সিরিজ কারো কাটলো দুর্দান্ত, সারা জীবন মনে রাখার মতো। কেউবা ছিলেন নিজের ছায়া হয়ে। চাইবেন, যত দ্রুত সম্ভব ভুলে যেতে। মাহমুদউল্লাহর চোখে কেমন ছিল সতীর্থদের পারফরম্যান্স? ভারতের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে বাংলাদেশের প্রাপ্তি, অপ্রাপ্তি নিয়ে নিজের মতো করে বললেন অধিনায়ক।
প্রথমবারের মতো ভারতে পূর্ণাঙ্গ সফরে এসেই সিরিজ জয়ের আশা জাগিয়েছিল বাংলাদেশ। শেষ পর্যন্ত পারেনি, হেরেছে ২-১ ব্যবধানে। তারপরও এই সিরিজে অনেক প্রাপ্তির জায়গা দেখেন মাহমুদউল্লাহ।
“তৃপ্তির জায়গা বলতে আমার মনে হয়, নাঈম ও আমিনুলের পারফরম্যান্স। আমাদের বোলিং ইউনিটের পারফরম্যান্স খুব ভালো ছিল। মুশফিকের ম্যাচ জেতানো পারফরম্যান্স ছিল। এগুলো ছিল ইতিবাচক।”
“আর অতৃপ্তি বলি-আমরা প্রথম ম্যাচ জিতেছি। অবশ্যই ভালো একটা মোমেন্টাম পেয়েছিলাম। যেটা আমরা সব সময় ফিল করি-এটা বাংলাদেশ দলের শক্তি। তারপর ওখান থেকে যখন সিরিজটা হারি, সেদিক থেকে কিছুটা হলেও হতাশাজনক।”
নাঈমের জন্য খারাপ লাগছে অধিনায়কের
খুব সাবলীল হয়তো ছিলেন না মোহাম্মদ নাঈম শেখ। কিন্তু তিন ম্যাচেই রান পেয়েছেন তরুণ এই ওপেনার। নিজের প্রথম আন্তর্জাতিক সিরিজে তিন ম্যাচে করেছেন ১৪৩ রান। প্রথম ম্যাচে ২৬, পরেরটিতে ৩৬। এবার খেললেন ৮১ রানের দুর্দান্ত ইনিংস। এরপরও জিতল না দল, হতাশা ছুঁয়ে যাচ্ছে অধিনায়ককে।
“এককথায় বললে, খুবই দৃষ্টিনন্দন ছিল ওর ইনিংসটা। আমার খারাপ লাগছে ও এত সুন্দর একটা ইনিংস খেলেছে, আমরা ফিনিশ করতে পারিনি। মিডল অর্ডারদের ব্যর্থতা ছিল। এই কারণে আমার হতাশাটা আরও বেশি। সুন্দর একটা ইনিংস খেলেছে, খুব ভালো ব্যাটিং করেছে। ওর জন্য হলেও আমরা যদি ভালো করে শেষ করতে পারতাম তাহলে ও অনেক ক্রেডিট পেত।”
আমিনুলের শুরুটা মনে রাখছেন, শেষটা নয়
স্পিনের বিপক্ষে দারুণ শক্তিশালী ভারতীয় লাইন আপের সামনে দাঁড়িয়ে দারুণ বোলিং করেছেন আমিনুল ইসলাম। এই তরুণ দেখিয়েছেন, দলে কেন একজন লেগ স্পিনার থাকা প্রয়োজন।
প্রথম ম্যাচে আমিনুল ২২ রানে নেন ২ উইকেট। পরেরটিতে রোহিতের বিস্ফোরক ইনিংসের মাঝেও ২৯ রান দিয়ে নেন দুটি। তৃতীয় ম্যাচে পারেননি ভালো করতে। ৩ ওভারে ২৯ রান দিয়ে ছিলেন উইকেটশূন্য। হাত থেকে ছুটেছে দুটি ক্যাচ। ২০ বছর বয়সী সতীর্থের শেষটা নয়, শুরুটা মনে রাখছেন মাহমুদউল্লাহ।
“আমিনুল নার্ভাস ছিল না। ও নতুন একটা ছেলে, হয়তোবা (ক্যাচ) ধরতে পারেনি। এগুলো খেলারই অংশ।”
আল আমিনে আস্থা মাহমুদউল্লাহর
সাড়ে তিন বছর পর দেশের হয়ে খেলতে নেমে আল আমিন হোসেন ছিলেন দুর্দান্ত। তিন ম্যাচেই নিজেকে উজাড় করে বোলিং করেছেন ডানহাতি এই পেসার। প্রথম ম্যাচে দিয়েছিলেন ২৭ রান, পরের ম্যাচে রোহিত ঝড়ের মাঝেও মাত্র ৩২। এবার ২২ রানে পেলেন ১ উইকেট।
সব মিলিয়ে তিন ম্যাচে মোটে ১ উইকেট। এই পরিসংখ্যান বোঝাতে পারছে না কতটা নিয়ন্ত্রিত বোলিং করেছেন আল আমিন। কতটা আঁটসাঁট আর সুশৃঙ্খল ছিলেন তিনি। অধিনায়ক তাকে দেখেন টি-টোয়েন্টিতে দেশের অন্যতম সেরা বোলার হিসেবে।
“আল আমিন অসাধারণ খেলেছে। আমার মনে হয়, ও আমাদের দেশের অন্যতম সেরা টি-টোয়েন্টি বোলার। ব্যক্তিগতভাবে আমি এটা অনুভব করি। ওর আন্তর্জাতিক ও ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ার দেখলে দেখা যাবে, সব সময় ধারাবাহিক পারফর্ম করেছে। সেদিক থেকে বিশ্বাস ছিল আল আমিন হয়তোবা ভালো করতে পারে।”
