বাংলাদেশের গ্যাস ত্রিপুরায় যাবে না, বরং আমদানি করা এলপিজি রপ্তানি করা হবে এবং তাতে দেশেরও লাভ হবে বলে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক ভারতে ত্রিপুরায় এলপিজি রপ্তানি নিয়ে যে চুক্তি হয়েছে, তা নিয়ে অনেকের বিভ্রান্তির প্রেক্ষাপটে জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের কর্তাব্যক্তিরা একথা বলছেন।
গত শনিবার নয়া দিল্লিতে চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের পর এলপিজি রপ্তানির বিষয়টি আসার পরই নানা জল্পনা শুরু হয় যে, বাংলাদেশের গ্যাস সঙ্কটের মধ্যে ভারতে কেন রপ্তানি করা হবে।
বিবিসি বাংলায় ‘বাংলাদেশ থেকে ভারতে যাচ্ছে তরল গ্যাস’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশ করলে জল্পনা আরও বাড়ে। পরে তথ্যগত ভুলের কথা উল্লেখ করে বিবিসির সংবাদ সংশোধন করে করা হয় ‘প্রাকৃতিক গ্যাস নয়, বাংলাদেশ থেকে এলপিজি যাবে ভারতে’।
মঙ্গলবার বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু বিষয়টি স্পষ্ট করে বলেন, “বাংলাদেশের কোনও গ্যাস ভারতে রপ্তানি হবে না। বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা বিদেশ থেকে এলপিজি আমদানি করে তা ভারতে রপ্তানি করবে।”
নিজস্ব গ্যাস দিয়ে অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। বিদেশ থেকে আমদানি করেও চাহিদা মেটানো যাচ্ছে না।
পেট্রোবাংলার হিসাবে তিন অক্টোবরে হিসাবে দেশে মোট গ্যাস উৎপাদন হয়েছে ৩ হাজার ১৮৪ মিলিয়ন ঘনফুট। এরমধ্যে এলএনজি আমদানি করা হয়েছে ৫৬৫ মিলিয়ন ঘনফুট।
এছাড়া বেসরকারি খাতের কয়েকটি কোম্পানি এলপিজি আমদানি করে তা বাজারজাত করছে।
দেশের এই চাহিদা ও জোগানের বিশাল ব্যবধানের মধ্যে বাংলাদেশের গ্যাস ভারতে রপ্তানির কোনো সুযোগ নেই, বলছেন জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা।
তিনি বলেন, ভারতে উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ত্রিপুরাতে এলপিজি পৌঁছতে সড়ক পথে ১৫০০ কিলোমিটারের মতো পথ পাড়ি দিতে হবে। আর বাংলাদেশ থেকে সেখানে স্বল্প পথ পাড়ি দিয়েই পৌঁছানো সম্ভব।
“এই চুক্তির ফলে ভারত যেমন তার বিশাল দূরত্বের খরচ থেকে বাঁচবে। আবার বিদেশ থেকে এনে বোতলজাত করে গ্যাস রপ্তানির ফলে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা যেমন লাভবান হবেন, তেমনি কর্মসংস্থান বৃদ্ধি ও পরিবহন খাতে ব্যস্ততায় এখানে অর্থনৈতিক চাঞ্চল্যও বাড়বে।”
চুক্তি অনুযায়ী, ভারতের ত্রিপুরার বিশালগড়ে গ্যাস যাবে মোংলা বন্দর থেকে। মোংলা বন্দর থেকে সড়কপথে বিশালগড়ের দূরত্ব সোয়া তিনশ কিলোমিটারের মতো।
নসরুল হামিদ বলেন, “দুই দেশের সরকারের মধ্যে চুক্তি হলেও বাংলাদেশের বেসরকারি খাতের ব্যবসায়ীরা বিদেশ থেকে এলপিজি এনে তা পাঠাবে ত্রিপুরায়। এর ফলে আমরা ট্যাক্স, টোল পাব।”
প্রায় এক দশক আগে আবাসিকে পাইপলাইনের মাধ্যমে গ্যাস সংযোগ বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর অপেক্ষাকৃত বেশি পরিবেশসম্মত এলপিজির চাহিদা ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়।
বাংলাদেশে গ্যাস সঙ্কটের মধ্যে বেসরকারি খাতের বেশ কয়েকটি কোম্পানি বিদেশ থেকে আমদানি করে এলপিজি সরবরাহ করছে দেশে।
একটি ব্যবসায়ীক সেবা কোম্পানির হিসাবে, ডজনেরও বেশি এলপিজি কোম্পানি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বাংলাদেশে যেগুলোর প্রবৃদ্ধিও হচ্ছে উল্লেখযোগ্যহারে।
২০১৮ সালে এলপিজি কোম্পানিগুলো ১০ লাখ মেট্রিক টন চাহিদার বিপরীতে ছয় লাখ মেট্রিক টন এলপিজি সরবরাহ করেছে।