আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের বক্তব্যকে সমর্থন করে ভারতের বিতর্কিত ‘নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন ও এনআরসির কার্যক্রমকে আগাম বৈধতা দিয়েছেন বলে অভিযোগ বিএনপির।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ অভিযোগ করেন।
ফখরুল অভিযোগ করেন, ‘ওবায়দুল কাদের অমিত শাহের বক্তব্যকে সমর্থন করে যে মন্তব্য করেছেন তা সম্পূর্ণরূপেই আওয়ামী লীগের ঘৃণ্য প্রতিহিংসার রাজনীতির ধারাবাহিকতামাত্র, যা ভারতের বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন ও এনআরসির কার্যক্রমকে আগাম বৈধতা দেয়। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাই। আমরা আশা করি, ভবিষ্যতে আওয়ামী লীগের পক্ষে দেশের স্বার্থবিরোধী যে কোনো বক্তব্য প্রদান থেকে তিনি সর্ম্পূণরূপে বিরত থাকবেন।’
তিনি বলেন, ‘ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সম্প্রতি ‘দিল্লির রামলীলা ময়দানে’ জনসভায় নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন ও জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) ইস্যুতে ভারতের জনগণের ক্ষোভ ও উৎকন্ঠা দূরীভূত করতে নমনীয় মনোভাব প্রকাশ করছেন। ঠিক এরকম পরস্থিতিতে বর্তমান অবৈধ সরকারের শীর্ষস্থানীয় মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ‘বাংলাদেশ ও বিএনপি’ সর্ম্পকে অমিত শাহের পার্লামেন্টে দেওয়া মিথ্যা, উদ্দেশ্যমূলক, ভিত্তিহীন ও ধর্মীয় বিভক্তি সৃষ্টিকারী বক্তব্যের পক্ষে অত্যন্ত নির্লজ্জভাবে অবস্থান গ্রহণ করেছেন।’
‘গত ২৩ ডিসেম্বর ওবায়দুল কাদের এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, অখণ্ডতা, শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য সুস্পষ্ট হুমকিস্বরূপ রাখা অমিত শাহের বক্তব্যের পক্ষে অবস্থান নিতে গিয়ে সমগ্র জাতিকে স্তম্ভিত ও ক্ষুব্ধ করেছেন।’
মির্জা ফখরুল বলেন, অমিত শাহর সাম্প্রতিক বক্তব্য প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের নিজ দেশের আপামর জনগণের উদ্দেশে বলেছেন, ‘ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যেটা বলেছেন বাংলাদেশের বাস্তবতায় এটা কি অসত্য? আমরা দ্ব্যর্থহীন এবং অত্যন্ত সুস্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, ওবায়দুল কাদের, ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রাবীশ কুমার আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ, বিএনপি এবং খালেদা জিয়ার সরকার সম্পর্কে যে বক্তব্য রেখেছেন তা মিথ্যা, ভিত্তিহীন, বৈষম্যমূলক, ধর্মীয় বিভক্তি সৃষ্টিকারী এবং তা দু’দেশের (আওয়ামী লীগ ও বিজেপি) অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে সংকীর্ণ সুবিধা লাভের ঘৃণ্য কৌশলমাত্র।’
ওবায়দুল কাদেরকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘আপনি এবং আপনার অবৈধ সরকার অমিত শাহের বক্তব্যের পক্ষে সাফাই গাইতে গিয়ে সুস্পষ্টভাবে এদেশের মানুষের স্বার্থবিরোধী অবস্থান গ্রহণ করেছেন।’
বিএনপি মহাসচিব অভিযোগ করেন, ‘ওবায়দুল কাদেরের সাম্প্রতিক বক্তব্য সর্ম্পূণরূপে ভারত-তোষণনীতির এক ঘৃণ্য আখ্যানমাত্র। এর মাধ্যমে তিনি সুস্পষ্টভাবে বিএনপির ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে দেশপ্রেম বিবর্জিত প্রতিহিংসার রাজনীতি চরিতার্থ করার অপচেষ্টা চালিয়েছেন। অতএব, ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্য কোনো বিচারেই বাংলাদেশের মানুষ গ্রহণ বা সমর্থন করতে পারে না।’
নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন প্রসঙ্গে ফখরুল বলেন, বাংলাদেশকে টার্গেট করেই এই আইন করা হয়েছে। কারণ, ইতোমধ্যেই বাংলাদেশ সন্নিহিত ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামের ১৯ লাখ নাগরিককে এনআরসির মাধ্যমে নাগরিকহীন ঘোষণা করা হয়েছে। বিজিপি নেতৃত্বাধীন ভারত সরকারের পরবর্তী টার্গেট বাংলাদেশের বৃহত্তম সীমান্তবর্তী রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ। তাই একথা অত্যন্ত সুস্পষ্টভাবে বলা যায়, ভারতের ‘নাগরিক সংশোধনী আইন ও এনআরসির মাধ্যমে অবধারিত ক্ষতিগ্রস্ত দেশ হচ্ছে বাংলাদেশ।’
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, ইকবাল হাসার মাহমুদ টুকু, বেগম সেলিমা রহমান, রুহুল কবির রিজভী, খায়রুল কবির খোকন, আবদুস সালাম আজাদ, মুনির হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।