ভারতের নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন ও জাতীয় নাগরিক নিবন্ধনের বিরুদ্ধে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের প্রতি সংহতি জানাতে সমাবেশ ডেকেছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সহসভাপতি (ভিপি) নুরুল হক। মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের একাংশের নেতা-কর্মীরা নুরুলের এ কর্মসূচিতে বাধা দেন। এতে নুরুলের সংগঠন সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের ১০ জন আর মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের ৫ জন আহত হয়েছেন বলে দুই পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে৷
আজ মঙ্গলবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এ ঘটনা ঘটে। বাংলাদেশ ‘ভারতীয় আগ্রাসন’ ও তাঁদের ওপর মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের হামলার প্রতিবাদে আগামীকাল বুধবার দুপুরে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ মিছিল করার আহ্বান জানিয়েছেন ভিপি নুরুল আর মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ নুরুলদের ‘দাঁতভাঙা জবাব’ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিকেল চারটার দিকে পূর্বঘোষিত সংহতি সমাবেশ করতে নিজের সংগঠন সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতা-কর্মীদের নিয়ে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে যান ডাকসু ভিপি নুরুল হক৷ তখন মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের একাংশের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল এবং মঞ্চের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপসম্পাদক আল মামুনের নেতৃত্বে মঞ্চের নেতা-কর্মীরা সেখানে যান। এনআরসি ও ক্যাবকে ভারতের ‘অভ্যন্তরীণ বিষয়’ উল্লেখ করে তাঁরা নুরুলকে কর্মসূচি করতে নিষেধ করেন। এ সময় ভিপি নুরুলের সংগঠনের নেতা-কর্মীরা তা মানতে অস্বীকৃতি জানালে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের নেতা-কর্মীরা তাঁদের মারধর ও শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন৷
দুই পক্ষে কিছুক্ষণ হাতাহাতিও হয়। পরে মঞ্চের নেতা-কর্মীরা চলে গেলে নুরুল তাঁর পূর্বঘোষিত কর্মসূচি পালন করেন।জানতে চাইলে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আল মামুন বলেন, এনআরসি ও ক্যাব ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়। নুরুল একজন ছাত্র প্রতিনিধি। তাই এটি নিয়ে কথা বলা বা প্রতিবাদ করার কোনো এখতিয়ার তাঁর নেই। মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের পক্ষ থেকে তাঁরা নুরুলকে তাঁর এখতিয়ারের বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দিতে গিয়েছিলেন উল্লেখ করে আল মামুন বলেন, ‘আমরা নুরুলের ওপর কোনো হামলা করিনি। ডাকসুর ভোটার হিসেবে আমরা যখন নুরুলের কাছে জানতে চাইলাম যে দেশ ও রাষ্ট্রবিরোধী এমন একটি কর্মসূচি করার অধিকার তাঁর আছে কি না, তখন নুরুলের সঙ্গে থাকা নেতা-কর্মীরা আমাদের ওপর হামলা চালান। হামলায় আমাদের পাঁচজন নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন।’
ভিপি নুরুল হক অভিযোগ করেছেন, মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের নেতা-কর্মীরা অকারণে তাঁর নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা চালিয়েছেন। হামলায় নিজের বাঁ হাতের একটি আঙুলে আঘাত পেয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ভারতীয় আগ্রাসনের’ বিরুদ্ধে কথা বলায় তাঁকে এই আঘাত করা হয়েছে।কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া নুরুলের সংগঠন সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের কর্মী আকরাম হুসাইন দাবি করেন, মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের হামলায় তাঁদের অন্তত ১০ জন নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। তাঁর দাবি অনুযায়ী আহত ব্যক্তিদের মধ্যে আছেন পরিষদের প্যানেল থেকে নির্বাচিত ডাকসুর সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেন, পরিষদের কর্মী নাহিদ ইসলাম, সালেহ উদ্দিন সিফাত ও আমিনুল ইসলাম৷ অন্যদের নাম বলতে পারেননি তিনি। আহত আখতার, সিফাত ও আমিনুলকে ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগে ভর্তি করা হয়েছে বলে জানান আকরাম।
আর মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আল মামুনের দাবি অনুযায়ী নুরুলের পক্ষের নেতা-কর্মীদের হামলায় আহত তাঁদের পাঁচ নেতা-কর্মী হলেন মঞ্চের কেন্দ্রীয় সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল, সহসভাপতি নিয়ামুল হাসান চৌধুরী, সদস্য হুমায়ুন আহমেদ, কর্মী জিহাদ বিশ্বাস ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি জসীমউদ্দীন হল শাখার সাধারণ সম্পাদক রিয়াদুল ইসলাম।
মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের নেতা-কর্মীরা রাজু ভাস্কর্য থেকে চলে যাওয়ার পর এক লিখিত বক্তব্যে এনআরসি ও ক্যাব নিয়ে ভারতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীসহ সব শ্রেণি–পেশার মানুষের প্রতি সংহতি জানান ডাকসু ভিপি নুরুল হক। ইংরেজি ভাষায় দেওয়া ওই বক্তব্য নুরুল বলেন, অসাংবিধানিক এনআরসি ও ক্যাবের বিরুদ্ধে আন্দোলন করায় ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে অবস্থিত দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জামিয়া মিল্লিয়া ইসলামিয়া ও আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশ ও জাফরানি গুণ্ডা বাহিনী হামলা চালিয়েছে। গত রোববারের ওই ঘটনায় শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। ভারতের সর্বত্র কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় এই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে। নিজেদের ফ্যাসিস্ট চরিত্রকে আরও সংহত করতে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন সরকার এমন ঘৃণ্য ও মানবতাবিরোধী আইন বাস্তবায়ন করতে চাইছে। শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার নিন্দা জানিয়ে ডাকসু শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি জানাচ্ছে।