পেঁয়াজের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির এই সময়ে ঢাকায় সরকারি বিপণন সংস্থা টিসিবির সুলভ মূল্যের পেঁয়াজ বিক্রির ট্রাকে হুমড়ি খেয়ে পড়েছেন ক্রেতারা।
এই ভিড় সামলে সুষ্ঠুভাবে ক্রেতাদের হাতে পেঁয়াজ তুলে দেওয়ার জন্য পূর্ব প্রস্তুতি না থাকায় বিক্রির পুরো সময়জুড়েই হাতাহাতি ও লাইন ভাঙার হিড়িক ছিল পেঁয়াজের ট্রাকগুলোকে কেন্দ্র করে।
রোববার রাজধানীর মিরপুরের কচুক্ষেত, মিরপুর ১০ নম্বর, ফার্মগেইটের খামারবাড়ি এলাকায় এই চিত্র দেখা গেছে।
এসব এলাকার মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিশৃঙ্খলা দেখা গেছে কচুক্ষেত এলাকায়। সেখানে সকাল ৯টা থেকে লাইনে দাঁড়িয়েও শেষ পর্যন্ত পেঁয়াজ না পাওয়ার অভিযোগ করেছেন অনেক ক্রেতা। কেউ কেউকে দেখা গেছে লাইনে না দাঁড়িয়ে পাশ থেকে পেঁয়াজ সংগ্রহ করতে।
বেলা ১২টার দিকে কচুক্ষেত গিয়ে দেখা যায়, ট্রাকের কাছে জটলা বেঁধে আছেন নারী ও পুরুষ ক্রেতারা। জটলার কয়েক গজ দূরেই দুটি সারিতে দাঁড়িয়ে আছেন কয়েকশ ক্রেতা। কিন্তু যারা লাইন ভেঙে সামনে এসে জটলায় ঢুকতে পারছেন, পেঁয়াজ কিনতে পেরেছেন কেবল তারাই।
স্থানীয় প্রভাবশালী লোকজনসহ পুলিশ সদস্যদের লাইনে না দাঁড়িয়ে ট্রাকের পাশ থেকে পেঁয়াজ কিনে নিতে দেখা গেছে। অনেকে একাধিকবারও পেঁয়াজ কিনেছেন।
গত সেপ্টেম্বরে পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাওয়ার পর থেকেই রাজধানীর ৩৫টি স্থানে প্রতি কেজি ৪৫ টাকা দরে পেঁয়াজ বিক্রি শুরু করে টিসিবি। শুরুর দিকে জনপ্রতি দুই কেজি করে পেঁয়াজ দেওয়া হলেও এখন দেওয়া হচ্ছে এক কেজি করে।
বিশৃঙ্খলা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে কচুক্ষেত এলাকায় বিপণনের দায়িত্বে থাকা একজন বলেন, “আমরা নিজেদের সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছি। লোকজন নিজেরাই ঝামেলা পাকিয়ে ফেলছে। আমরা চেষ্টা করছি যার হাত থেকে টাকা নিচ্ছি তাকে পেঁয়াজ বুঝিয়ে দিতে।”
পেঁয়াজ সংগ্রহ করতে যাওয়া নারীদের বেশি ভুগতে দেখা গেছে। বিপণনকারীরা বিশৃঙ্খলা দমন করতে না পেরে এক পর্যায়ে নারীদের পেঁয়াজ দেওয়া বন্ধ রাখেন।
এক পর্যায়ে সাথী আক্তার নামে একজন ক্রেতা লাফিয়ে ট্রাকের উপরে উঠে যান। তিনি অন্যান্য নারীদের লাইনে ফিরিয়ে আনতে চেষ্টা করেন প্রায় আধা ঘণ্টা সময় ধরে। এক পর্যায়ে ব্যর্থ হয়ে নেমে পড়েন।
সাথী বলেন, “যারা পেঁয়াজ নিয়ে এসেছে তারা তো জানত আজকে এমন বিশৃঙ্খলা হবে। তারা কেন এখানে শৃঙ্খলার ব্যবস্থা করল না? মানুষ নিজে থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকবে, এটা কীভাবে আশা করা যায়?”
ভিড়ের সুযোগে পুলিশসহ বিভিন্নজনকে নিয়ম ভেঙে পেঁয়াজ সংগ্রহ করতে দেখা যায়। তারা কেউই শৃঙ্খলা ফেরানোর চেষ্টা করেননি।
মিরপুর ১০ নম্বরে একজন ক্রেতা অভিযোগ করেন, বিপণনকারীরা ট্রাফিক পুলিশের একজন সার্জেন্টকে নিয়ম ভেঙে ৫ কেজি পেঁয়াজ দিয়েছেন। সেখানেও শৃঙ্খলা রক্ষার কোনো ব্যবস্থা রাখা হয়নি। এ নিয়ে ট্রাকসেলের কর্মীদের সঙ্গে কয়েকজন ক্রেতার দীর্ঘ সময় ধরে বচসা চলে।
বিশৃঙ্খলার বিষয়ে জানতে চাইলে টিসিবির মুখপাত্র হুমায়ুন কবির বলেন, “এই বিষয়টি আমরা মন্ত্রণালয়ের সমন্বয় সভায় তুলেছিলাম। সেখানে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশকে টিসিবির ট্রাক সেলের স্থানগুলো জানিয়ে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছিল। ৩৫টি স্থানে শৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত করার মতো লোক আমাদের নেই।”
বাজারে এখনও চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ। মুদি দোকানগুলোতে খুচরায় প্রতিকেজি ২১০ টাকা থেকে ২৪০ টাকার মধ্যে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে।