পেশাদার প্রশিক্ষিত সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তুলতে সরকার কাজ করে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রোববার সকালে ন্যাশনাল ডিফেন্স কোর্স ২০১৯ এবং আর্মড ফোর্সেস ওয়ার কোর্স ২০১৯ এর গ্রাজুয়েশন অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন।
জাতির পিতা চমৎকার সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, “তিনি আমাদের প্রতিরক্ষা নীতিমালা দিয়ে গিয়েছিলেন ১৯৭৪ সালে। তারই আলোকে আমরা ফোর্সেস গোল ২০৩০ প্রণয়ন করে এগিয়ে যাচ্ছি। আমাদের সশস্ত্র বাহিনীকে আরও শক্তিশালী করতে, যুগোপযোগী করতে সেটা হচ্ছে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ।
“সেনাবাহিনীর জন্য নতুন আধুনিক অস্ত্র-শস্ত্র জোগাড় থেকে শুরু করে ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করা, আমরা বিভিন্ন জায়গায় সেনানিবাসও গড়ে তুলেছি নতুন কয়েকটি। যেটা দেশের জন্য যখন প্রয়োজন আমরা সে ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন এবং সেই পদক্ষেপ নিচ্ছি। কারণ আমরা চাই একটা পেশাদার প্রশিক্ষিত সশস্ত্র বাহিনী প্রতিষ্ঠা করতে।”
পরিবর্তনশীল বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে যেন বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা চলতে পারেন, তা নিশ্চিত করতে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “শান্তিরক্ষা মিশনে গিয়ে আধুনিক যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে যেন আমাদের সদস্যরা চলতে পারেন, যুদ্ধ সরঞ্জামের সঙ্গে যেন তাদের পরিচিতি থাকে এবং তারা যেন যে কোনো ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে দ্বিধাগ্রস্ত না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রেখেই ট্রেনিং এবং সমরাস্ত্র সম্পর্কে আমরা যথেষ্ট সচেতন এবং যথাযথ সম্ভব আমাদের সীমিত সম্পদ দিয়ে আমরা সেটা জোগাড় করে দিচ্ছি এবং তৈরি করছি।”
প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও দুর্ঘটনায় জনগণের পাশে দাঁড়িয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখায় সশস্ত্র বাহিনীর প্রশংসার পাশাপাশি তাদের ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “এদেশের জনগণের সেবা করা আমাদের সকলেরই দায়িত্ব। কারণ জনগণের অর্থেই আমাদের বেতন-ভাতা, যা কিছু সবই সাধারণ মানুষের অর্থে। কাজেই তাদের জীবনটাকে সুন্দর করা- সেটাই আমাদের লক্ষ্য।”
দেশের উন্নয়নে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে সরকারপ্রধান বলেন, বিশ্বজুড়ে জাতীয় নিরাপত্তা বহুগুণ বৃদ্ধি পাচ্ছে; যুগের সাথে সাথে সবকিছুর একটা পরিবর্তন হচ্ছে। তাছাড়া এখন প্রযুক্তিনির্ভর বিশ্ব এগিয়ে যাচ্ছে।
“আমাদের দেশটাকেও সেভাবে আমরা গড়ে তুলতে চাই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমি সবসময় এটা মনে করি, প্রশিক্ষণ, গবেষণা এবং দেশপ্রেম, মানুষের প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্যবোধ এবং মানুষের প্রতি ভালবাসা প্রতিটি মানুষের মাঝেই এ চিন্তাটা থাকা উচিত। দেশমাতৃকার জন্য যেকোনো ত্যাগ স্বীকারেই আপনারা সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা এখানে এসেছেন।”
প্রশিক্ষণ কোর্সে অংশগ্রহণকারীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “যারা অন্য দেশ থেকে এসেছেন, তারা পরবর্তীতে নিজ নিজ দেশের কর্মক্ষেত্রে ফিরে যাবেন। আমি আপনাদেরকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাই।
“আপনারাই হবেন আমাদের গুডউইল অ্যাম্বাসেডর। কারণ, আপনারা একটি বছর এখানে থেকে বাংলাদেশকে চিনেছেন, জেনেছেন, সকলের সঙ্গে মিশেছেন এবং আপনারা দেখেছেন যে, বাংলাদেশের মানুষ সাধারণভাবে খুব আন্তরিক এবং বন্ধুসুলভ। কাজেই, আপনারা আমাদের শুভবার্তা নিয়ে যাবেন নিজ দেশে।”
তিনি বলেন, “আপনাদের অভিজ্ঞতা দেশ ও দেশের মানুষের কাজে লাগাবেন। সেটাই আমি কামনা করি এবং প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মকর্তাগণ ‘সিকিউরিটি থ্রু নলেজ’ অর্থাৎ ‘জ্ঞানেই নিরাপত্তা’- ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজের এই মূলমন্ত্রে অনুপ্রাণিত হয়ে দেশকে স্থিতিশীল, টেকসই উন্নয়ন, আত্মনির্ভরশীলতা এবং সর্বোপরি গৌরবময় অবস্থানের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন।”
সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের উদ্দেশ্য করে সরকারপ্রধান বলেন, “সবসময় একটা কথাই মনে রাখবেন- অনেক রক্ত দিয়ে এই স্বাধীনতা অর্জন। কোনোক্রমেই আমরা একে ব্যর্থ হতে দিতে পারি না।”
ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজের কমান্ড্যান্ট লেফটেন্যান্ট জেনারেল শেখ মামুন খালেদ অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণ দেন।
প্রায় ৮৫ জন সশস্ত্র বাহিনী, জনপ্রশাসন এবং বিদেশী সামরিক কর্মকর্তা ‘এনডিসি কোস-২০১৯’ এ এবং সশস্ত্র বাহিনীর ৩৮ জন কর্মকর্তা ‘এএফডব্লিউসি কোর্স-২০১৯’ অংশ নেন।
তাদের মধ্যে চীন, মিশর, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, সৌদি আরব, কুয়েত, মালয়েশিয়া, নেপাল, নাইজেরিয়া, ওমান, পাকিস্তান, শ্রীলংকা, তানজানিয়া, যুক্তরাজ্য, মালি ও নাইজারের সামরিক কর্মকর্তারাও রয়েছেন।