সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেশের মোবাইল ফোন অপারেটরগুলোর অবাধে ভিডিও কনটেন্ট প্রচার বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে মন্তব্য করেছেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।
বৃহস্পতিবার কাকরাইলের প্রেস ইন্সটিটিউটে ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টার আয়োজিত এক গোলটেবিল আলোচনায় এ বিষয়ে কথা তিনি।
হাছান মাহমুদ বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের জন্য টেলিভিশনের বিজ্ঞাপন কমে যাচ্ছে। নানা কনটেন্ট তৈরি করে ফেইসবুকে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে।
“ইতোমধ্যে ফেইসবুকের লোকজন বাংলাদেশে এসেছিল। আমাদের সঙ্গে কথা হয়েছে। আমাদের দেশে যে সকল মোবাইল ফোন কোম্পানি আছে তাদেরকে শুধুমাত্র কথা বলার জন্য লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলোকে ভিডিও কন্টেন্ট তৈরি করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়নি।”
মন্ত্রী বলেন, “শৃঙ্খলা আনতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। এগুলো বন্ধের ব্যাপারে কাজ করে যাচ্ছে সরকার।”
সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ভুয়া পরিচয়ে গুজব ছড়ানো ঠেকাতে ফেইসবুক অ্যাকাউন্ট খোলার ক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহারের বাধ্যবাধকতা দেওয়া যায় কি না- সে বিষয়েও আলোচনা চলছে বলে জানান মন্ত্রী।
তিনি বলেন, “এক সময় যে কেউ ইচ্ছে করলে ১০০টি সিম কিনতে পারত, কিন্তু এখন জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ সিম কিনতে পারে। ফেইসবুকের ক্ষেত্রেও তাই, যে কেউ ইচ্ছে করলেই অ্যাকাউন্ট খুলতে পারে।
“কেউ যাতে ফেইক অ্যাকাউন্ট খুলতে না পারে এবং বাচ্চাদের অ্যাকাউন্ট খুলতেও যাতে বাবা-মায়ের পরিচয়পত্র দিতে হয়, এ নিয়ে ফেইসবুকের সঙ্গে আমাদের কথা চলছে। এই ব্যবস্থা নিতে আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি।”
ইলেকট্রনিক মিডিয়া কর্মীদের সুরক্ষার জন্য আইন দরকার বলেও মত দেন তথ্যমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “সম্প্রচার আইন আমরা বহু আগে আইন মন্ত্রণালয়ে দিয়েছি। মাসে অন্তত দু’বার খবর রাখছি, কিন্তু এখনও পাস হচ্ছে না। আশা করি শিগগিরই পাস হয়ে চলে আসবে।”
ওই আইন হলে টেলিভিশনসহ সম্প্রচার মাধ্যমের কর্মীদের চাকরির সুরক্ষার ব্যবস্থা হবে বলে জানান হাছান মাহমুদ।
তিনি বলেন, “ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার জন্য অবশ্যই একটি আইনি কাঠামো দরকার। সে অনুযায়ী সবাইকে চাকরিতে প্রবেশের সময় নিয়োগপত্র দেওয়া দরকার।”
টেলিভিশনে বিদেশি সিরিয়াল চালানোর ক্ষেত্রেও সরকারের অনুমতির কথা বলেন হাছান মাহমুদ।
তিনি বলেন, “অনেকে বিদেশি সিরিয়াল ডাব করে সিরিয়াল প্রচার করছে। ৫০ পর্ব, ১০০ পর্ব চালাতে শুধু চিঠি দিলেই চলবে না। এখন থেকে মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন লাগবে।”
ইংরেজি দৈনিক ডেইলি অবজারভারের সম্পাদক ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, “ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হবে। এর জন্য ওয়েজবোর্ড গঠন করতে হবে।”
টেলিভিশন মিডিয়ায় সরকারের অর্থায়নের দাবি জানিয়ে একাত্তর টেলিভিশনের প্রধান সম্পাদক মোজাম্মেল বাবু বলেন, “টিভি মিডিয়াগুলো সরকারের প্রচার করে যাচ্ছে। যখন সারা দেশে নানা অপপ্রচার, গুজব চলে তখন মেইনস্ট্রিম চ্যানেলগুলো সরকারের হয়ে কাজ করে।
”বলতে গেলে গুজবের বিপরীতে সঠিক খবর-সংবাদ প্রচারে কাজ করে যাচ্ছে, যা সরকারের কাজে লাগছে। সেই জন্য মেইনস্ট্রিম টিভি চ্যানেলগুলোতে মোট খরচের ২৫ শতাংশ অর্থায়ন সরকার করলে আমাদের জন্য ভালো হয়। এটা আমাদের ন্যায্য দাবি।”
গাজী টেলিভিশন ও সারাবাংলা ডটনেটের প্রধান সম্পাদক সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা বলেন, সারা দেশ উন্নয়নে ভাসলেও গণমাধ্যমে উন্নয়ন নেই, এ বিষয়ে সরকারকে ভাবতে হবে।
বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মোল্লা জালাল, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সোহেল হায়দার চৌধুরী, এটিএন নিউজের প্রধান নির্বাহী সম্পাদক মুন্নী সাহাও সভায় বক্তব্য দেন।