গণহত্যার অভিযোগে জাতিসংঘের আদালতে বিচারের মুখোমুখি হওয়ার পর মিয়ানমার কিছুটা নমনীয় হয়েছে বলে মনে করছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন।
রোববার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেন, “তারা আগের থেকে নমনীয় হয়েছে। তারা আমাকে দাওয়াত দিয়েছে যাওয়ার জন্য। দিস আর গুড ইনিশিয়েটিভস।”
অবশ্য এই আমন্ত্রণ আগে থেকেই ছিল জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, “আগের ছিল। আমি বলেছিলাম, আমি যাব যখন রোহিঙ্গারা সবাই পৌঁছে যাবে। তাহলে ওদের ওখানে গিয়ে সাক্ষাৎ করতে পারব। তারা আবার বলেছে যে, আসেন। দেখা যাক কী করা যায়।”
আমন্ত্রণ পেলেও সফরের দিনক্ষণ ঠিক করেননি জানিয়ে মোমেন বলেন, “ফর্মালি বলেনি, ইনফর্মালি বলেছে। আমি চাই, তারা এখানে আসুক। তাদের যে লোকগুলো (রোহিঙ্গা) আছে তাদের সঙ্গে আলাপ করুক, ওদের প্রত্যাশাগুলো বুঝুক। তাহলে হয়ত প্রত্যাবর্তনটা সহজ হতে পারে।”
মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বর্তমানে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়ে আছে। এর মধ্যে সাড়ে সাত লাখই এসেছে ২০১৭ সালের অগাস্টে রাখাইনে সেনাবাহিনীর দমন-পীড়ন শুরু হওয়ার পর।
মিয়ানমার উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে ব্যর্থ হওয়ায় দুই দফা চেষ্টা করেও রোহিঙ্গাদের কাউকে রাখাইনে ফেরত পাঠানো যায়নি।
কিন্তু মিয়ানমার প্রত্যাবাসন শুরু করতে না পারার জন্য বাংলাদেশকে দুষছে। একইসঙ্গে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দিকেও অভিযোগের আঙুল তুল আসছে তারা।
একে ‘মিথ্যাচার’ আখ্যায়িত করে গত মাসে দুই দফা কড়া প্রতিবাদ জানানো হয়েছে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে।
২০১৭ সালের অগাস্টের পর রোহিঙ্গাদের গ্রামে গ্রামে সেনাবাহিনীর অভিযানে যে হত্যা-ধর্ষণ, জ্বালাও-পোড়াও চালানো হয়েছে, তার মধ্য দিয়ে ১৯৮৪ সালের আন্তর্জাতিক গণহত্যা কনভেনশন ভঙ্গ করার অভিযোগ করে সম্প্রতি জাতিসংঘের ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসে (আইসিজে) মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মামলা করে পশ্চিম আফ্রিকার ছোট্ট দেশ গাম্বিয়া।
গত ১০ থেকে ১২ ডিসেম্বর দ্য হেগের পিস প্যাসেলে দুই পক্ষের শুনানি শেষে বিষয়টি আদেশের জন্য অপেক্ষমান রেখেছে আইসিজের বিচারক প্যানেল।
দ্য হেগের আদালতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগের শুনানিকে ‘ইতিবাচক’ হিসেবে বর্ণনা করে পররাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, “এটা এখন বিশ্বজুড়ে প্রতিষ্ঠিত যে সেখানে বড় রকমের ঘটনা ঘটেছে। যেটা ইউএন হাই কমিশনার বলেছেন ক্লাসিক এক্সাম্পল অব ইথনিং ক্লিনজিং।
”সু চি কিন্তু বলেন নাই যে হত্যাযজ্ঞ হয় নাই। তিনি শুধু দোষটা অন্যের উপর দিতে চেয়েছেন। হত্যাযজ্ঞ হয়েছে, সেটা তিনি অস্বীকার করেন নাই।”
ভারতের নাগরিকত্ব আইন সংশোধন নিয়ে এক প্রশ্নে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “ভারত সরকার আমাদের বলেছে, তারা পুশ ইন করছে না। আমরা বলেছি, কোনো অবৈধ লোক যদি ওখানে থাকে, তাহলে আপনারা আমাদের জানান, এখানে আমাদের একটা স্টান্ডার্ড প্রসিডিউর আছে, সে নিয়মে আমরা আপনাদের সহযোগিতা করব।”
আরেক প্রশ্নে তিনি বলেন, “বাংলাদেশের নাগরিক হলে অবশ্যই দেশে আসার অধিকার আছে, অন্যদের দেশের হলে আমরা নিশ্চয় ওদের বিদায় করে দেব।”
গত অগাস্টে ভারতের আসামের চূড়ান্ত নাগরিকপঞ্জি প্রকাশ হলে দেখা যায়, রাজ্যটির বাসিন্দা ১৯ লাখ মানুষের নাম সেখানে স্থান পায়নি। বাদ পড়াদের ‘অবৈধ বাংলাদেশি’ হিসেবে চিহ্নিত করে ভারত থেকে বের করে দেওয়া হবে বলে আলোচনা ছিল ভারতীয় গণমাধ্যমে। এই পরিস্থিতিতে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমে ভারতীয় সীমান্ত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের ঘটনায় শতাধিক মানুষকে আটক করে পুলিশ।
নভেম্বরে ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ঘোষণা দেন, আসামের ওই তালিকা বাতিল করে পুরো ভারতে নতুন করে নাগরিকপঞ্জি হবে।
এরপর দেশটির ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইন সংশোধন করে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে যাওয়া হিন্দু, খ্রিস্টান, শিখ, জৈন, বৌদ্ধ ও পার্সি শরণার্থীদের ভারতীয় নাগরিকত্ব পাওয়ার পথ সুগম করা হয়।
ওই আইনের প্রতিবাদে গত কয়েকদিন ধরে সহিংস বিক্ষোভ চলছে ভারতের বিভিন্ন অংশে। মুসলমানদের ওই সুযোগের বাইরে রাখায় জাতিসংঘও ওই আইনকে বৈষম্যমূলক বলেছে।
বাংলাদেশে অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো হওয়ায় কিছু লোক ভারত থেকে চলে আসছে মন্তব্য করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “এখন বাংলাদেশের অবস্থা খুব ভালো। আমাদের অর্থনৈতিক অবস্থাও ভালো। এখানে যারা আসেন, তারা কাজকর্ম পেয়ে যাচ্ছেন। যারা কি-না অতি দরিদ্র, তারা বিনা পয়সায় খাবার পাচ্ছেন।
“ভারতের সঙ্গে তুলনা করলে আমাদের অর্থনীতি সম্ভাবনাময়। এ কারণে বাংলাদেশে আসছে। আর কিছু ফড়িয়া লোক ওদের বলছে যে, তোমরা বাংলাদেশে গেলে বিনা পয়সায় খেতে পারবা।”
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, নাগরিকত্ব আইন বাংলাদেশকে ‘ক্ষতিগ্রস্ত করবে না’ বলে ভারত সরকার আশ্বস্ত করেছে।