হাজার হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার পরও সড়ক-মহাসড়ক কেন ভাঙাচোরা তা জানতে চেয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ) আয়োজিত ‘মহাসড়কের লাইফ টাইম : চ্যালেঞ্জ ও করণীয়’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি বলেছেন, বেহাল রাস্তার কারণে এমপিরা জনগণের গালি খান, লজ্জায় মুখ দেখাতে পারেন না। রাস্তা খারাপ হওয়ায় তার নিজেরও নির্বাচনী এলাকায় যেতে লজ্জা লাগে।
এ সময় সওজকে লক্ষ্য করে অর্থমন্ত্রী বলেন, শুধু নতুন নতুন রাস্তা তৈরির প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে, রক্ষণাবেক্ষণে নজর নেই কেন? সড়ক সংস্কারে টাকা দেওয়া হচ্ছে, তারপরও বেহাল দশা কেন? সারাজীবন কি ভালো রাস্তার জন্য অপেক্ষায় থাকতে হবে?
তিনি হতাশা প্রকাশ করে বলেন, সিঙ্গাপুরে রাস্তার আয়ুস্কাল ৫০ বছর, পাহাড়-পর্বতের দেশ শ্রীলংকাতেও তাই। তাহলে বাংলাদেশে কেন রাস্তা টেকসই হবে না?
মুস্তফা কামাল বলেন, অনেক ঠিকাদার এমনভাবে রাস্তা বানায় যে, ভেঙে যাবেই। অনেক দেশি প্রতিষ্ঠান ভালো কাজ করে, কিন্তু তারা কাজ পায় না। আবার যন্ত্রপাতিই নেই, এমন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ পায়। এদের কারণে বিদেশি ভালো প্রতিষ্ঠানও কাজ পায় না।
নিজের অভিজ্ঞতা থেকে মন্ত্রী জানান, ইংল্যান্ডের প্রথম সারির একটি প্রতিষ্ঠানকে এনেছিলেন, কিন্তু তাদের কাজ দেওয়া হয়নি।
তিনি বলেন, ‘কেন কাজ দেওয়া হয়নি, তা কিন্তু জানি’। তবে সেমিনারে তিনি সে কারণটি বলেননি।
বিটুমিন ছেড়ে কংক্রিটের রাস্তা নির্মাণের তাগিদ দেন অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে বারবার তাগিদ দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী মহাসড়ক ব্যবহারে টোল বসানোর তাগিদ দেন অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, প্রতিটি গাড়ির জন্য প্রিপেইড টোলের ব্যবস্থা করতে হবে। নির্দিষ্ট দূরত্ব পার হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে টোল পরিশোধ হবে। এতে যানজট দূর হবে। আবার টোলের টাকাতেই সড়ক সংস্কার করা যাবে। সরকারের পক্ষে প্রতিবছর বিপুল পরিমাণে টাকা দেওয়া সম্ভব হবে না।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, পৃথিবীর সেরা রাস্তা নির্মাণ করে সিঙ্গাপুর। তারা বিদ্যুৎভিত্তিক পরিবহন ব্যবস্থায় চলে গেছে। বিশ্বের অনেক দেশই এটি করছে। বাংলাদেশও জ্বালানি তেলের বদলে বিদ্যুৎ ব্যবহার করলে বছরে দুই বিলিয়ন ডলার সাশ্রয় হবে।
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়-সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি একাব্বর হোসেন বলেন, যারা সড়ক নির্মাণ করে রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব তাদের দেওয়া উচিত।
বৃষ্টির কারণে রাস্তা নষ্ট হয়- সওজের এ দাবি সঠিক নয় বলে মনে করেন নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা)-এর চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন। তিনি বলেন, মালয়েশিয়ায় সারা বছর বৃষ্টি হয়। কিন্তু সেখানকার রাস্তা টেকসই।
সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন সড়ক পরিহন সচিব নজরুল ইসলাম। উপস্থিত ছিলেন সওজের প্রধান প্রকৌশলী ইবনে আলম হাসান, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজিবিষয়ক সাবেক সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ, কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ প্রমুখ। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সওজের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী এ কে মোহাম্মদ ফজলুল করিম।