লিভার সিরোসিস একটি জটিল রোগ। সাধারণত লিভারের দীর্ঘমেয়াদি প্রদাহের কারণে এটি হয়। লিভারের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি প্রদাহ হলে একসময় লিভারের মধ্যে কিছু গুটি তৈরি হয় এবং লিভার তার কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। এ অবস্থাকে আমরা লিভার সিরোসিস বলে গণ্য করি।
লিভার সিরোসিস হওয়ার পেছনে মূল যে কারণ, সেটি হলো ভাইরাসজনিত। সাধারণত হেপাটাইটিস ‘বি’ আমাদের দেশে সবচেয়ে বেশি প্রচলিত। এ ছাড়া হেপাটাইটিস ‘সি’ এ দুটি ভাইরাস দিয়েই সাধারণত লিভার সিরোসিস হয়ে থাকে। লিভারের চর্বিজনিত কারণে বা ফ্যাটি লিভার যাদের থাকে, তাদের ক্ষেত্রে যদি দীর্ঘমেয়াদি প্রদাহ থাকে, তাহলেও লিভার সিরোসিস হতে পারে। মদপানজনিত কারণেও লিভার সিরোসিস হতে পারে। এ ছাড়া জন্মগত কিছু অসুখ আছে যেমন, হেমোক্লোম্যাটোসিস থেকেও লিভার সিরোসিস হয়ে থাকে।
সাধারণত আমাদের দেশে শিশু বয়সে হেপাটাইটিস ‘বি’-এ আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এতে ১০ থেকে ২০ বছর বয়সে অনেকে আক্রান্ত হয়। এ ছাড়া ৩০ থেকে ৪০ বছর বয়সেও ওই ব্যক্তিরা বেশি আক্রান্ত হন। হেপাটাইটিস ‘সি’ ভাইরাসটি সাধারণত কোনো রক্ত পরিসঞ্চালন বা অস্ত্রোপচারের কারণে হয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে দেখা গেছে, মাঝবয়সী লোকজনই এতে বেশি আক্রান্ত হন। তাদের ক্ষেত্রেও ১০ থেকে ১৫ বছর পরে লিভার সিরোসিস দেখা দেয়।
লিভার সিরোসিসে প্রাথমিকভাবে লক্ষণ অনেকের ক্ষেত্রে বোঝা যায় না। কোনো লক্ষণ ছাড়াই ধীরে ধীরে লিভারের মধ্যে প্রদাহ হতে থাকে। এটি বেড়ে গেলে পেটে অথবা পায়ে পানি চলে আসতে পারে। ক্ষুধামন্দা ও শারীরিক দুর্বলতা দেখা দিতে পারে। এ ছাড়া প্রাথমিকভাবে জন্ডিস দেখা দিতে পারে।
যেসব কারণে লিভার সিরোসিস হয় তা বর্জন করতে হবে। বিয়ের আগে স্ক্রিনিং করাতে হবে। টিকার মাধ্যমে মুক্ত থাকা সম্ভব। অ্যালকোহল থেকে অবশ্যই দূরে থাকতে হবে। প্রোটিনজাতীয় খাবার বেশি খাবেন। খাওয়ার সঙ্গে বাড়তি লবণ খাবেন না। কার্বোহাইড্রেট বা অন্যান্য খাবার স্বাভাবিকভাবে খাবেন। এ ছাড়া সমস্যার শুরুতেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ সেবন করুন, সুস্থ থাকুন।
ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল