দীর্ঘ আলোচনা, অপেক্ষার পর অবশেষে নেপাল থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ আমদানির প্রক্রিয়া বাস্তবায়িত হতে যাচ্ছে। আমদানির প্রতি ইউনিটের বিদ্যুতের দামের ব্যাপারে সম্মত হয়েছে দুই পক্ষ। পাশাপাশি ক্রয়চুক্তিসহ অন্যান্য কাজ যত দ্রুত সম্ভব সম্পন্ন করে বিদ্যুৎকন্দ্র নির্মাণ শুরু এবং ২০২৬ সালের মধ্যে ঐ বিদ্যুৎ বাংলাদেশের গ্রিডে যুক্ত করার বিষয়েও নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।
হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত নেপালে কম খরচে জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। সার্ক এনার্জি কো-অপারেশন এগ্রিমেন্টের আওতায় দেশটি থেকে বিদ্যুৎ আমদানিতে ২০১৪ সাল থেকে চেষ্টা করছে বাংলাদেশ। এ ক্ষেত্রে ঐ দেশেরই প্রকল্পে বিনিয়োগ করে উৎপাদিত বিদ্যুতের একটি অংশ বাংলাদেশে আনার পরিকল্পনা করেছে সরকার।
গত সপ্তাহে নেপালের জিএমআর পাওয়ারের একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে ঢাকায় কয়েক দফায় বৈঠক করেন বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) কর্মকর্তারা। সভা সূত্র জানায়, নেপাল থেকে প্রতিদিন ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানিতে উভয় পক্ষ রাজি হয়েছে। এ লক্ষ্যে যৌথ বিনিয়োগে কোম্পানি গঠনেরও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। ঐ বিদ্যুৎ প্রতি ইউনিট ছয় দশমিক ৮৫ সেন্টে (প্রায় পৌনে ছয় টাকা) কিনবে বাংলাদেশ। ‘নো ইলেক্ট্রিসিটি নো পেমেন্ট’ হিসেবে এই বিদ্যুৎ কেনা হবে। কোনো ক্যাপাসিটি চার্জও থাকবে না। অর্থাত্ বিদ্যুত্ কেনা না হলে বাংলাদেশকে কোনো বিল পরিশোধ করতে হবে না। আর যতটুকু বিদ্যুৎ কেনা হবে ততটুকুরই পরিশোধ করতে হবে।
পিডিবির এক কর্মকর্তা বলেন, নেপাল থেকে ভারত হয়ে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ আমদানি করা হবে। এর মধ্য দিয়ে বহুপাক্ষিক সম্পর্ক তৈরি হবে। আগামীতে ভুটান থেকেও আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে। তিনি আরো বলেন, নেপাল থেকে আমদানিতব্য বিদ্যুতের ফলে আমাদের সান্ধ্যকালীন বিদ্যুত্ আমদানি বাড়িয়ে পিকিং পাওয়ার প্ল্যান্টের উৎপাদন কমিয়ে লোকসানও কমানো যাবে।
বিদ্যুত্ আমদানি প্রক্রিয়া সম্পর্কে তিনি বলেন, জিএমআর পিডিবির সঙ্গে বিদ্যুৎ বিক্রি চুক্তি (পিপিএ) করার পর নির্মাণ শুরু করবে। কেন্দ্রটি নির্মাণ শেষ হতে প্রায় ছয় বছর সময় প্রয়োজন হবে। ভারতকে সঞ্চালন চার্জ দিয়ে ঐ বিদ্যুৎ বাংলাদেশে আসবে। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের কয়েকটি ইন্টারকানেকশন (আন্তঃসীমান্ত বিদ্যুত্ সংযোগ) নিয়ে আমাদের আলোচনা চলছে। আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই এর অনেকগুলোই কার্যকর হয়ে যাবে বলে আশা করছি। এছাড়া ভারত থেকে আরো বিদ্যুৎ আমদানি এবং বিপরীতে ভারতে রপ্তানি নিয়েও আলোচনা চলছে।
বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্র জানায়, জিএমআর পাওয়ার করপোরেশন আপার কার্নালি জলবিদ্যুৎ প্রকল্পে ৯০০ মেগাওয়াটের একটি কেন্দ্র নির্মাণ করছে। সেটি থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ দেওয়া হবে বাংলাদেশকে। জিএমআর বাকি বিদ্যুৎ ভারতের তামিলনাড়ু সরকার কিনে নেবে।
বিদ্যুৎ বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, মূল্যহারসহ অন্যান্য বিষয়গুলো গুছিয়ে বিদ্যুৎ বিভাগ সরকারের অনুমোদন চাইবে। সরকারের ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি বিদ্যুৎ কেনার বিষয়ে অনুমোদন দেওয়ার পর চুক্তি সই হবে।