ইমরুল কায়েস ও আভিশকা ফার্নান্দো গড়ে দিলেন ভিত। সাজানো মঞ্চে তাণ্ডব চালালেন চাডউইক ওয়ালটন ও নুরুল হাসান সোহান। রানের পাহাড় গড়লো চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স। শুরুতে কুমিল্লা ওয়ারিয়র্সকে দিকহারা করে দিলেন মেহেদি রানা। পরে ফিরে ভাঙলেন বিপজ্জনক হয়ে ওঠা জুটি। জাদুকরী বোলিংয়ে গড়ে দিলেন ব্যবধান।
চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে শুক্রবারের দ্বিতীয় ম্যাচে ১৬ রানে জিতেছে চট্টগ্রাম। ২৩৮ রান তাড়ায় দাভিদ মালানের ফিফটিতে ৭ উইকেটে ২২২ রান করে কুমিল্লা।
ওয়ালটন ও ইমরুলের ফিফটিতে ৪ উইকেটে ২৩৮ রান করে চট্টগ্রাম। বিপিএলের ইতিহাসে এর চেয়ে বড় রান আছে কেবল একটি। আগের আসরে চিটাগং ভাইকিংসের বিপক্ষে রংপুর রাইডার্সের ২৩৯।
টানা দুই ম্যাচে আসরে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড ভাঙল চট্টগ্রাম। আগের ম্যাচে তারা ঢাকা প্লাটুনের বিপক্ষে করেছিল ২২১ রান।
মেহেদি রানার শেষ ওভারটি ছিল খরুচে। সেই ওভারে ২২ রান দেওয়ার পরও ২৮ রান দিয়ে ৪ উইকেট নিয়ে তিনিই দলের সেরা বোলার।
টস হেরে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই লেন্ডল সিমন্সকে হারায় চট্টগ্রাম। মুজিব উর রহমানের বল জায়গায় দাঁড়িয়ে কাট করতে গিয়ে বোল্ড হয়ে যান ক্যারিবিয়ান ওপেনার।
আভিশকা ফার্নান্দোর সঙ্গে দারুণ জুটিতে দলকে এগিয়ে নেন ইমরুল। শুরু থেকেই শট খেলেন দুই ব্যাটসম্যান। দ্রুত জমে যায় তাদের জুটি। ১০ ওভারে তিন অঙ্ক স্পর্শ করে চট্টগ্রামের সংগ্রহ।
আরও একবার ভালো শুরুটা বড় করতে ব্যর্থ ফার্নান্দো। একাদশ ওভারে বোলিংয়ে এসে ‘গোল্ডেন আর্ম’ সৌম্য সরকার ভাঙেন ৪৯ বল স্থায়ী ৮৫ রানের জুটি। ফিরিয়ে দেন ২৭ বলে তিনটি করে ছক্কা ও চারে ৪৮ রান করা ফার্নান্দোকে।
৩৫ বলে ৮ চারে পঞ্চাশ ছোঁয়ার পর বেশিদূর যেতে পারেননি ইমরুল। দাসুন শানাকাকে সুইপ করে ছক্কা হাঁকানোর চেষ্টায় ধরা পড়েন বাঁহাতি এই টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান। মাহমুদউল্লাহর অনুপস্থিতিতে দলকে নেতৃত্ব দেওয়া ইমরুল ৪১ বলে ৯ চার ও এক ছক্কায় ফিরেন ৬২ রান করে।
বিপিএলটা বাজে কাটানো নাসির হোসেন আবারও ব্যর্থ। সৌম্যকে আপার কাট করে ধরা পড়েন থার্ড ম্যানে। দ্রুত তিন উইকেট হারিয়ে একটু কমে চট্টগ্রামের রান রেট। তবে শেষটায় ঝড় তুলে দলকে দুইশ রানে নিয়ে যান ওয়ালটন ও নুরুল।
শানাকার করা ১৮তম ওভারের প্রথম দুই বলে চার ও ছক্কা হাঁকান ওয়ালটন। পরে কুমিল্লা অধিনায়ককে ছক্কায় ওড়ান সোহান।
সৌম্যর ওপর দিয়ে যেন ঝড়ে বয়ে যায় পরের ওভারে। প্রথম বলে বাউন্ডারি হাঁকান সোহান। শেষ চার বলে তিন ছক্কা ও একটি চার তুলে নেন ওয়ালটন। ওভার থেকে আসে ২৯ রান। চলতি আসরের সবচেয়ে খরুচে ওভার এটিই।
