শুভ বড়দিন উদযাপিত

santa-close-5e037e18c4856

ধর্মীয় অনুষ্ঠানমালার মধ্য দিয়ে বুধবার শুভ বড়দিন উদযাপিত হয়েছে। যিশু খ্রিষ্টের জন্মতিথিতে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীরা ধর্মীয় আচার, আনন্দ-উৎসব ও প্রার্থনার আয়োজন করে। এসব আয়োজন ঘিরে দেশজুড়ে আনন্দ ও উৎসবমুখর পরিবেশের সূচনা হয়েছিল।

রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ শুভ বড়দিন উপলক্ষে বঙ্গভবনে খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন- পিআইডি

এদিন ছিল সরকারি ছুটি। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বড়দিন উপলক্ষে বঙ্গভবনে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। এ সময় বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক ও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারাও শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। এ অনুষ্ঠানে বড়দিনের কেকও কাটেন রাষ্ট্রপতি।

বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতারসহ বেসরকারি স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেল ও রেডিওগুলো বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার করেছে। সংবাদপত্রগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র ও নিবন্ধ প্রকাশ করে।
উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে বুধবার সিলেটে উদযাপিত হয় খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শুভ বড়দিন

বড়দিন ঘিরে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের ঘরে ঘরে ব্যাপক উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়ে। বর্ণাঢ্য সাজসজ্জার পাশাপাশি অনেকের বাড়িতেই বসানো হয় প্রতীকী গোশালা। বেথলেহেমের গরিব কাঠুরের গোয়ালঘরে যিশু খ্রিষ্টের জন্মের কথা স্মরণ করেই বাড়িতে ধর্মীয় আবহ সৃষ্টি করতে এই গোশালা বসিয়েছিলেন তারা। ঐতিহ্যবাহী ও জাঁকজমকপূর্ণ এই সাজসজ্জায় রঙিন কাগজ, ফুল ও আলোর বিন্দু দিয়ে ক্রিসমাস ট্রি সাজানো হয় দৃষ্টিনন্দনভাবে। ঘরে ঘরে বড়দিনের কেক তৈরি করা হয়। ছিল বিশেষ খাবারের আয়োজনও। অনেকেই আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে বেড়াতে যান। খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের পাশাপাশি অন্য ধর্মাবলম্বী মানুষরাও উৎসবে যোগ দেওয়ায় বড়দিন সর্বজনীন, অসাম্প্রদায়িক উৎসবে পরিণত হয়।

দেশের সব গির্জা ও অভিজাত হোটেলগুলো সাজানো হয় রঙিন বাতি আর ফুল দিয়ে। গির্জাগুলোতে বিশেষ প্রার্থনার পাশাপাশি সন্ধ্যায় আলোকসজ্জা ছিল দিনের অন্যতম আকর্ষণ। রাজধানীর তেজগাঁও ক্যাথলিক গির্জা হোলি রোজারিও চার্চে (পবিত্র জপমালা রানীর গির্জা) সকালে তিন দফা বড়দিনের বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হয়। গির্জার মূল ফটকের বাইরে মেলা বসে।

রাজধানীর কাকরাইলের সেন্ট মেরিস ক্যাথেড্রালে সকালে বড়দিনের প্রার্থনায় অংশ নেন খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী হাজারো নারী-পুরুষ-শিশু। সেখানেও বর্ণিল সাজসজ্জা ছিল। এ ছাড়া রাজধানীর মণিপুরিপাড়া, বারিধারাসহ অন্যান্য গির্জা ও ধর্মীয় উপাসনালয়েও চলেছে প্রার্থনা।

রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেল, র‌্যাডিসন, লা মেরিডিয়েন, ওয়েস্টিন, হোটেল ওয়েসিস, ঢাকা রিজেন্সি হোটেলসহ দেশের বড় বড় হোটেলে সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এসব হোটেলে সাজানো হয় ক্রিসমাস ট্রি। প্রধান আকর্ষণ ছিল সান্তা ক্লজের চমকপ্রদ উপস্থাপনা ও শিশু-কিশোরদের মধ্যে নানা উপহার প্রদান। সান্তা ক্লজকে ঘিরে নানা আনন্দে মেতে ওঠে শিশু-কিশোররা। তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন বড়রাও। হোটেলের কর্মচারীরা সান্তা ক্লজ সেজে বাচ্চাদের আনন্দ দিয়ে নিজেরাও আনন্দ উপভোগ করেন। ছোটদের জন্য ছিল আনন্দদায়ক নানা খেলাধুলা ও বিভিন্ন ধরনের খাবারের আয়োজন। তারা মেতে ওঠে গান-বাজনা, ফ্যাশন শো, বালিশ খেলা, কানামাছিসহ নানা ধরনের খেলায়।

মঙ্গলবার রাত ১১টায় কয়েকটি গির্জা ও উপাসনালয়ে প্রার্থনার মধ্য দিয়ে শুরু হয় বড়দিনের উদযাপন। সেখানে মঙ্গলবাণী পাঠের মাধ্যমে নিজের পরিশুদ্ধি ও জগতের সব মানুষের জন্য মঙ্গল কামনা করা হয়।

অন্যদিকে বড়দিনের উৎসব ঘিরে দেশের সব গির্জার পাশাপাশি উৎসব অনুষ্ঠানস্থলে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়। মোতায়েন করা হয় পুলিশ, র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সদস্যদের। ঢাকাজুড়ে তল্লাশি ও চেকপোস্টে কার্যক্রমও চালানো হয়। বিভিন্ন সংস্থার গোয়েন্দারাও তৎপর ছিলেন। ঢাকা মহানগরে ৬৫টি গির্জা ও আশপাশ এলাকা সিসিটিভির আওতায় নেওয়া হয়।

রাজশাহী ব্যুরো জানায়, বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা ও যথাযোগ্য ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে রাজশাহীতে পালিত হয়েছে শুভ বড়দিন। এ উপলক্ষে গির্জাগুলোতে আলোকসজ্জাসহ সাজানো হয়েছিল দারুণ সব সাজে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় প্রাক-প্রার্থনার মাধ্যমে উৎসবের সূচনা হয়। গভীর রাত পর্যন্ত চলে প্রার্থনা। বুধবার সকালে আবারও প্রার্থনার মাধ্যমে দিনের সূচনা হয়। এবারের বড়দিনে শিশু ও অভিবাসীদের জন্য বিশেষ প্রার্থনা করা হয়।

উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে বুধবার  রাজশাহীতে উদযাপিত হয় খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শুভ বড়দিন

ময়মনসিংহ ব্যুরো জানায়, ময়মনসিংহে বুধবার সকাল ৯টা থেকে ১১টা পর্যন্ত নগরীর ভাটিকাশরস্থ ক্যাথেড্রাল গির্জা হাউসে বিশেষ প্রার্থনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। প্রার্থনা পরিচালনা করেন বৃহত্তর ময়মনসিংহের ধর্মগুরু বিশপ পল পনেন কুবি। এ ছাড়াও শহরের ব্যাপ্টিস্ট চার্চ, সাধু প্যাট্রিক চার্চ ও তেইজি ব্রাদার্স গির্জায় একই ধরনের আচার-অনুষ্ঠান পালন করা হয়েছে। বিকেলে কেক কাটার মাধ্যমে যিশুর জন্মদিন উদযাপন করা হয়। পরে আয়োজন করা হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের।

শহরের গির্জাগুলোর পাশাপাশি হালুয়াঘাট ও ধোবাউড়া উপজেলার বিভিন্ন গির্জাতে প্রার্থনায় অংশ নেন আদিবাসী গারো সম্প্রদায়ের খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বীরা।

Pin It