ক্যারিয়ারের আগের ৫ টি-টোয়েন্টি ম্যাচে কেবল ৩ উইকেট নিতে পেরেছিলেন মেহেদি হাসান রানা। তরুণ বাঁহাতি পেসার এক ম্যাচেই ছাড়িয়ে গেলেন আগের সব ম্যাচকে। ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ে আটকে দিলেন সিলেট থান্ডারকে। ছোট পুঁজিতেও অবশ্য লড়াই হয়েছে বেশ। তবে শুরুতে লেন্ডল সিমন্স ও পরে নুরুল হাসান সোহানের ব্যাটিং জিতিয়েছে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সকে।
বিপিএলের চট্টগ্রাম পর্বের প্রথম দিনে সিলেটকে ৪ উইকেটে হারিয়েছে চট্টগ্রাম মাহমুদউল্লাহর দল।
জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে বুধবার মেহেদি রানা ৪ উইকেট নেন ২৩ রানে। সিলেট ২০ ওভারে তুলতে পারে ১২৯ রান।
রান তাড়ায় চট্টগ্রামকে দারুণ বেগ দিয়েছেন ক্রিশমার সান্টোকি। তবে শেষ পর্যন্ত চট্টগ্রাম জিতে গেছে ১২ বল বাকি রেখেই।
চার ম্যাচে তিন জয়ে আপাতত পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে উঠে গেল চট্টগ্রাম। চার ম্যাচ খেলে এখনও জয়শূন্য সিলেট।
দিনের প্রথম ম্যাচে এখানে রাজশাহীর ১৮৯ রান পেরিয়ে জিতেছে খুলনা। সেখানেই পরের ম্যাচে ধুঁকেছে দুই দলের ইনিংস।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা সিলেটের ইনিংস গতি পায়নি শুরু থেকেই। ম্যাচের প্রথম ওভারে বাঁহাতি স্পিনার নাসুম আহমেদ মেডেন নেন রনি তালুকদারকে বোলিং করে। চতুর্থ ওভারে মেহেদি রানার বাইরের বল স্টাম্পে টেনে আনেন রনি। বিদায় নেন ৯ বলে ২ রান করে।
তিনে নামা শফিকউল্লাহ দারুণ এক পুল শটে ছক্কা মেরেছিলেন রুবেল হোসেনকে। পরের বলেই এই আফগানকে ফিরিয়ে শোধ নেন রুবেল।
তৃতীয় উইকেটে আন্দ্রে ফ্লেচার ও মোহাম্মদ মিঠুন চেষ্টা করেছেন জুটি গড়তে। ফ্লেচার ২৪ রানে কেসরিক উইলিয়ামসের বলে সহজ ক্যাচ দিয়েও বেঁচে গেছেন মেহেদি রানার ভুলে। তবু বড় হয়নি জুটি। মুক্তার আলির বলে তেঁড়েফুঁড়ে মারতে গিয়ে ফ্লেচার বোল্ড হয়েছেন ৩২ বলে ৩৮ করে।
৩৯ রানের সেই জুটি ভাঙা ধাক্কা সামাল দেওয়ার আগেই সিলেট পায় জোড়া ধাক্কা। ফ্লেচারের বিদায়ের পরের ওভারে মেহেদি রান নেন ডাবল উইকেট মেডেন।
১৭ বলে ১৫ করে মিঠুন আউট হন উড়িয়ে মারতে গিয়ে। আগের তিন ম্যাচে টপ অর্ডারে ব্যাট করা জনসন চার্লস এই ম্যাচে পাঁচে নেমে করতে পেরেছেন ৩।
সেখান থেকে সিলেটকে লড়ার মতো রান এনে দেন মোসাদ্দেক হোসেন। সিলেট অধিনায়ক করেছেন ২২ বলে ৩০। শেষ ওভারে মেহেদি রানার বলে ক্রিশমার সান্টোকির ছক্কায় দলের রান পৌঁছায় ১৩০-এর কাছে।
