স্থলবন্দরের উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়নের অবস্থা বেহাল। প্রকল্প শুরুর দুই বছর পেরিয়ে গেলেও জমি অধিগ্রহণ এখনো শেষ হয়নি। ইয়ার্ড, ওজন সেতু, গুদাম, কার্যালয়সহ অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ শুরু হয়নি। বর্তমানে স্থলবন্দর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের হাতে ছয়টি প্রকল্প আছে। এগুলোর মধ্যে পাঁচটি স্থলবন্দর উন্নয়ন প্রকল্প। অন্য প্রকল্পটি হলো স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের নিজস্ব ভবন নির্মাণ।
তিন-চার বছর মেয়াদের এসব প্রকল্পের মধ্যে গত জুলাই মাস পর্যন্ত পাঁচটির অগ্রগতি ২০ শতাংশের কম। শুধু একটিতে ৪০ শতাংশের মতো কাজ এগিয়েছে। প্রকল্পগুলো শেষ করতে পর্যাপ্ত বরাদ্দও দেওয়া হচ্ছে না। বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
এখনো জমি অধিগ্রহণের কাজ শেষ না হওয়ায় আগামী এক-দুই বছরের মধ্যে প্রকল্পগুলো শেষ করা কঠিন হবে বলে মনে করছেন স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। ভারতের সঙ্গে সড়কপথে ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণের জন্য বিলোনিয়া, ধানুয়া-কামালপুর, বাল্লা, গোবড়াকুল-কড়ইতলি এবং শেওলা, রামগড়, ভোমরা স্থলবন্দর উন্নয়নের প্রকল্প নেওয়া হয়।
দেশজুড়ে ২৪টি স্থলবন্দর থাকলেও পূর্ণাঙ্গ স্থলবন্দর হিসেবে ১২টির কার্যক্রম চালু আছে। পর্যাপ্ত অবকাঠামো না থাকায় বাকিগুলোর কার্যক্রম চালু করা সম্ভব হচ্ছে না।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (উন্নয়ন) হাবিবুর রহমান বলেন, উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর জন্য জমি অধিগ্রহণের কাজ চলছে। নানা জটিলতায় জমি অধিগ্রহণ শেষ না হওয়ায় অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণের কাজ শুরু করা যাচ্ছে না। তাই আগামী দু-এক বছরের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করা কঠিন হবে। তখন প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধির বিকল্প নেই।
ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য বৃদ্ধির জন্য এসব স্থলবন্দরের অবকাঠামো উন্নয়নের বিকল্প নেই বলে মনে করেন বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষক তৌফিকুল ইসলাম খান। তাঁর মতে, এসব স্থলবন্দর পূর্ণাঙ্গভাবে চালু করা গেলে একদিকে ওই অঞ্চলে কর্মসংস্থান হতো, অন্যদিকে দুই দেশের বাণিজ্য ঘাটতি কমত।
বিলোনিয়া
২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে শেষ করার লক্ষ্য নিয়ে ফেনীর পরশুরামের বিলোনিয়া স্থলবন্দর উন্নয়নে ৩৪ কোটি টাকার প্রকল্প নেওয়া হয়। প্রকল্পটির জমি অধিগ্রহণের পাশাপাশি ইয়ার্ড, ড্রেন, বিদ্যুৎ–সংযোগ, ওজন সেতু, কার্যালয়—এসব নির্মাণ করার কথা। কিন্তু গত এক বছরে জমি অধিগ্রহণই শেষ হয়নি। মাত্র সাড়ে ৭ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। বাস্তবায়ন হার মাত্র ২০ শতাংশ। আগামী জুন মাসের মধ্যে প্রকল্পটি শেষ করার কথা। অথচ চলতি অর্থবছরের এডিপিতে মাত্র সাড়ে ৬ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
ধানুয়া–কামালপুর
২০১৮ সালের জুলাই মাসে জামালপুরের বকশীগঞ্জের এই স্থলবন্দরের উন্নয়নে প্রকল্পটি নেওয়া হয়। প্রায় ৬০ কোটি টাকার এই প্রকল্পে গত এক বছরে মাত্র দুই লাখ টাকা খরচ হয়েছে। আগামী জুন মাসে প্রকল্পটি শেষ হওয়ার কথা। এই সময়ের মধ্যে জমি অধিগ্রহণ, ইয়ার্ড, ড্রেন, বিদ্যুৎ–সংযোগ, ওজন সেতু, কার্যালয় নির্মাণ করতে হবে। কিন্তু চলতি বছরে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে চাহিদার অর্ধেকেরও কম, মাত্র ২৫ কোটি টাকা।
বাল্লা
হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার বাল্লা স্থলবন্দরটির উন্নয়নের জন্য ২০১৭ সালের জুলাই মাসে তিন বছর মেয়াদি ৪৯ কোটি টাকার প্রকল্প চলমান আছে। গত দুই বছরে জমি অধিগ্রহণের কাজ শেষ হয়নি। এই সময়ে খরচ হয়েছে মাত্র সাত কোটি টাকা। বাস্তবায়ন হার মাত্র ১৪ শতাংশ। এই প্রকল্প আগামী জুন মাসে শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু চলতি বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) মাত্র ৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
গোবড়াকুল-কড়ইতলি
ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটের গোবড়াকুল-কড়ইতলি স্থলবন্দর উন্নয়ন প্রকল্পটির ১ শতাংশ অগ্রগতিও হয়নি গত দেড় বছরে। এই সময়ে মাত্র ৫ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। জমি অধিগ্রহণের কাজ কেবলই শুরু হয়েছে। ৬৭ কোটি টাকার এই প্রকল্পের মেয়াদ আছে মাত্র চার মাস। এই সময়ে জমি অধিগ্রহণসহ অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণ করা সম্ভব নয়। তা ছাড়া পর্যাপ্ত বরাদ্দও নেই। এ বছরের এডিপিতে মাত্র ১৩ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এর মানে, অগ্রগতি যে
হারে হচ্ছে, তাতে প্রকল্পটি শেষ করতে আরও কয়েক বছর লাগবে।
শেওলা, ভোমরা ও রামগড়
স্থলবন্দরের এই তিনটি অবকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি বেনাপোল স্থলবন্দরের নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদারের জন্য ২০১৭ সালের জুলাই মাসে ৬৩০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প নেওয়া হয়। প্রকল্পটির মেয়াদ ২০২১ সালের জুন মাস পর্যন্ত। গত জুলাই মাস পর্যন্ত সাড়ে ৩১ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। বাস্তবায়নের হার মাত্র ৪০ শতাংশ। এই তিনটি স্থলবন্দরেরও জমি অধিগ্রহণ চলছে। অবশ্য প্রকল্পটির জন্য ইতিমধ্যে পরামর্শক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। শেওলা স্থলবন্দরের উন্নয়নের জন্য ঠিকাদার নিয়োগে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। বাকি দুটি স্থলবন্দরের উন্নয়নে এখনো দরপত্রই আহ্বান করা হয়নি।
এদিকে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের নিজস্ব ভবন নির্মাণের জন্য ২০১৬ সালের জুলাই মাসে সাড়ে ৩৪ কোটি টাকার প্রকল্প নেওয়া হয়। গত তিন বছরে অগ্রগতি হলো, ভবন নির্মাণে ঠিকাদারকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পের অগ্রগতি মাত্র ১৪ শতাংশ। মেয়াদের বাকি পাঁচ মাসে পুরো ভবন নির্মাণ করা সম্ভব নয়।