প্রায় ৯৪ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে রাজধানীর নতুন দুটি রুটে মেট্রোরেল চালুর প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার।
প্রকল্পদুটির আওতায় বিমানবন্দর-কমলাপুর স্টেশন ও নতুনবাজার-পূর্বাচল ডিপো এবং হেমায়েতপুর-ভাটারা পথে দুটি মাস র্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি) লাইন স্থাপন করা হবে।
মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রকল্প দুটিতে চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান জানিয়েছেন ।
৫২ হাজার ৫৬১ কোটি টাকা ব্যয়ে দেশের সবচেয়ে বড় যোগাযোগ অবকাঠামো প্রকল্প এমআরটি-১ এর আওতায় বিমানবন্দর থেকে কমলাপুল স্টেশন এবং নতুন বাজার থেকে পূর্বাচল ডিপো পর্যন্ত ৩১ দশমিক ২৪ কিলোমিটার এমআরটি লাইন নির্মাণ করা হবে।
অন্যদিকে ৪১ হাজার ২৩৮ কোটি ৫৪ লাখ টাকা ব্যয়ে এমআরটি-৫ নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় হেমায়েতপুর থেকে আমিনবাজার-গাবতলী-মিরপুর-১, মিরপুর ১০-কচুক্ষেত-বনানী-গুলশান ২-নতুনবাজার হয়ে ভাটারা পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার লাইন নির্মাণ করা হবে।
দুই গণপরিবহণ প্রকল্পে মোট ব্যয় হবে প্রায় ৯৩ হাজার ৮০০ কোটি টাকা, যা প্রধানত জাপানের আর্থিক সহায়তায় হচ্ছে। দুটি প্রকল্পই বাস্তবায়ন করবে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)। প্রথমটি ২০২৬ সালের মধ্যে ও দ্বিতীয়টি ২০২৮ সালের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।বাস্তবায়নাধীন যোগাযোগ অবকাঠামো হিসেবে এখন দেশের সবচেয়ে বড় প্রকল্প হচ্ছে পদ্মা বহুমুখী সেতু। কয়েক দফা বেড়ে এর সর্বশেষ ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা।
তবে দেশের সবচেয়ে বড় অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, যার ব্যয় প্রায় এক লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা।
এমআরটি-১ নির্মাণ প্রকল্পের ব্যয় ৫২ হাজার ৫৬১ কোটি টাকার মধ্যে জাপান সরকার দেবে ৩৯ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা, বাকি ১৩ হাজার ১১১ কোটি টাকার যোগান সরকার তহবিল থেকে দেবে।
এমআরটি-৫ প্রকল্পের ৪১ হাজার ২৩৮ কোটি টাকার মধ্যে ২৯ হাজার ১১৭ কোটি টাকা দেবে জাপান। বাকিটা সরকার যোগান দেবে।পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, এমআরটি-১ দেশের পরিবহন খাতের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় প্রকল্প। ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, এ প্রকল্পের প্রস্তাবিত ব্যয় থেকে অর্থ বাঁচবে এবং কাজও মেয়াদের আগেই শেষ হবে।
একনেকের বৈঠকের কার্যপত্রে দেখা যায়, এমআরটি-১ প্রকল্পটি বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ১৬ দশমিক ২১ কিলোমিটার আন্ডারগ্রাউন্ড এবং কুড়িল থেকে পূর্বাচল ডিপো পর্যন্ত ১১ দশমিক ৩৬ কিলোমিটার এলিভেটেড বা উড়াল সেতু তৈরি করা হবে।
এছাড়া নতুন বাজার থেকে কুড়িল পর্যন্ত ৩ দশমিক ৬৫ কিলোমিটার আন্ডারগ্রাউন্ড ট্রানজিশন লাইনসহ ৩১ দশমিক ২৪ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণ করা হবে।এই মেট্রোরেলের ১২টি স্টেশন থাকবে মাটির নিচে এবং ৭টি থাকবে উড়াল সেতুর ওপর। এটি বাস্তবায়নে বিভিন্ন ক্ষেত্রে পরামর্শক ব্যয় হবে ১ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা।
এমআরটি-৫ প্রকল্পের আওতায় সাড়ে ১৩ কিলোমিটার হবে পাতাল রেল; সাড়ে ৬ কিলোমিটার হবে উড়াল সেতু। এ রুটের মোট ১৪টি স্টেশন হবে, যার ৯টি পাতাল, আর ৫টি হবে এলিভেটেড।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, মঙ্গলবারের একনেক সভায় এই দুই মেগা প্রকল্পসহ মোট ১ লাখ ২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ১০টি উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ৩০ হাজার ৪৬৬ কোটি টাকা, প্রকল্প সহায়তা ৬৯ হাজার ৪৩ কোটি টাকা এবং সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন থেকে প্রায় ৫১৬ কোটি টাকা যোগান দেওয়া হবে।
বৈঠকে অনুমোদিত প্রকল্পগুলো হচ্ছে-
>> এক হাজার ৪৮৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ফেনী-নোয়াখালী জাতীয় মহাসড়কের বেগমগঞ্জ থেকে সোনাপুর পর্যন্ত ৪-লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্প।
>> ৪২১ কোটি টাকা বয়ে ডোমার-চিলাহাটি-ডাউলাগঞ্জ (জেড-৫৭০৬), ডোমার (বোড়াগাড়ী)-জলঢাকা (ভাদুরদরগাহ) (জেড-৫৭০৪) এবং জলঢাকা-ভাদুরদরগাহ-ডিমলা (জেড-৫৭০৩) জেলা মহাসড়ক যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ প্রকল্প।
>> ৭৩১ কোটি ৩২ লাখ টাকা ব্যয়ে কিশোরগঞ্জ-করিমগঞ্জ-চামড়াঘাট জেলা মহাসড়ক যথাযথমানে উন্নীতকরণসহ ছয়না-যশোদল-দৌদ্দশত বাজার সংযোগ সড়ক নির্মাণ প্রকল্প।
>> একহাজার ৭১৯ কোটি টাকা ব্যয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প।
>> ঢাকার মিরপুর পাইকপাড়ায় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য বহুতল আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ প্রকল্প। এর ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৮৮ কোটি ৪৬ লাখ টাকা।
>> ১২৯ কোটি ৪১ লাখ টাকা ব্যয়ে ঢাকার আজিমপুরে বিচারকদের জন্য বহুতল আবাসিক ভবন নির্মাণ প্রকল্প।
>> ৫৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে সেচ ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন প্রকল্প।
>> ৭০ কোটি টাকা ব্যয়ে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব নিরসনে সিলেট বন বিভাগে পুনঃবনায়ন ও অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প।