ভেদ-বুদ্ধি ও অহং ভুলে জীবনের কোনো এক বাঁকের মোহনায় মানব-উৎসবে সামিল হয়ে মানুষের জয়গানের আহ্বান ধ্বনিত হল নতুন মঞ্চনাটক ‘অরূপরতন’-এ।
শিল্পকলা একাডেমিতে আয়োজিত নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের ‘নতুনের উৎসব’ এ সোমবার সন্ধ্যায় মঞ্চস্থ হলো পরিসরের এই নাটকটি।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার ‘রাজা’ নাটক থেকে সংক্ষিপ্ত বিন্যাসে ‘অরূপরতন’ নাটকটি নতুন করে পুনর্লিখন করেছিলেন।
নাট্যকার সাইদুর রহমান লিপন বলেন, “এই পুনর্লিখনের মধ্য দিয়ে নাটকটির ব্যক্তির বিপরীতে সমষ্টি, বহু-বাহুল্যের বিপরীতে সাধারণ-নিরাভরনের কথা বলে, পরমাত্মার সন্ধানলাভে সাধারণের কীর্তনের কথা বলে। মূলত এই সহজিয়া ভাবনাই আমাদের নাটকের অভিষ্ট্য।”
রবীন্দ্রনাথের বাউল-দর্শন এই নাটকের ‘মূল প্রেরণা’ বলে উল্লেখ করেন তিনি।
“রবীন্দ্রনাথের বাউল আঙ্গিকের সুর ভাবনার সমন্বয়ে সাধনের প্রয়াস রয়েছে নাটকের সঙ্গীত প্রয়োগে।”
“রবীন্দ্রনাথের এ নাটকে যে সাম্য ও সম্প্রীতির ভাবনা রয়েছে, তারই একটা মিলিত রূপায়ন দেখতে চেয়েছি এই প্রযোজনায়।”
লিপন বলেন, নাটকের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হল উৎসব।
‘অরূপরতনের’ নির্দেশক বলেন, “আমাদের সামাজিক জীবনে উৎসব মানেই সম্প্রীতি ও মিলন, যা সর্বদা ক্ষমতার দুষ্টচক্রে পদ পরিচয়কে গৌণ-জ্ঞান করে সার্বজনীন সমাজতান্ত্রিক চৈতন্যকে আহ্বান করে।ভেদ-বুদ্ধি, বাহুল্য ছেড়ে মানুষ মানবের উৎসবের সামিল হয়ে মানুষের জয়গান গাইবে, সমষ্টির সম্মিলনে ঐক্যের আহ্বান জানাবে, এই আমাদের নাটকের ভাষ্য।”তিনি জানান, নাটকটির নির্মাণ পরিকল্পনায় বর্তমান যাপিত জীবন ব্যবস্থার বাংলার নগরায়তনিক নাট্য-ভাবনা, স্থানীয় নাট্যকলা ঐতিহ্য এবং রবীন্দ্রনাথের নাট্যভাবনা এই তিনের সমন্বয় সাধন করা হয়েছে।
নাট্য লিপির প্রয়োগ ভাবনায় গল্পের অন্তর্গত দ্বন্দ্ব-সম্পর্ক, আশা-আকাঙ্ক্ষা, চরিত্রের গতিপ্রকৃতি নাটকটির সংলাপে বারবার উচ্চারিত হয়েছে।
লিপন বলেন, “ছন্দযোগে শরীরি দৃশ্যায়নের বিষয়টিকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে।”
নাটকের ‘সুদর্শনা’ চরিত্রে কান্তা জামান, ‘সুরঙ্গমা’ চরিত্রে সাদিকা ইয়াসমিন সান্তনা, ‘ঠাকুরদা’ চরিত্রে শরীফ সিরাজ, ‘বিক্রমবাহু’ চরিত্রে আমিনুর রহমান মুকুল, ‘সুবর্ণ’ চরিত্রে রবিন বসাক, ‘বিজয় দত্ত’ চরিত্রে মো. শামীম আহমেদ শান্ত, ‘বসুসেন ও ভদ্র সেন’ চরিত্রে সজীব কুমার ওম, ‘মাধব’ চরিত্রে পি কে ফজল, ‘বিরাজ দত্ত’ চরিত্রে শামীম শেখ, ‘কৌটিল্য’ চরিত্রে রনি দাস, ‘কুম্ভ’ চরিত্রে বাদল হোসেন বাদশা অভিনয় করেন।