টানা চার দিন অনশনে থাকার পর কর্মসূচি স্থগিত করেছেন খুলনার রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল শ্রমিকরা। স্থানীয় সংসদ সদস্য ও শ্রম প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ানের আশ্বাসে শুক্রবার মধ্যরাতে কর্মসূচি স্থগিত করে শ্রমিকরা ঘরে ফিরে যান। শনিবার সকাল থেকে পাটকলগুলোতে ফের উৎপাদন শুরু হয়।
শ্রমিকরা জানান, প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী রোববার সকাল ১১টায় আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় মজুরি কমিশনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত না এলে মঙ্গলবার থেকে তারা ফের অনশনে যাবেন। এ জন্য কর্মসূচি স্থগিত করা হলেও পাটকলগুলোর সামনে অনশন মঞ্চ ও প্যান্ডেল সরানো হয়নি।
শুক্রবার রাতে খুলনার বিভাগীয় শ্রম অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে পাটকলগুলোর শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান।
বৈঠক প্রতিমন্ত্রী জানান, মজুরি কমিশন বাস্তবায়নে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় রোববার সকাল ১১টায় আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা এবং বিকেল ৩টায় বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনের (বিজেএমসি) সভাকক্ষে শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভায় তিনি উপস্থিত থাকবেন এবং মজুরি কমিশন বাস্তবায়নের বিষয়ে পদক্ষেপ নেবেন। প্রয়োজনে বিষয়টি নিয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও ব্যক্তিগতভাবে কথা বলবেন। দাবি-দাওয়া পূরণ করতে একটি সুশৃঙ্খল ও শান্তিপূর্ণ প্রেক্ষাপট তৈরি করা দরকার বলেও মত দেন তিনি।
রাত ১১টায় বৈঠক শেষে শ্রমিক নেতারা পাটকলে ফিরে গিয়ে অনশন স্থগিতের প্রস্তাব দেন। এতে নেতাদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু করেন শ্রমিকরা। ফলে আলোচনা ভেস্তে যাওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়। এরপর সাধারণ শ্রমিকদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠকের পর তারা কর্মসূচি স্থগিত করতে সম্মত হন। রাত সাড়ে ১২টার পর থেকে শ্রমিকরা অনশন ভেঙে ঘরে ফিরতে শুরু করেন।
প্লাটিনাম জুট মিলের সিবিএ সভাপতি শাহানা শারমিন বলেন, শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস, বিজয় দিবস এবং শ্রম প্রতিমন্ত্রীর আশ্বাসে আমরা কর্মসূচি স্থগিত করেছি। রোববার সভায় দাবি বাস্তবায়ন না হলে মঙ্গলবার থেকে আবারও অনশন কর্মসূচি শুরু হবে।
প্লাটিনাম জুট মিলের সিবিএ সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির জানান, অনশন স্থগিত করায় সাধারণ শ্রমিকরা ক্ষুব্ধ। তারা সভার সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন। এ জন্য অনশন মঞ্চ ও প্যান্ডেল বহাল রাখা হয়েছে। দাবি মানা না হলে মঙ্গলবার থেকে একই স্থানে আমরণ অনশন শুরু হবে।
মজুরি কমিশন-২০১৫ বাস্তবায়ন, বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধ, পাট খাতে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দসহ ১১ দফা দাবিতে গত ১০ ডিসেম্বর থেকে আমরণ অনশন কর্মসূচি শুরু করেন খুলনাসহ বিভিন্ন অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলের শ্রমিকরা।
টানা চার দিন কর্মসূচি চলাকালে প্লাটিনাম জুট মিলের শ্রমিক আবদুস সাত্তার মারা যান। অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন আরও ৪০ জন। এতে পুরো শিল্পাঞ্চলে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। কর্মসূচি স্থগিতের পরে স্বস্তি ফিরে এসেছে ওই এলাকার মানুষের মাঝে।
শনিবার সকালে মিল এলাকায় কথা হয় প্লাটিনাম জুট মিলের সুতা বিভাগের শ্রমিক আফজাল মল্লিকের সঙ্গে।তিনি বলেন, মাঝপথে অনশন স্থগিত করায় নেতাদের ওপর সবাই ক্ষুব্ধ। রোববারের সভায় কী হয়, তার জন্য সবাই অপেক্ষা করছেন।
বিজেএমসি খুলনা আঞ্চলিক সমন্বয়কারী বনিজ উদ্দিন মিয়া বলেন, অনশন স্থগিতের পর পরিবেশ ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে আসছে।