বিবর্ণ ‘চ্যাম্পিয়ন’ মুস্তাফিজের পাশে অধিনায়ক
আইপিএলে খেলার কারণে ভারতের উইকেট সম্পর্কে বেশ ভালো ধারণা আছে মুস্তাফিজুর রহমানের। অনেক ব্যাটসম্যান সম্পর্কেও বেশ জানাশোনা আছে। সাকিব আল হাসানের অনুপস্থিতিতে তার কাঁধে ছিল বোলিং আক্রমণের নেতৃত্ব। নিদারুণভাবে ব্যর্থ হয়েছেন বাঁহাতি এই পেসার।
প্রথম ম্যাচে ২ ওভারে ১৫ রান দিয়ে ছিলেন উইকেটশূন্য। পরের ম্যাচে অকাতরে রান বিলিয়ে ৩৫ রান দিয়ে আবার উইকেটশূন্য। শেষ ম্যাচে আরও খরুচে। ৪২ রান দিয়ে নেই কোনো উইকেট। তিন ম্যাচের সিরিজে কোনো উইকেট না পাওয়া পেসারের পাশে দাঁড়িয়েছেন অধিনায়ক।
“আমার মনে হয়, প্রতিটি ক্রিকেটারের জীবনে এই ধরনের সময় আসে যখন, পাঁচ-ছয়টা ম্যাচে দল যেভাবে চাচ্ছে হয়তোবা সেভাবে পারফর্ম করতে পারছে না। আমরা সবাই জানি যে, সে চ্যাম্পিয়ন বোলার। ওর কাছ থেকে দল অনেক বেশি প্রত্যাশা করে। অনেক সময় ও হয়তো চাহিদা অনুযায়ী পারফর্ম করতে পারেনি।”
“আমার মনে হয় না, এজন্য তাকে নতুন করে মূল্যায়ন করা উচিৎ। তাকে সাপোর্ট করা উচিৎ। যেভাবে ও কষ্ট করছে, কোচের সাথে কথা বলছে, আমার মনে হয়, তার আত্মবিশ্বাস ফিরে পেতে একটা ম্যাচই যথেষ্ট।”
ধার হারিয়ে ফেলা মুস্তাফিজকে বসানো যায় কি না-এমন প্রশ্নও উঠেছে। মুস্তাফিজকে বাদ দেওয়ার কথা এই মুহূর্তে ভাবছেন না মাহমুদউল্লাহ।
“ও কষ্ট করছে। ও বিষয়টি নিয়ে ভাবছে। এরকম না যে ওকে ব্রেক দেওয়া বা ড্রপ করা (প্রয়োজন)। আমি ব্যক্তিগতভাবে এটা মনে করি না। একজন চ্যাম্পিয়ন বোলারকে সব সময় সাপোর্ট করতে হবে। আমার কাছে মুস্তাফিজ ম্যাচ উইনিং বোলার। যখন সে পারফর্ম করবে বাংলাদেশ ম্যাচ জিতবে।”
“ধারাবাহিক না হলে যে খেলাতেই হবে এরকম কোনো ব্যাপার নেই। আমাদের টপ তিন চার জন বোলারের কথা যদি বলেন, অবশ্যই মনে হয় মুস্তাফিজকে রাখতে হবে। এজন্য আমাদের সাপোর্ট করা উচিৎ ওকে। আমরা সাপোর্ট করছি ও করব। কারণ আমরা ওর সামর্থ্য সম্পর্কে জানি।”
লিটন, সৌম্যর সামর্থ্যে আস্থা মাহমুদউল্লাহর
তামিম ইকবালের অনুপস্থিতিতে বাড়তি দায়িত্ব ছিল লিটন দাসের কাঁধে। সময়ের দাবি মেটাতে এই তরুণ পুরোপুরি ব্যর্থ। সৌম্য সরকার পারেননি ভালো শুরু বড় করতে। তৃতীয় ম্যাচে তো পান গোল্ডেন ডাক। আর সুযোগ তারা পাবেন?
“লিটন আর সৌম্যর ক্ষেত্রে যেটা, সৌম্য প্রথম দুটি ম্যাচে রান করেছে, ভালো ব্যাটিং করেছে। আর লিটনের সুযোগ ছিল, লিটন করতে পারেনি। তবে আশা করি, ভবিষ্যতে আরও অনেক ম্যাচ জেতাবে ওরা।”
“আমার কাছে মনে হয় না (ওদের একাদশে জায়গা পাওয়া) বাড়াবাড়ি। যখন কোনো খেলোয়াড়কে দলে নেবেন, সে পর্যাপ্ত সুযোগ পাওয়ার দাবি রাখে। নাঈম যেমন প্রতি ম্যাচে রান করেছে, আজকে ৮১ করেছে। ধারাবাহিক পারফরম্যান্স করেছে। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ধারাবাহিক পারফরম্যান্স করা সত্যিই কঠিন।”
“কারো সুযোগ পাওয়ার ব্যাপারটা আমাদের হাতে না। টিম ম্যানেজমেন্ট যা মনে করে, কার কখন কোন জায়গাটায় খেলা উচিত, সেটি তারা ঠিক করে। বিশেষ করে কারও যখন খারাপ সময় যাবে তখন বরং টিম ম্যানেজমেন্টের উচিত তাকে সাপোর্ট করা।”