যুবলীগ চেয়ারম্যানের মত একই পরিণতি হল ক্যাসিনোকাণ্ডে নাম আসা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোল্লা মো. আবু কাওসারের।
তাকেও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা অব্যাহতি দিয়েছেন বলে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন।
বুধবার ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের একটি বিশেষ বর্ধিত সভায় তিনি বলেন, “স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতিকেও তার পদ থেকে নেত্রী অব্যাহতি দিয়েছেন। আমি তার সঙ্গে কথা বলেছি, বিষয়টি তাকে জানিয়েছি।”
ঢাকার ওয়ান্ডারার্স ক্লাবে ক্যাসিনোর কারবারের সঙ্গে যুবলীগ নেতা কাউন্সিলর এ কে এম মমিনুল হক ওরফে সাঈদের সঙ্গে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা মোল্লা কাওসারেরও নাম এসেছে সংবাদমাধ্যমে।
গত ১৮ সেপ্টেম্বর মতিঝিলের ওই ক্লাবে অভিযান চালিয়ে মদ, নগদ টাকা এবং ক্যাসিনোর সরঞ্জাম জব্দ করে মোল্লা কাওসার ছিলেন এ ক্লাবের সভাপতি।
যুবলীগ নেতা হিসেবে পরিচয় দিয়ে ঠিকাদারি ব্যবসা চালিয়ে আসা জি কে শামীমের সঙ্গেও সখ্যতা ছিল মোল্লা কাওসারের।
এনবিআরের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেল ইতোমধ্যে কাওসার ও তার পরিবারের সদস্যদের ব্যাংক হিসাব জব্দেরও নির্দেশ দিয়েছে।
বুধবার যোগাযোগ করা হলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি শুধু বলেন, “হ্যাঁ, আমাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।” এটুকু বলেই তিনি ফোন কেটে দেন।
মোল্লা মো. আবু কাওছারকে সভাপতি এবং পঙ্কজ দেবনাথকে সাধারণ সম্পাদক করে সর্বশেষ ২০১২ সালে স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটি হয়েছিল। মেয়াদ পেরিয়ে গেলেও ওই কমিটিই কাজ চালিয়ে যাচ্ছিল।
ঢাকার বিভিন্ন ক্লাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে ক্যাসিনো চালানোর বিষয়টি ধরা পড়ার পর তাতে যুবলীগ নেতাদের সম্পৃক্ততার তথ্য বেরিয়ে আসে গত মাসের মাঝামাঝি সময়ে।
এর সঙ্গে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও দখলদারিত্বের অভিযোগ ওঠে আসে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের অনেক নেতার বিরুদ্ধে।
যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী শুরুতে এই অভিযানের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুললেও পরে সুর নরম করেন। তার বিরুদ্ধেও অনিয়ম, দুর্নীতি ও ক্যাসিনো সংশ্লিষ্ট যুবলীগ নেতাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার অভিযোগ ওঠে।
এ নিয়ে আলোচনার মধ্যে গত রোববার গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে যুবলীগের সভাপতিমণ্ডলীর বৈঠকে ওমর ফারুককে যুবলীগের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
প্রধানমন্ত্রী সেদিনও বলেন, অন্যায়কারীকে অবশ্যই শাস্তি পেতে হবে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান চলবে এবং তাতে কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।
ক্যাসিনোকাণ্ডে খড়গ নেমে আসার পর অক্টোবরের দ্বিতীয় সপ্তাহে যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ চারটি সহযোগী সংগঠনের সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হয় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে।
সে অনুযায়ী আগামী ১৬ নভেম্বর স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলন হওয়ার কথা। তার আগে ১১ ও ১২ নভেম্বর হবে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের সম্মেলন। তার আগেই দায়িত্ব থেকে বাদ পড়লেন সভাপতি মোল্লা কাওসার।
বুধবার ধানমণ্ডির হোয়াইট হলে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভায় সবাইকে সতর্ক করে ওবায়দুল কাদের বলেন, আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারাও নজড়দারিতে আছেন।
“নিজের ঘরের লোকদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার সৎ সাহস দেখিয়ে এই দেশে শাসক হিসেবে পচাত্তর পরবর্তী সময়ে শেখ হাসিনাই কেবল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এটা অন্য কোনো সরকার করতে পারেনি।
“নিজের ঘরের মধ্য থেকে তিনি শুদ্ধি অভিযান শুরু করেছেন। কঠিন কিছু সিদ্ধান্ত তিনি নিয়েছেন।… টেন্ডারবাজির সঙ্গে, চাঁদাবাজির সঙ্গে, মাদকের সঙ্গে যারা যুক্ত থাকবে, তাদের কেউ ছাড় পাবে না।”
বিতর্কিত লোকদের দল থেকে বের করে দেওয়ার কথা বলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, “আমি আপনাদের কাছে অনুরোধ করব, পকেট ভারি করার জন্য নিজের সমর্থক বাড়ানোর জন্য বিতর্কিত কোনো লোককে দলে ভেড়াবেন না। এই বিতর্কিত লোকরা দলে অনুপ্রবেশ করে দলের ক্ষতি করে, দেশের ক্ষতি করে, দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করে। কাজেই আমরা বলি, দুষ্ট গরুর চেয়ে শূন্য গোয়াল ভালো।
“আমি আপনাদেরও বলব, যদি কোনোভাবে বিতর্কিত ব্যক্তি, অনুপ্রবেশকারী ঢুকে থাকে, তাহলে তাদের বের করে দিন। বিতর্কিত খারাপ লোকের আওয়ামী লীগে দরকার নেই। আওয়ামী লীগের লোকের অভাব নেই।”