একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়া কাদের মোল্লাকে ‘শহীদ’ লেখায় দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকার কার্যালয়ে ভাংচুর চালিয়েছে একদল বিক্ষুব্ধ জনতা।
পরে এই পত্রিকার সম্পাদক আবুল আসাদকে পুলিশ সোপর্দ করেছেন তারা।
মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের ব্যানারে শুক্রবার বিকাল ৫টার দিকে বড় মগবাজার এলাকায় স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতে ইসলামীর মুখপত্র হিসেবে পরিচিত দৈনিক সংগ্রামের কার্যালয় ঘেরাও করেন বিক্ষুব্ধরা।
মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক মো. আল মামুন বলেন, “আমরা স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে আপস করতে পারি না। যে কেউ স্বাধীনতা বা মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে কথা বললে আমরা তা প্রতিহত করবই।”
দৈনিক সংগ্রামের কার্যালয়টি জামায়াত-শিবিরের অস্থায়ী কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
মামুন বলেন, “আমরা সেসব প্রমাণ পুলিশকে দেখিয়েছি। আমরা সম্পাদককে পুলিশের হাতে সোপর্দ করেছি। সম্পাদক তখন জনতার সামনে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছেন।”
আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সংগ্রাম পত্রিকার ‘ডিক্লারেশন’ বাতিলের দাবি জানান তিনি।
মামুন বলেন, “এই সময়ের মধ্যে আমাদের দাবি মানা না হলে আমরা আরও কঠোর কর্মসূচি দেব।”
সংগ্রামের সম্পাদক আবুল আসাদকে হাতিরঝিল থানায় নেওয়া হয়েছে জানিয়ে পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপ- কমিশনার বিপ্লব বিজয় তালুকদার বলেন, “তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।”
শুক্রবার দৈনিক সংগ্রামের প্রথম পাতায় ‘শহীদ আবদুল কাদের মোল্লার ৬ষ্ঠ শাহাদাৎবার্ষিকী আজ’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশ হয়।
এর প্রতিবাদ জানাতে সংগ্রামের কার্যালয়ে আসার আগে দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রতিবাদ সমাবেশের পাশাপাশি সংগ্রাম পত্রিকার কয়েকটি কপি আগুনে পোড়ান ছাত্রলীগের একদল নেতাকর্মী।
সেখানে ছাত্রলীগের সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক রানা হামিদ বলেন, “স্বীকৃত রাজাকার, যুদ্ধাপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত কাউকে যখন স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পরেও শহীদ হিসেবে উল্লেখ করা হয় তখন আমরা বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত। এই বিষবাষ্প যাতে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে প্রভাবিত করতে না পারে তাই এখনি সময় এদের রুখে দেওয়া।
“ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধের মাধ্যমে রুখে দিতেই আমাদের আজকের এই প্রোগ্রাম। এই ঘৃণ্য কর্মকাণ্ডের জন্য আমরা এই পত্রিকার সম্পাদকের শাস্তি দাবি করছি। একইসাথে এই পত্রিকা বাজেয়াপ্ত করার দাবি করছি।”
ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নামিজ উদ্দীন, সাবেক পরিবেশ সম্পাদক ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী সজীব, সাবেক উপ-আন্তর্জাতিক সম্পাদক ইমদাদ হোসেন সোহাগসহ কয়েকজন ছাত্রলীগের নেতাকর্মী ওই কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন।
একাত্তরে যুদ্ধাপরাধের দায়ে ২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর ফাঁসি কার্যকর করা হয় ‘মিরপুরের কসাই’খ্যাত কাদের মোল্লার।
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতায় এসে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া শুরু করলে জামায়াতের সাবেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কাদের মোল্লাকে নিয়ে আসা হয় বিচারের কাঠগড়ায়।
তার বিরুদ্ধে আনা ছয়টি অভিযোগের মধ্যে তিনটিতে সংশ্লিষ্টতা এবং দুটিতে প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রমাণিত হলেও তাকে দেওয়া হয় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড।
ওই রায় প্রত্যাখ্যান করে রাজধানীর শাহবাগে তাৎক্ষণিকভাবে ছাত্র-জনতার যে বিক্ষোভের সূচনা হয়, যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ সাজার দাবিতে আন্দোলনের রূপ নিয়ে তা ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে।
এই দাবির মুখে সরকার আন্তর্জাতিক অপরাধ আইনে সংশোধন আনতে বাধ্য হয়। সংশোধিত আইনে কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ড চেয়ে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। খালাস চেয়ে কাদের মোল্লাও আপিল আবেদন জমা দেন।
পরে নানা বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ডের চূড়ান্ত রায় হয়।