সান্টোকিকে ফিরিয়েই মেহেদি রানা ধরেছেন চতুর্থ শিকার। রুবেল হোসেন নিয়েছেন ২ উইকেট।
চট্টগ্রামের রান তাড়ার শুরু ছিল স্বাগতিক দর্শকদের গর্জন দিয়ে। ইনিংসের প্রথম বলেই নাজমুল ইসলাম অপুকে ছক্কায় ওড়ান লেন্ডল সিমন্স। পরের ওভারের প্রথম বলে সান্টোকির বল বাউন্ডারিতে পাঠান আভিশকা ফার্নান্দো।
তবে শুরুর ইঙ্গিত মিলিয়ে গেল দ্রুতই। সান্টোকি দ্রুতই ফিরিয়ে দিলেন আভিশকা ও ইমরুল কায়েসকে। ইবাদত হোসেনের গতিময় ডেলিভারিতে লাইন মিস করে বোল্ড মাহমুদউল্লাহ। নাজমুলকে ছক্কা মারার পর খুব বেশি দূর এগোতে পারলেন না চাডউইক ওয়ালটনও।
সিমন্স ছিলেন চট্টগ্রামের ভরসা হয়ে। সুযোগ পেলেই চার-ছক্কায় বাড়িয়েছেন দলের রান। সোহান উইকেটে গিয়ে তাকে দিচ্ছিলেন সঙ্গ। এই জুটি থেমেছে দৃষ্টিকটু ভুল বোঝাবুঝিতে। ৩৭ বলে ৪৪ করে রান আউট হয়ে যান সিমন্স।
সান্টোকি আক্রমণে ফিরে এরপর মুক্তার আলিকে ফিরিয়ে দেন শূন্য রানেই। ম্যাচ তখন হেলে সিলেটের দিকেই। কিন্তু দেলোয়ার হোসেনকে পরপর দুটি বিশাল ছক্কায় আবার চিত্র বদলে দেন সোহান। প্রথম ছক্কাটি ছিল ১০৫ মিটার লম্বা, পরেরটি ১১০ মিটার!
এমনিতে ব্যাটিংয়ের জন্য খুব পরিচিত নাহলেও এ দিন জ্বলে ওঠেন কেসরিক উইলিয়ামসও। দুজনের ২৬ বলে ৪৫ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে শেষ হয়ে যায় ম্যাচ।
আগের ৮১ টি-টোয়েন্টিতে যার সর্বোচ্চ রান ছিল ১৩, সেই উইলিয়ামস ২ ছক্কায় অপরাজিত থাকেন ১৭ বলে ১৮ রান করে। ৩ ছক্কায় ২৪ বলে অপরাজিত ৩৭ সোহান।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
সিলেট থান্ডার: ২০ ওভারে ১২৯/৮ (রনি ২, ফ্লেচার ৩৮, শফিকউল্লাহ ৬, মিঠুন ১৫, চার্লস ৩, মোসাদ্দেক ৩০, নাঈম ১১, দেলোয়ার ৭*, সান্টোকি ৯, নাজমুল অপু ০* ; নাসুম ৪-১-১৭-০, রুবেল ৪-০-২৮-২, মেহেদি রানা ৪-১-২৩-৪, মুক্তার ৪-০-২৬-১, উইলিয়ামস ৪-০-৩১-১)
চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স: ১৮ ওভারে ১৩০/৬ (সিমন্স ৪৪, আভিশকা ৫, ইমরুল ৬, মাহমুদউল্লাহ ২, ওয়ালটন ৯, সোহান ৩৭*, মুক্তার ০, উইলিয়ামস ১৮*; নাজমুল অপু ৪-০-৩৪-০, সান্টোকি ৪-০-১৩-৩, ইবাদত ৪-০-২৮-১, দেলোয়ার ৪-০-৩১-১, নাঈম ২-০-৩১-১)
ফল: চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স ৪ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: মেহেদি হাসান রানা