বিএনপিকে নিয়ে সমালোচনামুখর তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদকে নিয়ে টিপ্পনি কেটেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বিএনপির আরও জ্যেষ্ঠ নেতারা দলত্যাগ করতে চলেছেন বলে তথ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের জবাবে বুধবার তিনি বলেন, “তথ্যমন্ত্রী মহোদয় প্রায়শই এই ধরনের কথা-বার্তা বলেন, সেগুলো তার কিছুটা সৃজনশীলতার আভাস পাওয়া যায় আর কি!
“বেশ নতুন নতুন গল্প তৈরি করেন তিনি। তথ্যমন্ত্রী মহোদয়ের যে সরকার আছে, তারা গোয়েবলসীয় প্রচারের মধ্য দিয়ে সরকারকে টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করছে।”
আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হাছান মাহমুদের ওই বক্তব্যের পাল্টা দাবি করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে যাওয়ার মতো অবস্থা এখন নেই। বরং আওয়ামী লীগ থেকেই বিএনপিতে আসার অবস্থা তৈরি হয়েছে।
“আওয়ামী লীগ এখন প্রমাণ করেছে যে, তারা রাজনৈতিক দল হিসেবে দেউলিয়া রাজনৈতিক দল, একটা ব্যাংক্রাপট পলিটিক্যাল পার্টি।”
সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এম মোরশেদ খানের বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যানের পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মির্জা ফখরুল বলেন, “বিএনপির সিনিয়র নেতা পদত্যাগ করছেন- এটা আপনাদের মাধ্যমে জানতে পারছি। আমি এখনও জানি না।”
‘লন্ডন থেকে তারেক রহমান দল চালাচ্ছেন বলেই নেতারা চলে যাচ্ছেন’ বলে তথ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, “এই ধরনের কথা বলতে তারা অভ্যস্ত। তারা নিজেদেরই ঘর সামাল দিতে পারছে না।
“প্রতিদিন তাদের যুব লীগের সম্মেলনে, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলনে মিটিংয়ের মধ্যে তারা পরস্পর মারামারি করছেন, ভাঙাভাঙি করছেন- এটা আমরা প্রতিদিন পত্রিকায় দেখতে পারছি। তাদের যে পতন সেটাকে তারা ঢেকে রাখার জন্য অহেতুক মিথ্যা কথা বলছে।”
মোরশেদ খানের পদত্যাগ নিয়ে মঙ্গলবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।
তিনি বলেন, “বিএনপি থেকে যেভাবে তাদের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ দল ত্যাগ করে চলে যাচ্ছেন। এই ছেড়ে যাওয়ার লিস্টে আরও আছে। সেগুলো ভবিষ্যতে বিএনপি দেখতে পাবে।”
বিএনপি জনগণের পক্ষে ‘দাঁড়াতে পারেনি’ বলেই তাদের এই হাল হয়েছে বলে মন্তব্য করেন হাছান মাহমুদ।
নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির নবনির্বাচিত কমিটির সভাপতি আবুল কালাম ও সাধারণ সম্পাদক এটিএম কামালের নেতৃত্বে নেতা-কর্মীদের নিয়ে বিএনপি মহাসচিব সকালে শেরে বাংলা নগরে দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের কবরে ফুল দেন। পরে তিনি সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন।
‘রাঙ্গাঁ জনগণকে অপমান করেছে’
গণতন্ত্রের আন্দোলনে শহীদ নূর হোসেনকে ‘মাদকাসক্ত’ বলায় জাতীয় পার্টির মহাসচিব মসিউর রহমান রাঁঙ্গার কঠোর সমালোচনা করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, “অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, যে স্বাধীনতা যুদ্ধের চেতনা নিয়ে আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম, পরবর্তীকালে গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছি, স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে লড়াই করেছি, সেই স্বৈরাচারকে সঙ্গে নিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করেছিল এবং ভোট ডাকাতির লড়াইয়ের সঙ্গে নিয়ে তাদেরকে তারা সংসদে নিয়ে এসছে।
“তাদেরই (স্বৈরাচারের দল) মহাসচিব (মশিউর রহমান রাঙ্গাঁ) সেই গণতন্ত্রকে অত্যন্ত ন্যক্কারজনকভাবে গত কয়েক দিন আগে আক্রমণ করেছেন। আমাদের প্রিয় শহীদ নূর হোসেন, যিনি স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের প্রতীক ছিলেন, তার বিরুদ্ধে কিছু কথা বলেছিলেন যে কথাগুলো সম্পূর্ণভাবে রাজনৈতিক শিষ্টাচারবর্হিভূত, গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে পুরোপুরিভাবে অপমান করা, বাংলাদেশের মানুষকে, জনগনকে অপমান করা।
“আমরা এর তীব্র নিন্দা জানিয়েছি। আমরা মনে করি, এটা প্রকাশ্যে ও পার্লামেন্টে সব জায়গায় তার ক্ষমা চাওয়া উচিত এই কথাগুলো বলার জন্য।”
খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলন নিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “আমরা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এই আন্দোলনকে আরও বেগবান করব, আরও তীব্র করব।”