ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাচন হবে আগামী ৩০ জানুয়ারি। রোববার এ দুই সিটিতে ভোটের তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সে অনুযায়ী আগ্রহী প্রার্থীদের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে মনোনয়নপত্র জমা দিতে হবে। ৩০ জানুয়ারি ভোট গ্রহণ হবে সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। দুটি নির্বাচনেই সবক’টি কেন্দ্রে ইভিএম (ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন) ব্যবহার করা হবে।
ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা রোববার বলেছেন, নির্বাচন কমিশন পুরোপুরি নিরপেক্ষতা বজায় রাখবে। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের মিডিয়া সেন্টারে প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা বলেন। অন্য চার কমিশনার মাহবুব তালুকদার, রফিকুল ইসলাম, কবিতা খানম, শাহাদাৎ হোসেন চৌধুরী ও ইসি কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর এ সময় উপস্থিত ছিলেন। এর আগে দুপুর আড়াইটায় সিইসির সভাপতিত্বে কমিশন সভায় তফসিলের চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়।
সিইসি জানিয়েছেন, ৫৪ লাখেরও বেশি ভোটারের এই দুই সিটি নির্বাচনে প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে ইভিএম মেশিনের কারিগরি সহায়তা দিতে দু’জন করে সেনা সদস্য উপস্থিত থাকবেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব তাদের ওপর থাকবে না। নির্বাচনের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষায় রাষ্ট্রের নিয়মিত বাহিনীর সদস্য পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও আনসার বাহিনীসহ অন্য সদস্যদের মোতায়েন করা হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি জানিয়েছেন, বর্তমান মেয়রদের মধ্যে কেউ নির্বাচনে আবারও প্রার্থী হতে চাইলে তাকে পদত্যাগ করতে হবে। মেয়র পদে দলীয় প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হলেও সাধারণ ওয়ার্ড ও নারীদের জন্য সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থীদের নিজস্ব প্রতীকে নির্বাচন করতে হবে।
তফসিল অনুযায়ী মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ৩১ ডিসেম্বর, মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই ২ জানুয়ারি। রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ৫ জানুয়ারির মধ্যে আপিল করা যাবে ঢাকার বিভাগীয় কমিশনারের কাছে। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সুযোগ রাখা হয়েছে ৯ জানুয়ারি পর্যন্ত। ১০ জানুয়ারি প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ করা হবে। এর পরই আনুষ্ঠানিক প্রচারে নামতে পারবেন প্রার্থীরা। এর আগে সব ধরনের প্রচার নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের মধ্যে পড়বে বলে ইসি সংশ্নিষ্টরা জানিয়েছেন।
এর আগে ২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ঢাকা উত্তর সিটিতে মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন আনিসুল হক এবং দক্ষিণ সিটিতে সাঈদ খোকন। আনিসুল হকের মৃত্যুর পর ঢাকা উত্তর সিটিতে মেয়র পদে উপনির্বাচনে বিজয়ী হন আতিকুল ইসলাম। চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি ওই উপনির্বাচনের সঙ্গে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটির বর্ধিত (১৮+১৮) ৩৬টি ওয়ার্ডেও কাউন্সিলর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
এবারের নির্বাচনে ঢাকা উত্তর সিটিতে রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করবেন যুগ্ম সচিব আবুল কাশেম এবং দক্ষিণ সিটিতে যুগ্ম সচিব আব্দুল বাতেন। পাশাপাশি উত্তর সিটির ১৮টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে এবং দক্ষিণ সিটির ২৫টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে একজন করে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে।
ঢাকা উত্তর সিটিতে ভোটার সংখ্যা ৩০ লাখ ৩৫ হাজার ৬২১ জন হলেও সাধারণ ওয়ার্ডের সংখ্যা ৫৪টি এবং সংরক্ষিত ওয়ার্ড ১৮টি। অন্যদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ভোটার সংখ্যা ২৩ লাখ ৬৭ হাজার ৪৮৮ জন হলেও সাধারণ ওয়ার্ডের সংখ্যা ৭৫টি এবং সংরক্ষিত ওয়ার্ড ২৫টি।
সিইসি জানান, সিটি করপোরেশন আইন অনুযায়ী করপোরেশন গঠনের পর প্রথম সভার দিন থেকে পাঁচ বছর মেয়াদ পূরণের আগের ১৮০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে হয়। সে হিসাবে ঢাকা উত্তর সিটিতে ভোট হয়েছিল ২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল এবং প্রথম সভার মাধ্যমে নির্বাচিতদের কার্যক্রম শুরু হয় ওই বছরের ১৪ মে। একই দিনে ঢাকা দক্ষিণ সিটির ভোট হলেও তাদের যাত্রা শুরু হয় ওই বছরের ১৭ মে। তাই চলতি বছরের ১৪ নভেম্বরের পরে ঢাকা উত্তর সিটি এবং ১৮ নভেম্বরের পরে ঢাকা দক্ষিণ সিটি নির্বাচনের উপযোগী হয়েছে। বর্তমান মেয়ররা পদত্যাগ করে নির্বাচনে অংশ নিলেও এই চলমান করপোরেশন বহাল থাকবে। নবনির্বাচিতদের দায়িত্ব গ্রহণের জন্য ২০২০ সালের ১৩ মে পর্যন্ত উত্তর সিটিতে এবং ১৬ মে পর্যন্ত দক্ষিণ সিটিতে অপেক্ষমাণ থাকতে হবে।
সাম্প্রতিক নির্বাচনগুলোতে ভোটারশূন্য ভোটকেন্দ্র সম্পর্কে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে সিইসি নূরুল হুদা ভোটারদের নির্ভয়ে ভোটকেন্দ্রে আসার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, নিরপেক্ষভাবে নির্বাচন হবে। ভোটাররা ভোট দিয়ে নিরাপদে বাড়ি ফিরবেন, সেই নিরাপত্তা কমিশন নিশ্চিত করবে।
এদিকে চলতি বছর উপনির্বাচনে বিজয়ী দুই সিটির বর্ধিত এলাকার ওয়ার্ড কাউন্সিলররা পুরো পাঁচ বছরের মেয়াদ পূরণের দাবি তুলেছেন। তারা ইতোমধ্যে নির্বাচন বন্ধে আইনের আশ্রয় নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে সংশ্নিষ্টরা জানিয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে আইনি জটিলতা নির্বাচনে কোনো প্রভাব ফেলবে কিনা- এ প্রশ্নে সিইসি বলেন, করপোরেশনের আইনে মেয়াদ সম্পর্কে বলা রয়েছে। সে অনুযায়ী স্থানীয় সরকার বিভাগের অনুরোধে কমিশন তফসিল ঘোষণা করেছে। তাই আইনি জটিলতা হবে না বলেই তিনি মনে করেন।