মশা নিধন নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে ক্ষিপ্ত হয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বাজেট পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে হট্টগোল বাঁধিয়েছেন কয়েকজন ওয়ার্ড কাউন্সিলর।
আর সাংবাদিকদের সঙ্গে এ ধরনের আচরণ দেখে কাউন্সিলরদের ধমকে দিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করেছেন মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন।
পরে মেয়রের হস্তক্ষেপে কাউন্সিলররা সাংবাদিকদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা চাইলে পরিস্থিতি শান্ত হয়।
রোববার দুপুরে দক্ষিণ সিটির নগর ভবনে মেয়র হানিফ মিলনায়তনে ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরের জন্য ৩ হাজার ৬৩১ কোটি ৪০ লাখ টাকার বাজেট ঘোষণা করেন মেয়র খোকন।
এর মধ্যে মশা মারতে বরাদ্দ ধরা হয়েছে ৪৩ কোটি ৩০ লাখ টাকা, যা আগের অর্থবছরে ছিল ১৯ কোটি ৫২ লাখ টাকা।
প্রশ্নোত্তর পর্বে মেয়র সাঈদ খোকনের কাছে নগর উন্নয়ন বিষয়ে নানা প্রশ্ন করেন সাংবাদিকরা। একজন সাংবাদিক বলেন, দুই বছর আগে কাউন্সিলরদের আবেদনের পর পরিচ্ছন্নতাকর্মী ও মশকনিধন কর্মীদেরকে নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব কাউন্সিলরদের হাতে দেওয়া হয়। এ দায়িত্ব কাউন্সিলররা ঠিকমত পালন করেন না বলে নগরবাসী অভিযোগ রয়েছে।
মেয়র ওই সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার আগেই কয়েকজন ওয়ার্ড কাউন্সিলর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন এবং হট্টগোল শুরু করেন। তারা ওই সাংবাদিককে প্রশ্ন রেখে বসতে বলেন।
কাউন্সিলরদের কয়েকজন সে সময় ওই সাংবাদিকের দিকে তেড়ে যাওয়ারও চেষ্টা করেন। অন্য সাংবাদিকরা বাধা দিলে তাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন কাউন্সিলররা।
হট্টগোলের মধ্যে মেয়র সাঈদ খোকন চেয়ার ছেড়ে দাঁড়িয়ে পড়েন। ক্ষিপ্ত স্বরে কাউন্সিলরদের উদ্দেশে তিনি বলেন, এটা সিটি করপোরেশনের ‘মানসম্মানের; ব্যাপার।
“আমি আশ্চর্য। আপনারা কি কাউন্সিলর? এটা আমাদের সবার মানসম্মানের ব্যাপার। তারা এখানে ইনভাইটেড, আমাদের গেস্ট। আমাদের অতিথি। আশ্চর্য লাগে আমার কাছে।”
এরপর মেয়র কয়েকজন কাউন্সিলকের তাদের জায়গায় বসতে বলেন। তেড়ে আসা ওই কাউন্সিলরদের একজন ডিএসসিসির ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর গোলাম হোসেন পরে সাংবাদিকদের কাছে ক্ষমা চান।
সংবাদ সম্মেলনে মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন দাবি করেন, ডিএসসিসি এলাকার শতকরা ৯০ ভাগ রাস্তা চলাচল উপযোগী। ৯৫ ভাগ সড়ক আলোকিত।
মেয়রের এমন দাবি করলে একজন সাংবাদিক মেয়রকে উদ্দেশ করে বলেন, শতকরা ৯০ ভাগ রাস্তা চলাচলের উপযোগী নয়, বরং উল্টো। সড়ক চলাচলের অনুপযোগী।
এ সময় মেয়র ওই সাংবাদিককে বলেন, শতকরা ৯০ ভাগ সড়ক চলাচলের অনুপযোগী এটা যদি লিখিত আকারে দিতে পারেন, তাহলে তিনি ওই সাংবাদিককে পুরস্কৃত করবেন।
“আপনাকে প্রমাণ করতে হবে ৯০ শতাংশ রাস্তা চলাচলের অনুপযোগী। অথাৎ, এগারশ কিলোমিটার রাস্তার মধ্যে এক হাজার কিলোমিটার রাস্তা ঢাকা শহরে চলাচলে অনুপযোগী রয়েছে, এ কথা ঢাকা শহরের নাগরিকরা মানবে, এটা আমার মনে হয় না।”
ওই সাংবাদিক তখন বলেন, তিনি ওয়ার্ড পর্যায়ে রাস্তা খারাপ থাকার কথা বলেছেন।
তখন মেয়র ওই সাংবাদিকের কাছে জানতে চান তিনি কোথায় থাকেন।
ওই সাংবাদিক বলেন, তিনি কলাবাগানে থাকেন। মেয়র ওই এলাকা কখনো পরিদর্শন করেন কিনা জানতে চান ওই সাংবাদিক।
জবাবে মেয়র জানতে চান কোন রাস্তা খারাপ, তিনি ঠিক করে দেবেন।
পরে ওই সাংবাদিক মেয়রকে উদ্দেশ্য করে বলেন, সারা এলাকাতেই ভাঙা রাস্তা।
“আপনার কাউন্সিলর বলছেন তিনি কোনো বরাদ্দ পান না। ৫ বছর ধরে সেখানে কোনো উন্নয়ন কাজ হয়নি। বরাদ্দ চাইলেও আপনি দেন না।”
রাস্তা খারাপ কি না তা কাউন্সিলরের কাছে জানতে চান মেয়র।
১৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সালাহ উদ্দিন আহমেদ ঢালী বলেন, তার ওয়ার্ডের সব রাস্তারই বেহাল অবস্থা। কাঁঠালবাগান, কলাবাগান, ডলফিন রাস্তাসহ কয়েকটি রাস্তা খারাপ।
মেয়র ডিএসসিসির অঞ্চল-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ শফিউল্লাহর কাছে রাস্তা খারাপ থাকার কারণ জানতে চান।
এ সময় নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, কাউন্সিলর যেসব রাস্তার কথা বলেছেন, সেগুলোর দরপত্র প্রক্রিয়াধীন।
আগের প্রকল্পগুলোতে এই রাস্তাগুলোর চাহিদা দেননি কেন- তা মেয়র জানতে চাইলে প্রকৌশলী বলেন, “তখন রাস্তাগুলো ভালো ছিল।”
এ সময় মেয়র বলেন, মেগা প্রকল্পসহ ডিএসসিসির অনেকগুলো প্রকল্প রয়েছে। কেন রাস্তা খারাপ থাকবে?
এ প্রশ্নে নির্বাহী প্রকৌশলী চুপ থাকলে মেয়র তাকে উদ্দেশ করে উত্তেজিত স্বরে বলেন, “কথা বলেন। উত্তর আপনাকে দিতেই হবে।”
পরে ওই নির্বাহী প্রকৌশলীকে কারণ দর্শানোর নোটিস দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন মেয়র। জবাব সন্তোষজনক না হলে ওই প্রকৌশলীকে বরখাস্ত করতে অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আসাদুজ্জামানকে নির্দেশ দেন তিনি ।