আবু হায়দারের করা শেষ ওভার থেকে আসে ২৫ রান। শেষ ২ ওভারে আসে ৫৪, শেষ ৫ ওভারে ৯২। বাজে বোলিংয়ের সঙ্গে বাজে ফিল্ডিংয়ের দায়ও এতে কম নয়।
২৭ বলে ছয় ছক্কা ও পাঁচ চারে ৭১ রানে অপরাজিত থাকেন ওয়ালটন। সোহানের সঙ্গে ৩৪ বল স্থায়ী ৯৯ রানের জুটিতে ক্যারিবিয়ান ব্যাটসম্যানের অবদান ১৯ বলে ৬০! সোহান ১৫ বলে করেন ২৯ রান।
বড় রান তাড়ায় মেহেদি রানার ছোবলে শুরুতেই এলোমেলো হয়ে যায় কুমিল্লা। তৃতীয় ওভারে আক্রমণে এসেই তরুণ বাঁহাতি পেসার বিদায় করেন দুই ওপেনার সৌম্য ও ভানুকা রাজাপাকসেকে। পরের ওভারে মেহেদি রানা এলবিডব্লিউ করে বিদায় করেন সাব্বির রহমানকে।
নড়বড়ে ইয়াসির আলীকে ফেরানোর সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যায় নাসুম আহমেদের ব্যর্থতায়। নাসির হোসেনের বলে ছাড়েন সহজ ক্যাচ। জীবন কাজে লাগাতে পারেননি ইয়াসির। রুবেল হোসেনের বলে ফিরেন কট বিহাইন্ড হয়ে।
ততক্ষণে ডানা মেলেছেন মালান। ক্রিজে গিয়েই বোলারদের ওপর চড়াও হন শানাকা। দ্রুত জমে যায় তাদের জুটি। প্রথম ২ ওভারে ১ রান দিয়ে ৩ উইকেট নেওয়া মেহেদি রানা পঞ্চদশ ওভারে ফিরে ভাঙেন বিপজ্জনক হয়ে ওঠা জুটি।
বিদায় করে দেন মালানকে। ইংলিশ মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান ৩৮ বলে পাঁচ ছক্কা ও সাত চারে ফিরেন ৮৪ রান করে। তার বিদায়ে ভাঙে ৬২ রানের জুটি।
মুক্তার আলীকে পরপর দুই ছক্কা হাঁকিয়ে ঝড়ের আভাস দিয়েছিলেন শানাকা। পরের বলেই ফিরে যান বোল্ড হয়ে। শেষের দিকে আবু হায়দারের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে ম্যাচে থাকে কুমিল্লা।
নিজেদের শেষ ওভারে ২৫ রান দিয়েছিলেন আবু হায়দার। জয়ের জন্য সেই রানই ছিল তাদের লক্ষ্য। নাসুমের ওভারে ৮ রানের বেশি নিতে পারেনি কুমিল্লা।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স: ২০ ওভারে ২৩৮/৪ (সিমন্স ১০, ফার্নান্দো ৪৮, ইমরুল ৬২, ওয়ালটন ৭১*, নাসির ৩, সোহান ২৯*; মুজিব ৪-০-৩১-১, আল আমিন ২-০-২৭-০, সুমন ৩-০-২৫-০, আবু হায়দার ২-০-৩৮-০, মালান ২-০-২৫-০, সৌম্য ৩-০-৪৪-২, শানাকা ৪-০-৪৭-১)
কুমিল্লা ওয়ারিয়র্স: ২০ ওভারে ২২২/৭ (রাজাপাকসে ৬, সৌম্য ১৫, সাব্বির ৫, মালান ৮৪, ইয়াসির ২১, শানাকা ৩৭, মাহিদুল ১৩, সুমন ৮*, আবু হায়দার ২৮*; নাসুম ৩-০-৪০-০, রুবেল ৪-০-৩০-১, মেহেদি রানা ৪-১-২৮-৪, উইলিয়ামস ৪-০-৫১-১, মুক্তার ৪-০-৫৫-১, নাসির ১-০-১৬-০)
ফল: চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স ১৬ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: চাডউইক ওয়ালটন