আবরার ফাহাদ হত্যার পর বিভিন্ন দাবিতে বুয়েট শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে ইসলামী ছাত্রশিবির ও ছাত্রদল সক্রিয় রয়েছে বলে দাবি করেছেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।
রোববার দুপুরে সচিবালয়ে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেন, দাবি-দাওয়া মেনে নেওয়ার পর কেন আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা? সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্তৃপক্ষ ছাত্রদের সব দাবি মেনে নিয়েছে। অতীতে বাংলাদেশের ইতিহাসে এত তড়িৎগতিতে ব্যবস্থা হয়নি।
“আজকে আমরা লক্ষ্য করছি, ছাত্রদের আবেগ-অনুভূতিকে পুঁজি করে একটি মহল বিশেষত, বিএনপি ও তাদের মিত্ররা…বাংলাদেশে একটি মহল আছে, যারা দেশ অস্থিতিশীল হলে ফায়দা লুটতে পারে, তারা সবাই মিলে এই ঘটনাকে পুঁজি করে ছাত্রাঙ্গনকে অশান্ত রেখে, দেশকে অশান্ত করার দূরাভিসন্ধি থেকে ছাত্রদের মধ্যে তাদের এজেন্ট ঢুকিয়ে দিয়েছে।
“যে কারণে দাবি মেনে নেওয়ার পরও আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা আসছে। আমি বলতে চাই এই ঘটনাকে পুঁজি করে অনেকে ফায়দা লোটার চেষ্টা করছে।”
হাছান মাহমুদ বলেন, “সেখানে আমরা লক্ষ্য করছি শিবির সক্রিয় হয়েছে, ছাত্রদল সক্রিয় হয়েছে। স্বনামে নয়, বেনামে সক্রিয় হয়েছে। সাধারণ ছাত্রদের মধ্যে ঢুকে পড়েছে। তারা বিষয়টিকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে।
“আমি ছাত্রদের অনুরোধ জানাব কেউ যাতে এটিকে পুঁজি করে রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিল করতে না পারে সেজন্য সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।”
বুয়েট ছাত্রলীগের এক দল নেতাকর্মীর নির্যাতনে গত ৬ অক্টোবর প্রাণ হারান তড়িৎ কৌশল বিভাগের ছাত্র আবরার। এই হত্যাকাণ্ডের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে উত্তাল এখন বুয়েট।
১০ দফা দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শুক্রবার আলোচনায় বসে বুয়েটে রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ, আসামিদের বহিষ্কার করাসহ বিভিন্ন দাবি পূরণের আশ্বাস দেন বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম।
কিন্তু শিক্ষার্থীরা দাবি বাস্তবায়ন বাস্তবে না দেখা পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। তবে ভর্তি পরীক্ষার জন ১৩ ও ১৪ অক্টোবর আন্দোলন শিথিল রাখার কথা বলেছেন শিক্ষার্থীরা।
দাবি মেনে নেওয়ার পরও শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও প্রশ্ন তুলছেন।
আবরার হত্যাকাণ্ডকে নিন্দনীয়, ন্যাক্কারজনক ও নৃশংস উল্লেখ করে তিনি বলেন, “প্রথম থেকেই এই ঘটনার প্রতিবাদ করেছি। কেউ দাবি তোলার আগেই সরকার এ ব্যাপারে তড়িৎ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। এখন পর্যন্ত ১৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সেখানে ছাত্রদের যে আবেগ, সেটার সঙ্গে আমি সম্পূর্ণ একমত পোষণ করি। তাদের আবেগের সঙ্গে আমারও আবেগ জড়িত।
এর প্রতিবাদ হওয়া প্রয়োজন জানিয়ে তিনি বলেন, “আমি মনে করি এই ধরনের ঘটনা যাতে ভবিষ্যতে না হয় সেজন্য এই প্রতিবাদ অত্যন্ত সহায়ক ভূমিকা পালন করছে ও করবে।”
বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধে মৌলবাদী গোষ্ঠির তৎপরতা বাড়বে বলে মনে করেন কিনা, জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হাছান মাহমুদ বলেন, “সাময়িকভাবে যেটি বন্ধ করেছে, সেটি পরিস্থিতি উত্তরণে সহায়ক হবে বলে আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি।
“তবে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকলে সেটির নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। এটি একান্তই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ব্যাপার।”
দেশে ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করার দাবিকে অমূলক বলে মনে করেন তিনি।
“বাংলাদেশে সমস্ত অর্জনের সাথে ছাত্র সংগঠনগুলোর ভূমিকা জড়িয়ে আছে। আজকে যারা দেশে প্রতিষ্ঠিত নেতা, তাদের বেশিরভাগই এসেছেন ছাত্র রাজনীতি থেকে। ছাত্র রাজনীতি একেবারে বন্ধ করে দিলে…ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করার জন্য কেউ কেউ যে বিশেষজ্ঞ মত প্রকাশ করছেন তাদের আসলে উদ্দেশ্য ভালো না। সুতরাং সেটি হওয়া কোনোভাবেই সমীচিত হবে বলে মনে করি না।”
আরেক প্রশ্নে তিনি বলেন, “যারা বিরাজনীতিকরণের প্রক্রিয়ার সঙ্গে অতীতে যুক্ত ছিলেন, বিরাজনীতিকরণের জন্য যারা সচেষ্ট থাকেন, তাদের কারও কারও মুখ থেকে এই কথাগুলো আসছে আমরা লক্ষ্য করছি।”