টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের তখন পথচলা শুরু। তিন বছর ক্রিকেটের অভিজাত শ্রেণিতে পা রেখেছে। ১৯ টেস্টের অভিজ্ঞতা। ওই নিয়ে অস্ট্রেলিয়ান কোচ ডেভ হোয়াইটমোরের হাত ধরে পাকিস্তান সফরে যায় বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। টেস্ট খেলতে টাইগারদের প্রথম পাকিস্তান সফর। নিজেদের প্রথম তিন ম্যাচের টেস্ট সিরিজ। ২০০৩ সালের ওই সিরিজের শেষ টেস্ট নিয়ে খালেদ মাহমুদ-হাবিবুল বাশারদের আক্ষেপের শেষ নেই।
ঐতিহাসিক টেস্ট জয় থেকে এক ইঞ্চি দুরে ছিল বাংলাদেশ। কিন্তু ইনজামাম উল হকের এক সেঞ্চুরি হতাশ করে বাংলাদেশকে। পাকিস্তান ১ উইকেটের জয় তুলে নেয়। ওই হারে ড্রেসিংরুমে কান্নার গল্প শুনিয়েছেন খালেদ মাহমুদ সুজনরা। শেষ টেস্টে মাশরাফিকে না পাওয়ার আক্ষেপ করেছেন অধিনায়ক সুজন। মাশরাফির দীর্ঘ ক্যারিয়ারের কথা চিন্তা করে কোচ হোয়াইটমোর দলের সেরা পেসারকে খেলতে দেননি। মাশরাফি খেললে হয়তো গল্পটা অন্য রকম হতে পারতো। গল্প অন্য রকম হতে পারতো ওমর গুলকে মানকাড আউটটা যদি মোহাম্মদ রফিক করতেন। গুল শেষ ইনিংসে ৫ রান করলেও ৫০ বল খেলে ইনজামামের সঙ্গে ৫২ রানের জুটি গড়েন।
ওই সিরিজে দুর্দান্ত ফর্মে ছিলেন হাবিবুল বাশার। তিন টেস্টেই ফিফটি করেন তিনি। দ্বিতীয় টেস্টে ৯৭ করে আউট হন। ওই টেস্টে আশরাফুল খেলেন ৭৭ রানের ইনিংস। জাভেদ ওমর সেঞ্চুরি করেন। বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে ৩৬১ রান করে ৬৫ রানের লিড নেয়। কিন্তু দ্বিতীয় ইনিংসে ৯৪ রানে অলআউট হয়ে যায়। হারে ৯ উইকেটে। মুলতান টেস্টে টস জিতে ব্যাটিং নেয় বাংলাদেশ। হাবিবুল বাশার ৭৭ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলেন। বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে ২৮১ রান তোলে।
পাকিস্তানকে ১৭৫ রানে অলআউট করে ১০৬ রানের লিড নেয় বাংলাদেশ। কিন্তু দ্বিতীয় ইনিংসে আবার ব্যাটিং বিপর্যয়। থামে ১৫৪ রান করে। পাকিস্তানকে জয়ের জন্য ২৬১ রানের লক্ষ্য দেন হোয়াইটমোরের শিষ্যরা। চতুর্থ ইনিংসে একেবারে কম রান নয়। পাকিস্তান ওপেনার সামলাম বাট ৩৭ রান করে আউট হন। অন্য নয় ব্যাটসম্যানের কেউ বিশের ঘরে রান নিতে পারেননি। কিন্তু ইনজামাম খেলেন ১৩৮ রানের হার না মানা ইনিংস। স্বপ্ন খসে পড়ে বাংলাদেশের। ওই ম্যাচে খালেদ মাহমুদ দারুণ বোলিং করেন। দুই ইনিংসে নেন সাত উইকেট। মোহাম্মদ রফিক প্রথম ইনিংসে পাঁচ উইকেটসহ সাত উইকেট নেন।
ঐতিহাসিক হতে হতেও ম্যাচটি ইতিহাস গড়তে পারেনি। পরে বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট জিততে লেগে যায় ৩৩ ম্যাচ। দ্বিতীয় জয় পায় ৬০ টেস্টে এসে। বাংলাদেশের সেই মুলতান টেস্টের মতো চট্টগ্রাম টেস্টও আফগানদের কাছে হতাশার হতে যাচ্ছিল। হয়তো আরেকটা জয় পেতে দীর্ঘ আপেক্ষাও করতে হতো আফগানদেরও। বৃষ্টি বিঘ্নিত ম্যাচে জয়ের জন্য ইচ্ছ্বাস করছে আফগানরা। ড্রর হলে আফগান ক্রিকেটাররা হয়তো ড্রেসিংরুমে দুই ফোঁটা চোখের পানি ফেলতেন। ভক্তরা আক্ষেপ করতেন। ক্রিকেট আবেগ তাদেরও কম নয়। তবে চট্টগ্রামে তারা পেরেছেন। তুলে নিয়েছেন ২২৪ রানের দুর্দান্ত জয়।
পাকিস্তান সফরে কোন টেস্ট না জিতলেও দেশের এবং ক্রিকেট বিশ্বের মন জয় করেছিল বাশার-সুজনরা। বাংলাদেশ ভালো খেলেছে স্বীকার না করে উপায় ছিল না কারোর। চট্টগ্রাম টেস্টে আফগানিস্তানও ভালো খেলেছে। ভালো খেলেই জিতেছে তারা। ব্যাটে-বলে ভালো খেলার কৃতিত্ব তাদের দিতেই হবে। অস্ট্রেলিয়ার মতো নিজেদের তৃতীয় টেস্টে দ্বিতীয় জয় পাওয়া একমাত্র টেস্ট খেলুড়ে দেশ এখন আফগানরা। আর বৃষ্টিতে ম্যাচটা ড্র হলে হয়তো খাতা-কলমে মান বাঁচতো বাংলাদেশের। সুখ্যাতি কিছু হতো কি? বরং বৃষ্টিতে ম্যাচটা ড্র হলেও আফগানদের মহিমা কমতো না এতোটুকু।