সপ্তাহব্যাপী আয়কর মেলার দ্বিতীয় দিনে ৪৭৯ কোটি টাকার আয়কর আদায় হয়েছে বলে জানিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড।
শুক্রবার ছুটির দিনে রাজধানীর বেইলি রোডের অফিসার্স ক্লাবে স্ব-প্রণোদিত করদাতাদের ঢল নামে। তাদের মধ্যে নারী করদাতার উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মত।
সকাল ৯টা থেকে মেলার কার্যক্রম শুরু হলেও ভিড়ের কথা মাথায় রেখে করদাতারা মেলা প্রাঙ্গণে আসা শুরু করেন সকাল ৮টা থেকেই। বেলা ১১টার দিকে অফিসার্স ক্লাব ও আশপাশের এলাকা যেন জনারণ্যে পরিণত হয়।
শৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে মেলা কর্তৃপক্ষ কয়েকটি কিউতে করদাতাদের ঢোকার ব্যবস্থা করে। বেলা ১২টার দিকে সেখানে তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না।
এনবিআরের জ্যেষ্ঠ তথ্য কর্মকর্তা সৈয়দ এ মোমেন বলেন, “বাইরে হাজার হাজার মানুষকে সুন্দরভাবে ম্যানেজ করতে আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী সার্বিক সহযোগিতা করেছে। আর ভেতরে আমরা অতিরিক্ত জনবল দিয়ে দ্রুত চাপ কমানোর ব্যবস্থা করেছি।”
বেলা ১টায় জুমার নামাজের জন্য এক ঘণ্টার বিরতি দেওয়া হয়। বেলা ২টা থেকে আবার আয়কর রিটার্ন দাখিল কার্যক্রম শুরু হলে করদাতাদের চাপ অনেকটা সহনীয় পর্য়ায়ে চলে আসে।
মেলায় আয়কর বিবরণী দাখিল করতে আসা ইঞ্জিনিয়ার রামিছা নাওয়ার বলেন, তিনি বেসরকারি একটি ফার্মে চাকরি করেন। প্রথমবার কর দিতে মেলায় এসেছেন।
“মেলায় কর কর্মকর্তাদের সহযোগিতা পাওয়া যায় শুনে এসেছি। মেলাতেই আয়কর রিটার্ন দাখিল করলাম। দীর্ঘ লাইন দেখে প্রথম ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। তবে লাইন সচল থাকায় বেশিক্ষণ লাগেনি।”
ব্যাংকার মাহবুবুর রহমান আয়কর বিবরণী দাখিল করতে এসেছিলেন মিরপুর থেকে। আগে তিনি এনবিআরের সার্কেল অফিসে গিয়ে রিটার্ন দাখিল করতেন। কিন্তু ছুটির দিন বলে মেলায় চলে এসেছেন। কর কর্মকর্তাদের সহযোগিতা ভালো লেগেছে বলেও জানালেন।
প্রতিবন্ধী হয়েও থেমে নেই সালমা মাহবুব ও মোহাম্মদ ইফতেখার মাহমুদ; নিজেদের প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশি সিস্টেমস চেঞ্জ অ্যাডভোকেসি নেটওয়ার্ক’ বা বি-স্ক্যানের কর দিতে চলে এসেছেন মেলায়। ছবি: মাহমুদ জামান অভি
এনবিআর চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া মেলা চলাকালে সাংবাদিকদের বলেন, এবারের মেলায় যারা কর দিচ্ছেন, তাদের ৩০ শতাংশই নারী বলে তার মনে হয়েছে।জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এক সংবাদ বিজ্ঞাপ্ততে জানায়, শুক্রবার মেলা থেকে মোট ৪৭৯ কোটি ১ লক্ষ ২৮ হাজার ৭৯৭ টাকার আয়কর আদায় হয়েছে।
মেলার প্রথম দিন বৃহস্পতিবারে আদায় হয়েছিল ৩২৩ কোটি ১৯ লাখ টাকার আয়কর। দুই দিনে মোট আদায় হয়েছে ৮০২ কোটি ২০ লাখ ২২ হাজার ৬৮২ টাকা।
শুক্রবার মোট ২ লাখ ৬৮ হাজার ৬৮৪ জন আয়কর বিষয়ক সেবা নিয়েছেন মেলায় এসে। এর মধ্যে ৭৩ হাজার ৮৪৩ জন রিটার্ন দাখিল করেছেন। নতুন ই-টিআইএন নিবন্ধন করেছেন ৩ হাজার ৬০২ জন।
এ বছর দেশের আটটি বিভাগ, ৫৬টি জেলা, ৫৬ টি উপজেলাসহ মোট ১২০টি স্পটে আয়কর মেলা হচ্ছে।
এবারের আয়কর মেলার পরিধি গত বছরের তুলনায় বৃদ্ধি করে আয়কর রিটার্ন দাখিলের পাশাপাশি ই-টিআইন গ্রহণ, ই-পেমেন্ট, ই-ফাইলিং এবং ই-পেমেন্টের ব্যবস্থা করা হয়েছে। করদাতারা রকেট, নগদ, বিকাশ ও শিওর ক্যাশের মাধ্যমেও আয়কর জমা দিতে পারছেন।
চলতি অর্থবছরে সরকারের খরচ মেটাতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মাধ্যমে কর হিসেবে ৩ লাখ ২৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা আদায় করার লক্ষ্য ধরা হয়েছে বাজেটে।
এর মধ্যে আয়কর ও মুনাফার উপর কর থেকে ১ লাখ ১৩ হাজার ৯১২ কোটি টাকা রাজস্ব পাওয়ার আশা করা হচ্ছে, বিদায়ী সংশোধিত বাজেটে এর পরিমাণ ছিল ৯৫ হাজার ১৬৭ কোটি টাকা।
প্রতি বছরই মেলার পরিধি ও আয়কর আহরণ বাড়ছে জানিয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান সাংবাদিকদের বলেন, “মেলার প্রথম দিনে যে সংগ্রহ হয়েছে, তা গত বছরের মেলার প্রথম দিনের তুলনায় ৪২ শতাংশ বেশি।”
কর দাতাদের হয়রানির অভিযোগও এখন ‘অনেক কমে এসেছে’ বলে দাবি করেন মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া। শনিবারও ছুটির দিন হওয়ায় ভালো সাড়া পড়বে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
অডিট ফার্মগুলোকে সতর্ক করে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, “আমাদের দেশে যে অ্যাকাউন্টিং ফার্মগুলো আছে, তাদের সঙ্গে বসে একটা স্বচ্ছ পরিবেশ তৈরি করতে চাই। তারাও যেন দায়বদ্ধতার মধ্যে আসে।
“যদি দেখা যায়, তারা কোনো প্রতিষ্ঠানের আয়কর রিটার্ন অথবা এগুলোতে ভুল করে বা অ্যাকচুয়াল লাভ-ক্ষতি বের হয়ে না আসে এবং সেটি ধরা পড়ে, তাহলে সেইসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার মতো আইন এবং বিধিমালা তৈরি করে ফেলব।”
জাতীয় আয়কর মেলার সমন্বয়ক কালিপদ হালদারও এ সময় উপস্থিত ছিলেন।