে।

Pin It