ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সিঙ্গাপুর থেকে বেশ কয়েকটি অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির কর্মকর্তারা। তাঁরা বলছেন, ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে জনসচেতনা সৃষ্টি করতে হবে, টাস্কফোর্সের কার্যক্রম চালাতে হবে, নিয়মিত মশকনিধন কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে, ব্যক্তিগত দায়িত্ববোধ বাড়াতে হবে এবং আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে।
সিঙ্গাপুর থেকে ফিরে আজ বুধবার অভিজ্ঞতা অর্জনে বিষয়টি গণমাধ্যমের কাছে তুলে ধরা হয়। ডিএসসিসির নগর ভবনে এ নিয়ে একটি সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
৮ সেপ্টেম্বর মশাবাহিত বিভিন্ন সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণের অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য সিঙ্গাপুরে গিয়েছেন ডিএসসিসি মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন। মেয়রের সঙ্গে করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান এবং প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শরীফ আহমেদও সিঙ্গাপুরে গিয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শরীফ আহমেদ বলেন, ডেঙ্গু নজরদারির মধ্যে সিঙ্গাপুর মশা, ভাইরাস, রোগী, ক্লাস্টার এবং প্রকোপ পর্যালোচনা করে। সারা বছর নজরদারি করে, ঝুঁকি নির্ণয় করে, সংশ্লিষ্ট সংস্থার মধ্যে সমন্বয় করে এবং তথ্য–উপাত্ত বিশ্লেষণে প্রযুক্ত ব্যবহার করে। তারা মাঠপর্যায়ে তথ্য–উপাত্ত সংগ্রহ করে জিআইএস ম্যাপিং করে। যদি ১৫০ মিটার জায়গায় দুই সপ্তাহের মধ্যে দুই থেকে নয়টি ডেঙ্গু রোগী পাওয়া যায়, তাহলে সেটা হলুদ বিপৎসংকেত। একই পরিমাণের জায়গায় যদি ১০ বা বেশি ডেঙ্গু রোগী পাওয়া যায়, সেটা লাল বিপৎসংকেত। এই সংকেত অনুযায়ী তারা করণীয় নির্ধারণ করে।
শরীফ আহমেদ আরও বলেন, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে কীটতত্ত্ব নজরদারির বিষয়ে তারা প্রায় ১০ হাজার ব্লক হাউজিংয়ে প্রায় ৫০ হাজার গ্রাভিট্রাপ রাখে। এই ট্রাপগুলো ২০ থেকে ৩০ মিটার দূরে দূরে রাখে। যদি দুটি মশা ১০টি ট্রাপে পাওয়া যায়, তখন তারা এটাকে প্রকোপ বলে। পাশাপাশি আউট ব্রেক ম্যানেজমেন্টে তারা বাড়ি বাড়ি পরিদর্শন করে এবং লার্ভার সোর্স ধ্বংস করে, মানুষকে সতর্ক করে এবং স্বেচ্চাসেবীদের কাজে লাগায়। জনসম্পৃক্ততা বাড়ায় এবং ট্রাস্কফোর্স মাঠে নামে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে তাদের উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন টাস্কফোর্স রয়েছে। পরিবেশ নিয়ন্ত্রণের মধ্যে বাড়িঘর পরিচ্ছন্ন রাখা, নালা পরিষ্কার রাখা, জলাশয় পরিষ্কার রাখা ইত্যাদি কাজ করে।
এ ছাড়া ব্যক্তিগত প্রতিরোধে বাসায় দরজা, জানালায় নেট, রিপিলেন্ট ব্যবহার ও মশারি ব্যবহার করে। আর আইনগত ব্যবস্থা হিসেবে বাসাবাড়িতে যদি লার্ভা পাওয়া যায়, তবে ২০০ ডলার এবং নির্মাণাধীন ভবনে প্রথম পরিদর্শনে লার্ভা পাওয়া গেলে দুই হাজার ডলার, দ্বিতীয় পরিদর্শনে জার হাজার ডলার, তৃতীয় পরিদর্শনে পাঁচ হাজার ডলার এবং পরবর্তী সময়ে কোর্টে চালান করে দেয়। তারা বলেছে, আমাদের আইনগত ব্যবস্থা খুবই দুর্বল।
প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তার আগে মেয়র সাঈদ খোকন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এ বছর ডেঙ্গু শুধু ঢাকায় নয়, সারা দেশে ছড়িয়ে এক ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন গত ১ জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহকে লক্ষ্যমাত্র নির্ধারণ করে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের জন্য কাজ করে আসছে। আমরা আশা প্রকাশ করেছিলাম, সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হব। সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহ ইতিমধ্যে অতিক্রম করেছে।’
ডিএসসিসির মেয়রের দাবি, ডেঙ্গুর প্রকোপ ধীরে ধীরে কমতে শুরু করেছে। তিনি বলেন, এখন সেপ্টেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহ চলছে। ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব যে একেবারে শূন্যের কোঠায় চলে আসছে তা নয়। ঢাকায় এর প্রকোপ উল্লেখযোগ্যভাবে কমে এসেছে। কিন্তু সারা দেশে এখনো ডেঙ্গুর প্রকোপ রয়েছে। কিন্তু অনেকটাই নিয়ন্ত্রিত অবস্থার মধ্যে রয়েছে।
সাঈদ খোকন বলেন, এমন পরিস্থিতিতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ডেঙ্গু নির্মূল এবং এর স্থায়ী সমাধানের মধ্য দিয়ে ঢাকা শহরের মানুষের, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জীবনের নিরাপত্তা কীভাবে নিশ্চিত করা যায় এবং এই রোগের হাত থেকে কীভাবে রক্ষা পাওয়া যায়, সে জন্য একটি প্রকল্প গ্রহণের মধ্য দিয়ে এগিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। পাঁচ বছর মেয়াদি এ প্রকল্পের ডিপিপি প্রণয়নের কাজ চলছে।