যোগাযোগের পাশাপাশি আবহাওয়া, সামরিক বা নিরাপত্তাসংক্রান্ত কাজে ব্যবহারের সুযোগ রেখেই বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ উৎক্ষেপণের পরিকল্পনা এগিয়ে নিচ্ছে সরকার।
বাংলাদেশ কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেডের (বিসিএসসিএল) চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদ বৃহস্পতিবার এক মতবিনিময় সভায় এ কথা জানান।
তিনি বলেন, দেশের প্রথম বাণিজ্যিক স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ একটি ‘জিওস্টেশনারি কমিউনিকেশন’ স্যাটেলাইট হওয়ায় কেবল যোগাযোগের কাজে লাগছে।
”আমরা দ্বিতীয় স্যাটেলাইটের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। এই স্যাটেলাইট হবে হাইব্রিড স্যাটেলাইট। স্যাটেলাইটটিকে যোগাযোগ, আবহাওয়া, সামরিক বা নিরাপত্তাসংক্রান্ত কাজে ব্যবহার করার পরিকল্পনা আমরা করছি।”
বাংলামোটরে বিসিএসসিএল-এর সভাকক্ষে টেলিকম রিপোর্টার্স নেটওয়ার্ক বাংলাদেশের (টিআরএনবি) সঙ্গে এক মতবিনিময় অনুষ্ঠানে কথা বলছিলেন শাহজাহান মাহমুদ।
ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার গত সেপ্টেম্বরে প্রস্তাবিত বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ এর জন্য বিশেষজ্ঞ পরামর্শের ভিত্তিতে পরিকল্পনা নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছিলেন।
এ বিষয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে বিসিএসসিএলের চেয়ারম্যান, “দ্বিতীয় স্যাটেলাইটের জন্য দ্রুতই কনসালটেন্ট নিয়োগ দেব। কোন কোন ক্ষেত্রে চাহিদা আছে, সেগুলো তারা জরিপ করে জানাবে।
তিন থেকে চার মাসের মধ্যে কনসালটেন্টের প্রতিবেদন পাওয়া যাবে এবং নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী সরকারের এ মেয়াদেই বাংলাদেশের পরবর্তী স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করা সম্ভব হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, এবার কোন দেশ থেকে স্যাটেলাইট কেনা হবে সে সিদ্ধান্ত সরকারই নেবে।
বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট সিস্টেমের নকশা তৈরির জন্য ২০১২ সালের মার্চে প্রকল্পের মূল পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ পায় যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ‘স্পেস পার্টনারশিপ ইন্টারন্যাশনাল’। এরপর এক হাজার ৯৫১ কোটি ৭৫ লাখ ৩৪ হাজার টাকার চুক্তিতে স্যাটেলাইট সিস্টেম কেনা হয় ফ্রান্সের কোম্পানি তালিস এলিনিয়া স্পেস থেকে।
২০১৮ সালের ১২ মে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার কেইপ কেনাভেরালে কেনেডি স্পেস সেন্টারের লঞ্চ প্যাড থেকে বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট মহাকাশে সফল যাত্রা করে। আর এর মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বের ৫৭তম দেশ হিসেবে নিজস্ব স্যাটেলাইটের স্বত্বাধিকারী ক্লাবে নাম লেখায়।
উৎক্ষেপণে ছয় মাসের মাথায় ২০১৮ সালের নভেম্বরে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণও সম্পূর্ণভাবে বুঝে পায় বাংলাদেশ।
গত ১ অক্টোবর বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১-এর মাধ্যমে বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলোর বাণিজ্যিক সম্প্রচারের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটের কার্যক্রম তুলে ধরে বিসিএসসিএল চেয়ারম্যান বলেন, ”অন্য দেশ এক-দেড় বছরের মধ্যে বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করতে পারে না। কিন্তু আমরা এক বছরের মধ্যে কাজে লাগাতে শুরু করেছি। আমাদের স্যাটেলাইট আশেপাশের ১৫টি দেশে সেবা দিতে সক্ষম।”
প্রথম তিন মাস টেলিভিশনগুলোকে ‘ফ্রি’ সেবা দেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “২ অক্টোবর থেকে বিল ধরা শুরু করছি। টেলিভিশনগুলোর জন্য এমন ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, যাতে কোনো কারণে একটি সংযোগ কাটা পড়লেও বিকল্প পথ থাকে।”
প্রত্যন্ত অঞ্চলে টেলিমেডিসিন ও ই-এডুকেশনে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের ব্যবহার করা হচ্ছে বলেও সাংবাদিকদের জানান শাহজাহান মাহমুদ।
মতবিনিময় সভায় বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন বিসিএসসিএলের সহকারী মহাব্যবস্থাপক বখতিয়ার আহমেদ।
অন্যদের মধ্যে বিসিএসসিএলের মহাব্যবস্থাপক শাহরিয়ার আহমেদ চৌধুরী, টিআরএনবি সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল আনোয়ার শিপু সভায় উপস্থিত ছিলেন।