ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজ ক্যাম্পাসে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে নাইমুল আবরার রাহাতের মৃত্যুর ঘটনায় প্রথম আলো সম্পাদকের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন এই স্কুলছাত্রের বাবা মো. মুজিবুর রহমান।
গত শুক্রবার রাহাতের মৃত্যুর পর থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা করেছিলেন মুজিবুর। চার দিন পর বুধবার ঢাকার আদালতে গিয়ে অবহেলায় মৃত্যুর অভিযোগ এনে আলাদা মামলা করলেন তিনি।
ঢাকার চতুর্থ অতিরিক্ত মহানগর হাকিম মো. আমিনুল হক বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে রাহাতের লাশ কবর থেকে তুলে ময়নাতদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
সেই সঙ্গে রাহাতের মৃত্যুর পর যে অপমৃত্যু মামলাটি হয়েছে, তার সঙ্গে নতুন নালিশি মামলাটি এক সঙ্গে তদন্ত করে আগামী ১ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে মোহাম্মদপুর থানার ওসিকে নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
গত শুক্রবার রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজে যে অনুষ্ঠানে রাহাত বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যান, ওই অনুষ্ঠানের আয়োজক ছিল প্রথম আলোর কিশোর সাময়িকী কিশোর আলো। প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান কিশোর আলোরও প্রকাশক; কিশোর আলোর সম্পাদক হলেন আনিসুল হক।
শুক্রবার বিকালে মোহাম্মদপুরের ওই কলেজ ক্যাম্পাসে কিশোর আলোর একটি অনুষ্ঠান চলাকালে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয় নবম শ্রেণির ছাত্র রাহাত (১৫)। তাকে মহাখালীর ইউনিভার্সাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর তার মৃত্যু ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা।
সেদিন থানায় অপমৃত্যুর মামলার পর ময়নাতদন্ত ছাড়াই রাহাতের বাবা মুজিবুর ছেলের লাশ নিয়ে যান বলে মোহাম্মদপুর থানার ওসি জি জি বিশ্বাস জানিয়েছিলেন। পরে নোয়াখালীতে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে দাফন করা হয় রাহাতকে।
এদিকে বিদ্যুৎস্পষ্ট হওয়ার জন্য কিশোর আলো কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনাকে দায়ী করার পাশাপাশি কাছের এত হাসপাতাল থাকতে দূরের হাসপাতালে রাহাতকে নেওয়া এবং মৃত্যুর পরও অনুষ্ঠান চালিয়ে যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা ওঠে।
( নাঈমুল আবরার রাহাত )
সমালোচনার মুখে কিশোর আলো কর্তৃপক্ষ জানায়, ওই অনুষ্ঠানের অংশীদার ছিল ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, অনুষ্ঠানে তাদের একটি মেডিকেল ক্যাম্প ছিল, ওই ক্যাম্পের চিকিৎসকের পরামর্শেই রাহাতকে ইউনিভার্সেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছিল। আর রাহাতের মৃত্যুর খবর পাওয়ার আগেই অনুষ্ঠান শেষ হয়ে গিয়েছিল।
তবে এরপরও সমালোচনার পাশাপাশি ক্ষোভ-বিক্ষোভ চলতে থাকে, প্রথম আলো কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধনও হয়, বিষয়টি আলোচনায় ওঠে মন্ত্রিসভার বৈঠকেও।
রেসিডেনসিয়াল কর্তৃপক্ষ এই ঘটনার তদন্তে একটি কমিটি করেছে; পুলিশও কিশোর আলো সম্পাদক আনিসুল হকসহ বেশ কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে।
তার মধ্যেই ৩০৪ (ক) ধারা বা অবহেলার কারণে মৃত্যু সংঘটনের অভিযোগ এনে মামলা করলেন রাহাতের বাবা; যে ধারায় অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড।
মামলায় প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমানের নাম উল্লেখ করে, সেই সঙ্গে নাম উল্লেখ না করে কিশোর আলোর প্রকাশক ও ওই অনুষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনেন তিনি।
অভিযোগে বলা হয়, সঠিকভাবে বিদ্যুতের ব্যবস্থাপনা না করে এরকম অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে এবং এতে নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা করা হয়নি। ঘটনা ঘটার পর রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজ ক্যাম্পাসের উল্টো পাশের সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে রাহাতকে না নিয়ে উদ্দেশ্যমূলকভাবে মহাখালীর ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়।
বাদী বলেন, “কর্তৃপক্ষ আমাকে কিছু জানায়নি। তার বন্ধু ও সহপাঠীর মাধ্যমে ছেলের মৃত্যুর সংবাদ জেনেছি। অথচ আনুমানিক ৩টার সময় সে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়। ৪টা ১৫ মিনিটে ইউনিভার্সেলে ভর্তি করা হয়, ৪ টা ৫১ মিনিটে ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করে।”
মুজিবুর অভিযোগ করেছেন, “এ মৃত্যু শুধু একটি মর্মান্তিক দুর্ঘটনা হিসেবে মেনে নেওয়ার জন্য আমাকে চাপ প্রদান করা হয়। লাশের পোস্ট মর্টেম ছাড়া মোহাম্মদ থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।”
মুজিবুর দাবি করেছেন, তাকে ‘ভুল বুঝিয়ে’ ময়নাতদন্ত ছাড়া লাশ গ্রহণের জন্য মুচলেকা নেওয়া হয়েছিল।
বাদীর আইনজীবি মোহাম্মদ ওমর ফারুক আসিফ বলেন, “১ নভেম্বরের ওই মৃত্যুটি কোনো মর্মান্তিক দুর্ঘটনা বা অপমৃত্যু নয়। বরং আসামিদের চরম অবহেলা, অযত্ন, গাফিলাতি, অব্যবস্থাপনা ও চিকিৎসার অবহেলা এবং অসাবধনতার কারণে নাইমুল আবরার রাহাতের মৃত্যু হয়।”