বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান হারপার কলিন্স থেকে গতকাল বুধবার বেরিয়েছে ডেমি মুরের আত্মকথা ‘ইনসাইড আউট’। এখানে তিনি জীবনের সব গোপন আর প্রকাশ্য ঘটনা ও অনুভবকে বানিয়েছেন ‘খোলা বই’। যে কেউ বইটির পাতা উল্টিয়ে পড়ে ফেলতে পারেন ডেমি মুরকে। আর তাঁর সব অকপট সত্যিকে।
আর দশটা সাধারণ দিনের মতোই নিজের ঘরে ঢুকেছে ১৫ বছরের মেয়েটি। সেখানে তার জন্য ‘অপেক্ষা’ করছিলেন মায়ের একজন পরিচিত। ওই লোকটির কাছেই মাত্র ৫০০ ডলারের বিনিময়ে কিশোরী ডেমি মুরকে বিক্রি করে দেন মা ভার্জিনিয়া। ওই দিন লোকটি ধর্ষণ করেছিল কিশোরী ডেমি মুরকে। অথচ এ ঘটনার মাত্র তিন বছর আগে যখন ভার্জিনিয়া আত্মহত্যা করতে গিয়েছিলেন, ১২ বছরের ছোট্ট মুরই সেদিন গলায় আঙুল ঢুকিয়ে বের করে এনেছিলেন ঘুমের ওষুধ।
৫৬ বছর বয়সের অভিনেত্রী নিজের স্মৃতিকথায় লিখেছেন, ‘আমার সেসব কথা মনে পড়ে। নিজের ছোট্ট আঙুলগুলো মায়ের গলায় ঢুকিয়ে দিয়ে ট্যাবলেটগুলো বের করে এনেছিলাম সেদিন। মা চেয়েছিলেন সেগুলো গিলে ফেলতে।’ এরপরও বারবার নিজেকে শেষ করে দিতে চেয়েছেন ভার্জিনিয়া। ডেমি লিখেছেন, ‘প্রথম যেদিন মা আত্মহত্যার চেষ্টা করেন, আমার ছোটবেলা সেখানেই শেষ হয়ে যায়।’
হলিউড তারকা টম ক্রুজ, জ্যাক নিকলসন আর ডেমি মুর। মূলত এই তিনজনই এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন ১৯৯২ সালে মুক্তি পাওয়া ‘আ ফিউ গুড মেন’কে। যিনি ছবিটি দেখেছেন, তিনি লেফটেন্যান্ট কমান্ডার জো অ্যান গ্যালোয়েকে মনে রাখতে বাধ্য। ডেমি মুরের অভিনয় সেদিন বড় পর্দায় ব্যাপক প্রশংসিত হয়। ২৮০ কোটি টাকা খরচ করে বানানো লিগ্যাল ড্রামা ধাঁচের ছবিটি বক্স অফিস থেকে তুলে আনে ২ হাজার কোটি টাকার বেশি!
এই অপ্রত্যাশিত সাফল্য ডেমি মুরকে উপহার দেয় একটা বিশাল মই। যে মই বেয়ে ডেমি মুর তুঙ্গস্পর্শী জনপ্রিয়তার শীর্ষে পৌঁছে যান। ডেমি মুরকে গত শতকের নব্বইয়ের দশকের হলিউডের সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক পাওয়া অভিনেত্রী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে ‘আ ফিউ গুড মেন’। এই ছবির শুটিংয়ের আগে তাঁকে দীর্ঘদিন কঠোর অনুশীলন করতে হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর জজ অ্যাডভোকেট জেনারেল দলের লেফটেন্যান্ট কমান্ডারের শরীরে নিজেকে ফিট করা তো আর সহজ কথা নয়।
ডেমি মুর তাঁর বইয়ে আরও জানিয়েছেন, ‘আ ফিউ গুড মেন’ ছবির প্রশিক্ষণের সময় তিনি নাকি ব্যায়ামের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়েন। মিলিটারি পোশাকে নিজেকে ফিট দেখানোর জন্য পাগল হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। শরীরচর্চা থামাতেই চাইতেন না। পরবর্তী কয়েক বছর শরীরচর্চার প্রতি তাঁর এই আসক্তি ছিল।
ডেমি দিনের বেশির ভাগ সময়ই শরীরচর্চা করতেন। ওজন কমাতে কমাতে অনেক কমে যায়। তবু শরীরচর্চা থামাতে পারেননি। এখান থেকে খাদ্যাভ্যাসে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। পরবর্তী সময়ে ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়ে দীর্ঘদিন চিকিৎসা করে স্বাভাবিক জীবনে ফেরেন মুর।
তখন ২০১২ সাল। তৃতীয় স্বামী অ্যাস্টন কুচারের সঙ্গে ডিভোর্সের এক বছর আগের ঘটনা। অবশ্য এর আগেই ১৫ বছরের ছোট অ্যাস্টন কুচারের সঙ্গে প্রেমের সময় একবার গর্ভপাত হয়েছিল ডেমি মুরের। কুচার অন্য নারীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। ওই সময় একেবারে ভেঙে পড়েন তিনি।
চরম মাদকাসক্ত হয়ে পড়েন। ওজনও বেড়ে যায়। মেয়েরা তাঁর সঙ্গে কথা বলা বন্ধ করে দেন। এর মধ্যে একবার অতিরিক্ত মাদক সেবনের ফলে এক পার্টিতে জ্ঞান হারান। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে। শেষে পুনর্বাসন কেন্দ্র থেকে সুস্থ হয়ে ফেরেন ডেমি।