ঢাকার মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের অন্যতম পরিচালক লোকমান হোসেন ভূঁইয়া ক্যাসিনো থেকে প্রতিদিন ৭০ হাজার টাকা করে নিতেন এবং অস্ট্রেলিয়া ও বাংলাদেশের কয়েকটি ব্যাংকে তার প্রায় ৪১ কোটি টাকা জমা আছে বলে তথ্য দিয়েছে র্যাব।
মদের বোতলসহ গ্রেপ্তার হওয়ার পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে লোকমান এ তথ্য দিয়েছেন বলে করে র্যাব -২ অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ জানিয়েছেন।
মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের ডিরেক্টর ইন চার্জ লোকমান বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডেরও (বিসিবি) পরিচালক। গত রোববার মতিঝিলের ঐতিহ্যবাহী এই ক্লাবে অভিযান চালিয়ে দুটো রুলেট টেবিল, নয়টি বোর্ড, বিপুল পরিমাণ কার্ড, ১১টি ওয়্যারলেস সেট ও ১০টি বিভিন্ন ধরনের চাকু পাওয়ার কথা জানানো হয় পুলিশের পক্ষ থেকে।
( লোকমান হোসেন ভূঁইয়া )
ঢাকার বিভিন্ন ক্লাবে অবৈধভাবে ক্যাসিনো পরিচালনার সঙ্গে ক্ষমতাসীন দলের কয়েকজন নেতার সম্পৃক্ততার তথ্য এসেছে র্যাবের তদন্তে। ইতোমধ্যে তাদের কয়েকজন গ্রেপ্তারও হয়েছেন। আর লোকমান দাবি করে আসছিলেন, ‘রাজনৈতিক চাপের’ মুখে তিনি জুয়ার জন্য ক্লাবের ঘর ভাড়া দিতে বাধ্য হয়েছিলেন।
র্যাব কর্মকর্তারা বলছেন, মোহামেডান ক্লাবে লোকমানের ছিল ‘একচ্ছত্র আধিপত্য’। তিনিই ক্লাবের ঘরগুলো দেড় বছর আগে ক্যাসিনোর জন্য ভাড়া দিয়েছিলেন। আর মোহামেডান ক্লাবের ওই ক্যাসিনোটি চালাতেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) কাউন্সিলর এ কে এম মোমিনুল হক ওরফে সাঈদ কমিশনার, যিনি ইতোমধ্যে দেশের বাইরে চলে গেছেন।
বুধবার মধ্যরাতে তেজগাঁওয়ের মনিপুরীপাড়ার বাসা থেকে লোকমানকে আটক করে র্যাব-২ কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। সকালে র্যাবের পক্ষ থেকে বলা হয়, বাসায় ‘অনুমোদনবিহীন পাঁচ বোতল বিদেশি মদ’ পাওয়ায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
র্যাব কর্মকর্তা আশিক বিল্লাহ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গত প্রায় দেড় বছর ধরে লোকমান প্রতিদিন ৫০ হাজার টাকা করে পাচ্ছিলেন ক্যাসিনোর আয় থেকে। মাস দুয়েক আগে তা ২০ হাজার টাকা বাড়িয়ে ৭০ হাজার টাকা করা হয়। মাসে তার আসতো ২১ লাখ টাকা।”
লোকমানকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, “এইচএসবিসি ব্যাংকে তার এক কোটি টাকার এফডিআর আছে। অস্ট্রেলিয়ার এএনজেড ও কমনওয়েলথ ব্যাংক ছাড়াও দেশের কয়েকটি ব্যাংকে তার গচ্ছিত টাকার পরিমাণ প্রায় ৪১ কোটি টাকা ।”
লোকমানের এক ছেলে অস্ট্রেলিয়ায় লেখাপড়া করে জানিয়ে এই র্যাব কর্মকর্তা বলেন, “লোকমান যখন অস্ট্রেলিয়ায় যান, তখন মোটা অংকের টাকা নিয়ে যান। ছেলেকে নিয়মিত অস্ট্রেলিয়ার ওই দুটি ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা পাঠান।”
র্যাবের ধারণা, প্রতিদিন যে ৭০ হাজার টাকার কথা লোকমান বলেছেন, তার বাইরেও জুয়ার আড্ডা থেকে তার আরও টাকা আসতো। এর একটি বড় অংশ তিনে দেশের বাইরে পাঠাতেন।
লোকমানকে বৃহস্পতিবার দুপুরে তেজগাঁও থানায় হস্তান্তর করে মাদক আইনে একটি মামলা করা হয়েছে জানিয়ে র্যাব কর্মকর্তা আশিক বলেন, “তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারলে ক্লাবভিত্তিক ক্যাসিনো ঘিরে আরও তথ্য পাওয়া যেতে পরে।”